প্রহসনের নির্বাচনের অভিযোগে বিএনপির করা মামলায় গ্রেফতারের পর সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তার রিমান্ড শুনানিতে পক্ষে-বিপক্ষে দীর্ঘ সময় বাদানুবাদ হয়। এক পর্যায়ে বিচারক সাবেক সিইসির বক্তব্য শুনতে চান। সেখানে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। তার দাবি, বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য কমিশনকে দায়ী করা যায় না। দায়িত্ব পালনের সময় তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন কি না- বিচারকের এমন প্রশ্নে ‘না’ সূচক জবাব দেন সাবেক এই আমলা।
সোমবার (২৩ জুন) বেলা ৩টার দিকে সাবেক সিইসিকে আদালতে আনা হয়। প্রথমে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
বিজ্ঞাপন
শুনানির আগে বেলা ৪টা ৮ মিনিটে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। সেখানে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য ১১টি কারণ উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিজমে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। পরবর্তী সময়ে জনগণের হাতে কট।
বিজ্ঞাপন
আইনজীবী বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার, বাঁচার অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করেন। জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে উনাকে ফুলের মালা দিয়েছে। এরা সেদিন মানুষ ও জনতার পক্ষে থাকলে হাসিনা এত বড় ফ্যাসিস্ট হতো না। তার আমলে ২০১৮ সালে সবাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারা জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেন। নির্বাচনের সময় কমিশন ডিসি ইউএনওদের অর্ডার দিয়ে রাতে ভোট দিয়েছেন। দিনের ভোট রাতে করার জন্য টাকা দিয়েছেন, বিরিয়ানি দিয়েছেন। অথচ তিনি বলেছেন, জনগণ ভোট দিয়েছে। কত বড় নির্লজ্জ হলে এমন কথা বলা যায়। এখনো তারা হাসে। আমার মনে হয় অন্য কেউ হলে নিজ থেকে নিজেই মরে যেতো। আমরা তাকে চিনি নিশি রাতের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে। আমি জানি না, তিনি কীভাবে পরিবারের সামনে মুখ দেখান।
আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব নুরুল হুদার রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এখানে রিমান্ড শুনানিতে আইনের কথা বলা হয়নি বরং আশেপাশের কথা বলা হয়েছে, আমরা সেগুলোতে যাবো না। আসামির বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে সকল ধারাই জামিনযোগ্য। প্রসিকিউশন বেছে বেছে জামিনযোগ্য ধারায় তার রিমান্ড চেয়েছেন, এটা আইনের সাথে সাংঘর্ষিক।
প্রসিকিউশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, জামিনযোগ্য ধারায় রিমান্ড চাইতে পারবেন এমন আইন দেখান। এসময় উপস্থিত আইনজীবীরা চিৎকার শুরু করলে এজলাসে হট্টগোল হয়।
আসামিপক্ষের এই আইনজীবী শুনানিতে আরও বলেন, যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে তা আমাদের বিরুদ্ধে যায় না। এ মামলা আইনগতভাবে চলেই না। এটা ত্রুটিপূর্ণ এজাহার।
আসামি পক্ষের আরেক আইনজীবী বলেন, নুরুল হুদা মহান মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরে মেজর জলিলের নেতৃত্বে সাব কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে পটুয়াখালী জেলা হানাদার মুক্ত হয়েছে।
এরপর নুরুল হুদার কোন বক্তব্য আছে কি না জানতে চান বিচারক। এসময় বিচারক তাকে জিজ্ঞেস করেন- আপনি শপথ ভঙ্গ করেছেন মনে করেন কি না। উত্তরে তিনি ‘না’ বলেন।
এসময় সাবেক এই সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনে ৫টা লোক এবং তাদের সহযোগিতা করার জন্য ১৬ লাখ লোকের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করা। কোথায় কেমন নির্বাচন হচ্ছে ঢাকায় বসে এটা দেখার সুযোগ নেই।
এরপর বিচারক আবারও তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি তো শপথ নিয়েছেন নির্বাচন ফেয়ার করার। তখন নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে গেলে ফলাফল ঘোষণা হলে পরবর্তী কমপ্লিট জুরিসডিকশন হাইকোর্টের ওপর। হাইকোর্ট অনিয়ম পেলে পানিশমেন্ট দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন সেটা বন্ধ করতে পারে না।’
সাবেক সিইসি বলেন, ‘এছাড়া পিপি বললেন নির্বাচনে টাকা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর সুযোগ নেই। নির্বাচন যেটা বিতর্কিত হয়েছে সেটার জন্য কমিশনকে দায়ী করা যায় না।’
প্রায় আধা ঘণ্টা পক্ষ-বিপক্ষের শুনানি শেষে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এআইএম/জেবি

