শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সরকারি স্বীকৃতি পেয়ে কতটা লাভবান কওমি শিক্ষার্থীরা?

সেলিম আহমেদ
প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২২, ১০:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

সরকারি স্বীকৃতি পেয়ে কতটা লাভবান কওমি শিক্ষার্থীরা?

কওমি শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের (স্নাতকোত্তর ডিগ্রি) সমমর্যাদা দিয়েছে সরকার। ২০১৭ সালে সরকারের দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি সাহিত্য- এই দুই বিষয়ের মাস্টার্সের মর্যাদা পাবে দাওরায়ে হাদিস। কিন্তু এই স্বীকৃতি কওমি শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র কিংবা বাস্তবজীবনে কতটা কাজে আসছে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে স্বীকৃতির প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর।

কওমি আলেমদের অনেকেই বলছেন, কর্মক্ষেত্রে দাওরায়ে হাদিসের সনদ কতটা কার্যকরী তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। এই সনদ অধিকারীরা সরকারিভাবে ঠিক কী কী চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন, এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না খোদ কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ অথরিটি হাইয়াতুল উলয়ার দায়িত্বশীলেরাও।

এছাড়া দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হলেও এর নিচের অন্য পাঁচটি স্তরকে সমমানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। যদিও সংশ্লিষ্টরা কেউ কেউ বলছেন, কওমি শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে এটাই বড় পাওয়া। সনদ দিয়ে সরকারি চাকরি কিংবা সুবিধার পেছনে দৌড়ানোর উদ্দেশ্য আমাদের নেই। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, যুগোপযোগী সিলেবাস না হলে মাস্টার্স সমমান পেলেও কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে না। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে হয়তো চাকরির সুযোগ থাকবে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা সুবিধা করতে পারবে না। তাদের কোনো না কোনোভাবে আধুনিকায়ন করতে হবে এবং মূলধারার কাছাকাছি আসতে হবে।

এ প্রসঙ্গে হাইয়াতুল উলয়ার কেন্দ্রীয় সদস্য, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব ও জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুরের মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দাওয়ারে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতির বড় একটা কার্যকারিতা হলো সামাজিকভাবে কওমি মাদরাসার শিক্ষা যে একটা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থা তা প্রতিষ্ঠিত হওয়া। পাশাপাশি আমরা আশা করছি এই স্বীকৃতির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।’


বিজ্ঞাপন


কর্মক্ষেত্রে দাওরায়ে হাদিসের সনদ মান নিয়ে ধোঁয়াশা

সরকারের স্বীকৃতি পাওয়ায় দাওরায়ে হাদিসের সার্টিফিকেট নিয়ে আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়েছে কওমি শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের। তবে কর্মক্ষেত্রে এই সার্টিফিকেট কতটা কার্যকরী তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা থেকে গেছে। এই সার্টিফিকেটের অধিকারীরা সরকারিভাবে ঠিক কী কী চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন, এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না খোদ হাইয়াতুল উলয়ার দায়িত্বশীলেরাও।

qawmi2
গণভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে কওমি স্বীকৃতি ঘোষণা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে চালু হওয়া নতুন ধারার মাদরাসা দারুল আরকাম মাদরাসা ও মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম, কাজি নিয়োগ, বিভিন্ন সরকারি মসজিদে ইমাম নিয়োগ ছাড়া আর কোনো কাজে আসেনি এই সনদ। সরকারি কোনো চাকরিতে এই সনদ কাজে আসবে কি না এটা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। সনদ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশও যেতে পারছেন না তারা।

আরও পড়ুন: করোনাকালে শিক্ষার্থী কমেছে স্কুলে, বেড়েছে মাদরাসায়

একাধিক কওমি শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সনদ নিয়ে সরকারি কোনো চাকরিতে অংশগ্রহণ করতে পারব কি না কিংবা বাস্তবজীবনে কোন কোন কাজে আসবে তা আজও পরিষ্কার হয়নি। সরকারি-বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া যেত-তা করা হয়নি। আমরা সনদের স্বীকৃতির যথাযথ বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই।

