আমিনুল ইসলাম মল্লিক
১৫ মে ২০২৫, ০৭:৪৯ পিএম
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে এর আঁচ লাগে সবখানেই। ব্যতিক্রম নয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিও। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে একটি এডহক কমিটির মাধ্যমে আইনজীবী সমিতির কার্যক্রম চলছে। সেখানে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবী। ইতোমধ্যে দেশের অন্যান্য আইনজীবী সমিতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হলেও সুপ্রিম কোর্ট বারে নির্বাচনের নামগন্ধ নেই। এখানে ভোট হতে বাধা কোথায়, ভোট নিয়ে কেন গড়িমসি- এসব প্রশ্ন উঠছে আইনজীবীদের মধ্যে। এ ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকা মেইলের। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সিনিয়র রিপোর্টার আমিনুল ইসলাম মল্লিক।
ঢাকা মেইল: টানা ১৭ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করলেন, ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের পর সরকার বদলে গেলে দায়িত্ব নিল অন্তর্বর্তী সরকার। এমন বাস্তবতায় দেশের অন্যান্য বারে ভোট হলেও সুপ্রিম কোর্ট বারে দেরি হচ্ছে কেন?
গাজী কামরুল ইসলাম সজল: ভোট অবশ্যই দরকার। আমরা ভোট এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রের জন্যই আমরা গত ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি। আপনি এই অঙ্গনের লোক। আপনি জানেন, গত ৪/৫ বছর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা ভোট দিতে পারেননি। এক রকম জবরদস্তি করেই তারা বার নিয়ন্ত্রণ করেছে। গত ৫ আগস্ট উনাদের (আওয়ামী লীগ) নেত্রী হেলিকপ্টারে পালিয়ে যাওয়ার পরে উনাদের আর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন অবস্থায় বার তো একটা অভিভাবক ছাড়া থাকতে পারে না। এজন্য বারের সদস্যদের একটা বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এডহক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি দিয়ে বার চলছে।
যারা সেই সময়ে (৫ আগস্টের আগে) বিএনপি সমর্থিতরা উনাদের (আওয়ামী)’র সাথে নির্বাচন করেছিলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, স্বভাবতই বিএনপি সমর্থিতরা ভোটে জিততেন। নির্বাচন হলে বিএনপি সমর্থিতরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতেন। আমরা সেটাই মনে করি। আইনজীবীরাও সেটাই মনে করে। সুতরাং বারের স্বার্থে, আইনজীবীদের স্বার্থে আমরা একটি এডহক কমিটি করেছি। হ্যাঁ, সত্যিই এডহক কমিটির মেয়াদ এত লম্বা হতে পারে না। আমরা ভোটের জন্য একটা সমাধান বের করার চেষ্টা করছি। আপনারা দেখতে পারবেন, খুব শিগগিরই সুপ্রিম কোর্ট বারে নির্বাচনি আমেজ ফিরবে।
ঢাকা মেইল: সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট আয়োজনের জন্য বিশেষ সাধারণ সভা বা এজিএমের প্রয়োজন পড়ে কি না?
গাজী কামরুল ইসলাম সজল: অবশ্যই আছে। যেহেতু এডহক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, এজিএম বা ইজিএম যাই হোক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে বারের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। দেখতে পারবেন।
ঢাকা মেইল: দেশের কোথাও কোথাও আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী সমর্থিতরা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, এ কারণে ভোটে আপনাদের অনীহা আছে কি না?
গাজী কামরুল ইসলাম সজল: আমাদের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে কোনো ভয় নেই। নির্বাচন হবে, যদি সাধারণ ভোটাররা মনে করে ভোট যাকে খুশি দেবেন। ইতোমধ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ (আওয়ামী লীগ) দলটি কোন প্যানেলে নির্বাচন করবে সেটা তাদের ব্যাপার। সাধারণ ভোটাররা যদি তাদের ভোট দেয় তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি নেই এই কারণে যে, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে ভোট। সুতরাং আমাদের ভোট নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। সাধারণ আইনজীবীরা যাকে বেছে নেবে তাকেই ভোট দিতে পারবে।
ঢাকা মেইল: আপনাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো ভোট চান না, এমন বক্তব্য কি সঠিক?
গাজী কামরুল ইসলাম সজল: এটা একটা চরম ডাহা মিথ্যা কথা। এ ধরনের বক্তব্য উনি কখনোই দেননি। কখনো দেবেন বলে উনি বিশ্বাস করেন না। উনি আমাদের গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করছেন। এমনও আছে যে, আমাদের ইউনিয়ন কমিটি, এমনকি ওয়ার্ড কমিটিও নির্বাচনের মাধ্যমে হচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হচ্ছে। সুতরাং আমার মনে হয় উনি গণতন্ত্রের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। উনি সব সময় চান বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য ফিরে আসুক।
সমস্ত বারে তো ভোট হচ্ছে। হচ্ছে না, একটা বার দেখান যেখানে ভোট বন্ধ আছে। সব জায়গায় ভোট হচ্ছে। আপনার প্রশ্নের মধ্যেই আপনার উত্তর আছে। কিছু কিছু বারে ফ্যাসিস্টের দোসররা বিজয়ী হয়েছে। সুতরাং এমন প্রশ্ন অবান্তর যে, আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগে বারের ভোট চাই না।
এআইএম/জেবি