আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১২ জুন ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম
ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে ২৪২ যাত্রীসহ লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রার কিছু সময় পরই বিধ্বস্ত হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান। এই বিমানে ২৩২ জন যাত্রী, ১০ জন কেবিন ক্রু এবং ২ জন পাইলট ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে গুজরাটের আহমেদাবাদে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং আবাসিক এলাকার কাছে বিধ্বস্ত হয়। এরপরই আগুন ধরে যায় পুরো উড়োজাহাজে। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে ঘন কালো ধোঁয়া।
টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন বিমান বিধ্বস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সহায়তা করতে এয়ার ইন্ডিয়া বিশেষ দল পাঠাচ্ছে। বিমানে যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও।
এই দুর্ঘটনার সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিত নয় এবং কতজন হতাহত হয়েছেন কিংবা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।
এ দুর্ঘটনা ভারতের ইতিহাসে ভয়াবহ সব বিমান দুর্ঘটনার স্মৃতি আবারও সামনে এনেছে। পাঠকদের জন্য দেশটির কিছু উল্লেখযোগ্য বিমান দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরা হলো—
১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর হরিয়ানার চরখি দাদরি শহরের আকাশে সৌদি এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৪৭ এবং কাজাখস্তান এয়ারলাইন্সের ইলিউশিন-৭৬ বিমানের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে দুটি বিমানে থাকা মোট ৩৪৯ জনের সবাই মারা যান। এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী মাঝ আকাশে সংঘর্ষ এবং ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

২০১০ সালের ২২ মে দুবাই থেকে ম্যাঙ্গালুরুগামী এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট ৮১২ রানওয়ে অতিক্রম করে পাশে খাদে পড়ে যায়। ম্যাঙ্গালুরু বিমানবন্দর একটি টেবিলের মতো উঁচু স্থানে অবস্থিত হওয়ায় দুর্ঘটনাটি ভয়াবহ রূপ নেয়। ১৬৬ জনের মধ্যে ১৫৮ জন নিহত হন।
১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি মুম্বাই থেকে ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ৮৫৫ আরব সাগরে বিধ্বস্ত হয়। ইনস্ট্রুমেন্ট ত্রুটি ও পাইলট বিভ্রান্তির কারণে ২১৩ জনের সবাই মারা যান। এরপর থেকেই পাইলট প্রশিক্ষণ এবং ককপিট সরঞ্জামের মান উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০২০ সালের ৭ আগস্ট দুবাই থেকে ফেরা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট আইএক্স-১৩৪৪ কোঝিকোড বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৃষ্টির কারণে রানওয়ে ছাড়িয়ে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যায়। বিমানে থাকা ১৯০ জনের মধ্যে ২১ জন নিহত হন এবং শতাধিক আহত হন।
১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৬০৫ বেঙ্গালুরুর রানওয়ে অতিক্রম করে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় ১৪৬ জনের মধ্যে ৯২ জন প্রাণ হারান। পাইলটের ভুলকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এ৩২০ বিমানের ককপিট ডিজাইন ও প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
২১ জুন, ১৯৮২ সালে মুম্বাইয়ে অবতরণের সময় এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ৪০৩ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে ১১১ জন থাকলেও ১৭ জন নিহত হন। এই দুর্ঘটনা খারাপ আবহাওয়ায় অবতরণের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়।
১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই অ্যালায়েন্স এয়ার ফ্লাইট ৭৪১২ পাটনার কাছাকাছি একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। ‘গো-অ্যারাউন্ড’ চলাকালীন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানটি নিচে পড়ে যায়। ৫৫ জন যাত্রী এবং মাটিতে থাকা ৫ জন মারা যান।
১৯৮৮ সালের ১৯ অক্টোবর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট আইসি-১১৩ আহমেদাবাদে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৩০ জন নিহত হন, যা শহরটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা।
১৯৮৫ সালে ২৩ জুন এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ কানাডা থেকে ভারতে আসার পথে আয়ারল্যান্ড উপকূলে মাঝ আকাশে বিস্ফোরিত হয়। সন্ত্রাসী হামলার কারণে ঘটে যাওয়া এই বিস্ফোরণে বিমানে থাকা ৩২৯ জনের সবাই মারা যান। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী উড়োজাহাজ সন্ত্রাস হামলা হিসেবে রয়ে গেছে।
বেসামরিক বিমান ছাড়াও ভারত বহু সামরিক বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে, বিশেষ করে মিগ-২১ এর ক্ষেত্রে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন অথবা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বহু পাইলটের মৃত্যু হয়েছে। এইসব দুর্ঘটনা প্রতিরক্ষা বিমান পরিচালনায় আধুনিকীকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ইস্যুতে প্রশ্ন তোলে।
সূত্র: ইকোনমিক টাইমস
এমএইচটি