সেই সঙ্গে দারুল উলুম দেওবন্দ, নদওয়া, দারুল উলুম করাচি, মদিনা ও আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহির্বিশ্বে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান কওমি শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কওমি শিক্ষক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কওমি সনদের স্বীকৃতি ছিল একটি আইওয়াশ মাত্র। এই স্বীকৃতির যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারের কোনো ধরনের সদিচ্ছা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এখনও শিক্ষা জরিপে কওমি শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে জরিপ প্রকাশ করা হয়। এটি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য লজ্জার। এছাড়াও সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ুয়া একজন বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার জন্য খুব অনায়াসে যেতে পারে। আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও পৃথিবীর নানাপ্রান্তে পড়ছে। পক্ষান্তরে দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান দেওয়া হলেও আরবি সাহিত্য কিংবা ইসলামিক স্টাডিজ নিয়েও বিদেশে পড়তে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।’

কর্মক্ষেত্রে দাওরায়ে হাদিসের স্বীকৃতি কতটা কাজে আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা মাহফুজুল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের এই লেখাপড়া কিন্তু আসলে কর্মের জন্য নয়। আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লেখাপড়া করে থাকি। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ হচ্ছে।’

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কওমির সিলেবাস কি আপগ্রেড করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই আলেম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল  বিষয় হলো কোরআন এবং হাদিস। কোরআন-হাদিসের জ্ঞান সুগভীরভাবে নিশ্চিত করে সময়ের প্রয়োজনে যেসব বিষয় সংশ্লিষ্ট করা তা করা হচ্ছে।’

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার শিক্ষা সচিব মুফতি মকবুল হুসাইন কাসেমী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সনদের স্বীকৃতি পাওয়ার পর শুধু সামাজিকভাবে একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে ঠিক। আগে সনদের স্বীকৃতি না থাকার কারণে অনেকে কওমি মাদরাসায় পড়তে নিরুৎসাহিত হতো। কওমি শিক্ষার ভিত্তি নেই, এই কথা বলার এখন কোনো সুযোগ নেই। এর বাইরে কোনো লাভ হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।’

এই স্বীকৃতির ফলে কওমি শিক্ষার্থীদের আমল-আখলাকে আরও অবনতি হয়েছে বলে মনে করেন এই আলেম। তিনি বলেন, ‘এখন জেনারেল শিক্ষার্থীদের মতো কওমি শিক্ষার্থীরা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠছে। স্বীকৃতির পর খুব কমসংখ্যক মাদরাসা আগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পেরেছে।’

qawmi3
স্বীকৃতি ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ‘শুকরানা মাহফিল’। ছবি: সংগৃহীত

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কওমি সিলেবাস আপগ্রেড করার প্রয়োজন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলা-ইংরেজিসহ জেনারেল শিক্ষার বিষয়গুলো কওমি সিলেবাসে প্রবেশ করনো দরকার। সরকারিভাবে নয়, আমাদের কওমি শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে সিলেবাসকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন এখন সময়ের দাবি। আমরা তা করব।’

মিরপুরের মাদরাসা দারুর রাশাদের শিক্ষা সচিব মাওলানা লিয়াকত আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সনদের স্বীকৃতি পাওয়ার পর সরকারি মসজিদ, ইসলামি ফাউন্ডেশন ও কাজী নিয়োগে অংশগ্রহণ করতে পারছেন। এছাড়া সনদের আর কোনো কার্যকারিতা আমি দেখছি না। এছাড়াও স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক, আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষকদের কাজে লাগানো গেলে এর উপকারিতা বাড়বে। আল-হাইয়াতুল উলয়া এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এসব দাবি আদায় করতে পারে।’

দাওরার স্বীকৃতি মিললেও মিলেনি নিম্ন স্তরের স্বীকৃতি

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কওমি মাদরাসা মূলত ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ মাদরাসার আলোকে প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা। এখানে কোরআন-হাদিসের মূলধারার শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। কওমি শিক্ষায় ছয়টি স্তরের মধ্যে দাওরায়ে হাদিস সর্বোচ্চ স্তর। এই স্তরকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হলেও অন্য পাঁচটি স্তরকে এখনও সমমানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

