নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৪১ পিএম
একদিকে ঘনঘন লোডশেডিং অন্যদিকে কাগজ সংকট; এর সঙ্গে নতুন শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত না হওয়া, যথাসময়ে মুদ্রাকরদের কার্যাদেশ না দেওয়াসহ নানা জটিলতায় আগামী শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে পাঠ্যবই পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বিগত বছরগুলোতে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে যেখানে ছাপা শেষে ৯-১০ কোটি বই উপজেলায় পৌঁছে যেত সেখানে এবার পুরোপুরি ছাপার কাজও শুরু হয়নি। যার ফলে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন খোদ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্মকর্তা ও প্রেস মালিকরা।
এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৩ কোটির বেশি বই ছাপানো হবে। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সাড়ে নয় কোটি আর মাধ্যমিক পর্যায়ে সাড়ে ২৩ কোটির বেশি রয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের অষ্টম ও নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ছাপা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই দুই শ্রেণির শিক্ষাক্রমই চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষাক্রম চূড়ান্তকরণ, পরিমার্জন বা সম্পাদনা ও পাণ্ডুলিপি প্রণয়নে আরও এক মাস লেগে যেতে পারে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ছাপার কর্যাদেশ দেওয়া হবে দরদাতাদের।
আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষাক্রমে নানা চ্যালেঞ্জ
এদিকে আটকে গেছে প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তক ছাপাও। কারণ গত বছর পাঠ্যবই ছাপার কাজ করা মুদ্রাকররা এখন পর্যন্ত জামানত বা পিজির (পারফরম্যান্স গ্যারান্টি) পাঁচ শতাংশ টাকা ফেরত পাননি। এই অর্থ ছাড় না হওয়া এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) ‘ক্লিয়ারেন্স লেটার’ না পাওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছেন না মুদ্রাকররা। এজন্য কার্যাদেশ পেয়েও প্রতিষ্ঠানগুলো বই ছাপছে না।
আরও পড়ুন: সরকারি স্বীকৃতি পেয়ে কতটা লাভবান কওমি শিক্ষার্থীরা?
গত বছর মোট ৯৮টি লটে প্রাথমিক স্তরের প্রায় দশ কোটি কপি বই ছাপা হয়। পিজির অর্থ ছাড়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মুদ্রাকররা দীর্ঘদিন ধরেই ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে’ (এনসিটিবি) তদবির করছেন। পিজি ফেরত না পাওয়ায় মুদ্রাকররা কাজ পেয়েও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপা শুরু করছেন না। এতে চাপে রয়েছে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘পিজি ছাড়ের জটিলতা কাটাতে আমরা চেষ্টা করছি। এই সংকট সমাধানে ডিপিইর সঙ্গে কাজ চলছে। আশা করছি খুব শিগগির সংকটের অবসান ঘটবে।’
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দু’দিন ছুটি: লাভ না ক্ষতি?
এদিকে দেশের বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় অঞ্চলভেদে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও এখন প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। এতে বিঘ্ন ঘটছে বই ছাপার কাজ। প্রেস মালিকরা জানিয়েছেন, লোডশেডিং না কমালে বা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পেলে যথাসময়ে বই দেওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুটি প্রেসের মালিক ঢাকা মেইলকে বলেন, গত সপ্তাহে তারা বই ছাপা শুরু করেছেন। কিন্তু প্রতিদিনই চার-পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং (বিদ্যুৎ বিভ্রাট) হচ্ছে। জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় জেনারেটর চালিয়েও খুব একটা ব্যাক-আপ দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ এতে ছাপার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান ঢাকা মেইলকে বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে ছাপার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মিলগুলো কাগজ উৎপাদন করতে পারছে না। বিশ্বব্যাপী সংকটের কারণে ‘ভার্জিন পাল্প’ আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে ভালোমানের কাগজ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।
এসএএস/জেবি