নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০৮ পিএম
- নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.২৯ শতাংশ
- মাঝারি, চিকন ও মোটা চালের দাম কমেছে
- ব্যাংকিং ও বৈদেশিক খাতে ইতিবাচক অগ্রগতি
- গরুর মাংস, ইলিশ ও পাঙ্গাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে
- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে
চালের দামে কিছুটা স্বস্তি এলেও প্রোটিনজাত খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নভেম্বর মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি আবারও ঊর্ধ্বমুখী। নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।
একই সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যদিও অখাদ্যে মূল্যস্ফীতি প্রায় অপরিবর্তিত থেকে ৯ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত ডিসেম্বর মাসের ইকোনমিক আপডেটে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসে সব ধরনের চালের দাম কিছুটা কমেছে। মাঝারি, চিকন ও মোটা চাল— সব শ্রেণিতেই মূল্যস্ফীতির হার অক্টোবরের তুলনায় কমেছে। তবে চালের দাম কমলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে এর প্রভাব এখনো বড় রয়ে গেছে।
নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪০ দশমিক ২৮ শতাংশ। যদিও এটি আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কম। একই সঙ্গে মাছ ও শুঁটকি মাছের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে এ খাতের অবদান আরও বেড়েছে। মাছ ও মাংসসহ বিভিন্ন প্রোটিনজাত খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা নভেম্বরে আরও স্পষ্ট হয়েছে।
গরুর মাংস, ইলিশ ও পাঙ্গাস মাছের দামে আগের মাসের তুলনায় বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে। এর ফলে চালের দামে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও সার্বিক খাদ্য ব্যয়ের চাপ কমেনি। অন্যদিকে, সবজি মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক অবদান রাখায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপ আংশিকভাবে কমেছে। যদিও আগের মাসের তুলনায় এ প্রভাব কিছুটা দুর্বল।
আরও পড়ুন: ধুলোয় কাহিল রাজধানীবাসী!
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ও মজুরি বৃদ্ধির ব্যবধান কিছুটা সংকুচিত হলেও সাধারণ মানুষের ওপর বাস্তব আয়ের চাপ এখনো রয়ে গেছে। নভেম্বরে মজুরি মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ, যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এর অর্থ হলো- মজুরি বৃদ্ধি মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পুরোপুরি তাল মেলাতে পারছে না। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় সামাল দেওয়া অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অক্টোবরে ব্যাংক আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা বছরে প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। এতে ব্যাংকিং খাতে আমানতকারীদের আস্থার প্রতিফলন দেখা যায়। তবে একই সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে মাঝারি রয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে।
রাজস্ব আহরণে বছরওয়ারী প্রবৃদ্ধি থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঘাটতি রয়ে গেছে। নভেম্বর মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতায় আদায়কৃত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম ছিল। যদিও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে। তবু নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নেও একই ধরনের চিত্র উঠে এসেছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে এডিপি ব্যয় আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে বাস্তবায়নের গতি এখনো মন্থর।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশাসনিক জটিলতা, বিলম্বিত অনুমোদন এবং ধীরগতির অর্থ ছাড়ের কারণে নির্ধারিত সময়ে উন্নয়ন ব্যয় সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বৈদেশিক খাতে নভেম্বরে তুলনামূলকভাবে শক্ত অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
আরও পড়ুন: আয়ের সিংহভাগ ‘গিলে নিচ্ছে’ বাড়িভাড়া
এসময়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে প্রবাসী আয় প্রায় ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রফতানি আয়ও স্থিতিশীল রয়েছে, যদিও এর বড় অংশ এখনো তৈরি পোশাক খাতনির্ভর।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বৈদেশিক খাতে সাম্প্রতিক ইতিবাচক অগ্রগতি সত্ত্বেও রফতানি আয়ে পোশাক খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ফলে টেকসই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রফতানি বৈচিত্র্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ জোরদার এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাঠামোগত সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ।
এএইচ/এএইচ