কওমি শিক্ষায় স্তরগুলো হলো- ইবতেদাইয়্যাহ (প্রাথমিক), মুতাওয়াসসিতাহ (নিম্নমাধ্যমিক), সানাবিয়্যাহ আম্মাহ (মাধ্যমিক), সানাবিয়্যাহ খাসসাহ (উচ্চ মাধ্যমিক), মারহালাতুল ফজিলত (স্নাতক), মারহালাতুত তাকমিল বা দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমান)।

আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি চট্টগ্রামের মুহাদ্দিস অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘পাকিস্তান ও ভারতে দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। সেটাকে রেফারেন্স ধরে আমাদেরও সমমান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা যেটা হলো-আমাদের দেশে চাকরির বাজারে চারটি স্তর রয়েছে। সেগুলো-পিএসসি, এসএসসি, বিএ ও মাস্টার্স। এখানে আমাদের শুধু মাস্টার্সের মান দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোকে সমমানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এখন একটি ঘরে চাকরি পিলারের মধ্যে যদি তিনটি পিলারই না থাকে তাহলে ঘরকে দাঁড় করানো সম্ভব নয়। ফলে সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রির সনদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে আসছে না। শুধু স্বীকৃতিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। মানসিক সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছু না।’

এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘এই সরকারই দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দিয়েছে। তাই হাইয়াতুল উলয়ার নেতাদের প্রতি পরামর্শ, তারা যেন বাকি স্তরগুলোর সমমানের স্বীকৃতির সরকারকে বুঝিয়ে নিয়ে নেন। তাহলে কওমি শিক্ষার্থীরাও ইসলামের খেদমতের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি চাকরি ক্ষেত্রেও সুযোগ পাবে। তবে এখানে একটা সমস্যা হলো-এসব স্তরে স্বীকৃতি পেতে হলে শিক্ষার্থীদের বাংলা-ইংরেজি, গণিতসহ জেনারেল বিষয়ে দক্ষতা থাকতে হবে। তাই কওমি মাদরাসার মূল সিলেবাসকে বহাল রেখে বেসিক বিষয়গুলো যোগ করা প্রয়োজন।’

qawmi3
দেশের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা। ছবি: সংগৃহীত

২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উল্লেখযোগ্য আলেমদের উপস্থিতিতে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঘোষণা দেন। ১৩ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ (সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, শাখা-১) থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই গেজেটে বলা হয়—স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিগুলোকে ভিত্তি ধরে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান করা হলো।

ওই বছরই ছয়টি কওমি বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া  শুরু করেন কওমি মাদরাসার তাকমিল হাদিসের শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড গওহরডাঙ্গার চেয়ারম্যান, বর্তমান জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি রুহুল আমীন কওমি আলেমদের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেন।

সূত্র জানায়, কওমি মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতির প্রথম দাবি তোলা হয় ১৯৯৭ সালের দিকে। বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এই দাবি তোলে। পরে দেশের অন্যান্য বোর্ডগুলোও দাবি জানায় সব বোর্ডকে একত্রে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করার পর আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে দাবি তোলা হলেও এ বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি খালেদা জিয়ার সরকার। পরে ২০০৬ সালে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে অনশন কর্মসূচি পালন করেন তৎকালীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক। শায়খুল হাদিসের দাবিসহ দেশের আলেমদের প্রাণের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ওই বছরের আগস্টের শেষ দিকে গণভবনে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের উপস্থিতিতে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা করেন। যদিও তা ওই সময় গেজেট হয়নি বলে প্রক্রিয়াটি থেমে যায়।

আরও পড়ুন: নতুন খতিব কে এই মুফতি রুহুল আমীন

২০১২ সালে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, মুফতি রুহুল আমীনসহ বিভিন্ন আলেমরা সভা-সেমিনারের মধ্যদিয়ে আবারও দাওরায়ে হাদিসের সরকারি স্বীকৃতির দাবি তোলেন। পরবর্তী সময়ে দফায়-দফায় মিটিং, কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশন ইত্যাদি গঠনের পরও বেফাক একমত না হওয়ায় তা বিলম্বিত হয়। অবশেষে ২০১৭ সালে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে আলেমদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসএএস/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর