- প্রকল্পের ব্যয় কমেছে ৭৫৪ কোটি টাকা
- মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আরও ৩ বছর
- অতিরিক্ত ৩.৫৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ বাতিল
- এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পে ৩ দফায় সংশোধনী
- মতিঝিল–কমলাপুরে মেট্রো চলবে ২০২৭ সালে
ঢাকা মেট্রোরেল এমআরটি (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট) লাইন-৬ প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানো হয়েছে। তবে একই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় কমেছে প্রায় ৭৫৪ কোটি টাকা। এটি এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী।
বিজ্ঞাপন
সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মতিঝিল স্টেশনের প্রবেশ ও প্রস্থান কাঠামোর জন্য অতিরিক্ত ৩.৫৬ হেক্টর জমির আর প্রয়োজন হয়নি। এতে সাশ্রয় হয়েছে ১ হাজার ১২১ কোটি টাকা।
উত্তরা উত্তর, উত্তরা মধ্য, আগারগাঁও ও মতিঝিল স্টেশনে প্রস্তাবিত স্টেশন প্লাজা নির্মাণ বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে আরও ১৬৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এ ছাড়া মূল লাইন, সিভিল ও স্টেশন নির্মাণে ১১৬ কোটি টাকা, ইলেকট্রিক ও মেকানিক্যাল রেলওয়ে ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ৯০.৪৫ কোটি টাকা এবং পুনর্বাসন পরামর্শ সেবায় ২.৯৮ কোটি টাকা ব্যয় কমেছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মূলত মতিঝিল–কমলাপুর অংশের ১.১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণকাজ শেষ করতেই সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হয়েছে।
প্রকল্পের খরচ
বিজ্ঞাপন
এমআরটি লাইন-৬ দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প। এটি প্রথম অনুমোদন পায় ২০১২ সালে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ছিল ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ ছিল ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
২০১৭ সালে প্রথম সংশোধনী অনুমোদিত হলেও ব্যয় অপরিবর্তিত ছিল। পরে প্রকল্পটি কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। তখন সরকারি অর্থায়ন ছিল ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা এবং জাইকার ঋণ ছিল ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।
তৃতীয় সংশোধনীতে মোট ব্যয় কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১২ হাজার ৫২২ কোটি টাকা এবং জাইকার ঋণ ২০ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের সংশোধনীর তুলনায় প্রকল্প ব্যয় কমেছে প্রায় ৭৫৪ কোটি টাকা।
চলমান অংশ
মোট ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ ইতিমধ্যে চালু রয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধনের পর এটি প্রথমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল শুরু করে। ২০২৩ সালের শেষ দিকে মতিঝিল পর্যন্ত সব স্টেশন যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণকাজ আগামী ১৮ মাসের মধ্যে শেষ হবে। এই অংশে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ত্রুটিজনিত দায়ভার হিসেবে আরও ১৮ মাস সময় ধরা হবে।
খরচ কমেছে
ভূমি অধিগ্রহণে খরচ কমেছে প্রায় ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। স্টেশন প্লাজা বাতিল করায় সাশ্রয় হয়েছে আরও ১৬৪ কোটি টাকা। মূল লাইন ও স্টেশন নির্মাণে ১১৬ কোটি টাকা, ইলেকট্রিক ও মেকানিক্যাল সিস্টেমে ৯০.৪৫ কোটি টাকা এবং পুনর্বাসন পরামর্শ সেবায় ২.৯৮ কোটি টাকা ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে।
ব্যয় বেড়েছে
বেতন, ভাতা ও অফিস ভাড়া খাতে ব্যয় বেড়েছে ১৬৭ কোটি টাকা। সাধারণ পরামর্শ সেবা ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ২২২.২৫ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ বেড়েছে ২৭০ কোটি টাকা এবং রোলিং স্টক ও সরঞ্জাম ক্রয়ে আরও ৫৬১.১৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি ছোট খাতেও অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএমটিসিএল-লাইন-৬)-এর প্রকল্প পরিচালক (পিডি)-এর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ জানান, বিদেশি ঋণের চাপ কমাতে সরকার সব মেট্রো প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনা করছে। দরপত্রে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং অপ্রয়োজনীয় উপাদান বাদ দেওয়ার মাধ্যমে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে। কমলাপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বিদ্যুতায়ন ও সিগন্যালিং খাতে ঠিকাদারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তিন ধাপে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হয়েছে।
এএইচ/এআর

