জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৪ মার্চ ২০২৪, ০১:১১ পিএম
রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ নিয়েছেন হাইকোর্ট।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে ঢাকার দুই সিটির প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক, বুয়েটের একজন প্রতিনিধি ও রাজউকের প্রতিনিধির সমন্বয়ে এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর সামনে দৃশ্যমান করে নোটিশ ঝুলে রাখতে ফায়ার সার্ভিসকে নির্দেশ দেন আদালত।
সোমবার (৪ মার্চ) এ বিষয়ে করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ সময় আদালত ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। এছাড়া রুফটপ রেস্টুরেন্টগুলো পরিচালনা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ও আইনজীবী ইসরাত জাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত জানান, আইনে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ আছে। সেগুলো যথাযথভাবে নেওয়া হচ্ছে না। এই নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক রিট হয়। আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছেন। রুলে আইন অনুসারে পদক্ষেপ না নেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন। এছাড়া অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত একটি কমিটি করে দিয়েছেন। সেই কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, ঢাকার দুই সিটির প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক, বুয়েটের একজন প্রতিনিধি ও রাজউকের প্রতিনিধি থাকবে। কমিটি চার মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে হাইকোর্টে দাখিল করতে হবে। অগ্নিপ্রতিরোধে স্থাপনাগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ভবিষ্যতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অমিত দাশগুপ্ত আরও জানান, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত নোটিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট বলেছেন, অধিকাংশ সময় দেখা যায় এ নোটিশগুলো পকেটে রেখে দেওয়া হয়। নোটিশগুলো যেন দৃশ্যমান হয় , ভবনের সম্মুখভাবে যেন টানানো থাকে, নোটিশ পড়ে যেন বুঝা যায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন মারা যান। ১১ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভবন থেকে ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাতে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। মামলায় তিনজন ব্যক্তি ও একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়।
গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে গতকাল রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইসরাত জাহান সান্ত্বনা। রিটে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। একইসঙ্গে রিটে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আর আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ রাজধানীর বেইলি রোডসহ সকল আবাসিক স্থাপনায় রেস্টুরেন্ট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত দায়ীদের গ্রেফতার এবং হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। এছাড়া বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।
একইদিন আসক, ব্লাস্ট ও বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত তানজিনা নওরিনের পরিবারের এক সদস্য পৃথক আরেকটি রিট করেন।
এআইএম/এমআর