images

সারাদেশ

ঠাকুরগাঁওয়ে সোনালি শীষে ভরে গেছে কৃষকের ক্ষেত

জেলা প্রতিনিধি

০৯ নভেম্বর ২০২২, ০১:১৪ পিএম

ঠাকুরগাঁওয়ে আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আগাম জাতের ধানের সোনালি শীষে ভরে গেছে কৃষকের ক্ষেত। বাতাসে ঢেউ তুলছে ধানের শীষ। ধান কাটা-মাড়াই কাজে কৃষকের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে দিনমজুরদেরও। এবার ধানের দাম ভালো থাকায় লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা এলাকা ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠের সোনালি রঙের পাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাধে, কেউ ভ্যানে আবার কেউ গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি। বাড়ি নিয়ে গিয়ে এসব মাড়াই ও পরিষ্কার করে ধান সেদ্ধ করে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষক-কৃষাণীরা।

thakurgaon

চলতি রোপা আমন মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে আমন চারা লাগাতে দেরি হলেও পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। এছাড়াও গরুর খাদ্য হিসেবে খড়ের চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছেন তারা।  

>> আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে জমে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ শীতবস্ত্রের দোকান

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, জেলায় এই মৌসুমে আমন আবাদের  লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমি ও উৎপাদন  লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে আরও ১০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে আমনের। এ পর্যন্ত মাত্র ১১ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমির ধান কাটা করা হয়েছে। এতে ফলন হয়েছে ৫ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন। আর হেক্টর প্রতি গড় চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ দশমিক ৪৮ মেট্রিক টন। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ দশমিক ১৩ মেট্রিক টন চাল। লক্ষ্যমাত্রার থেকে আবাদ ও ফলন দুটিই বেশি। 

thakurgaon

সদর উপজেলার তরুণ কৃষক মো. ইউসুফ আলী। ১০ বিঘা (৫০ শতকে এক বিঘা) জমিতে চাষ করেছেন আমন ধান। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, এবার সার ও কীটনাশকের দাম অনেক বেশি হলেও অন্যান্য বারের থেকে এবার ধানে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে ২-৩বার। আর অন্যান্য বার পোকা-মাকড় বেশি হওয়ায় কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছিল প্রায় ৫-৬ বার। এবার ধানে পোকা-মাকড় কম হওয়ায় স্প্রে কম করতে হয়েছে ও ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। আমার এক বিঘা জমিতে এবার প্রায় ৩৫-৩৬ মণ ধান হয়েছে আর খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকা। আর এক বিঘার জমির ধান বিক্রি করেছি ৩৬ হাজার টাকা। এতে এবার ধানের ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় আমরা কৃষকরা বেশ লাভবান।

thakurgaon

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গড়িয়ালী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি ৩৩ শতকে বিঘার ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান করেছি। এতে আমার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৮-১০ হাজারের মতো। এর মধ্যে প্রায় ৭ বিঘা জমির ধান কেটে বিক্রয় করেছি। এক বিঘায় ফলন হয়েছে ২০ মণ করে। আর বিঘা প্রতি ২৪ হাজার টাকার ধান বিক্রি করেছি মানে ২৪০০ টাকা করে ধানের বস্তা বিক্রি করেছি। তবে ধানের দাম পেয়ে খুশি হলেও সরকার যদি অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কমাতো তাহলে আমরা কৃষকরা আরো বেশি খুশি হতাম।

>> আরও পড়ুন: শীতের আগমন ঠাকুরগাঁওয়ে, কুয়াশায় ঢাকা চারদিক

নাজমুল হক নামে এক কৃষক বলেন, এবার আমন মৌসুমে রাসায়নিক সার সময় মতো টাকা দিয়েও পাইনি। কীটনাশকের দামও অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে। তারপরও আল্লাহর রহমতে এবার ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। দামও মোটামুটি আছে। তাতে এবার ধানের ভালোই পত্তা হবে সবার, ইনশাল্লাহ।

thakurgaon

পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক বাদল হোসেন বলেন, আমন রোপনের সময় আকাশের বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়ে ধান লাগিয়েছিলাম। আর তখন আবার ডিজেলের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়। এতে মনে করেছিলাম যে, এবার আর ধান তেমন ভালো হবে না। প্রথম দিকে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হলেও শেষের দিকে এইদিকে আকাশের বৃষ্টি হওয়ায় আল্লাহর রহমতে ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে।

>> আরও পড়ুন: ডাকাডাকি-লাফালাফিই ওদের প্রেমের আমন্ত্রণ

স্থানীয় বাজারে বর্তমানে আগাম জাতের হাইব্রিড ধানিগোল্ড ধানের ৭৫ কেজির বস্তা ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৩৫০ ও সুমন স্বর্ণ জাতের ধানের বস্তা ২৪০০ থেকে ২৪৫০ টাকা করে কেনা-বেচা হচ্ছে। তবে এর থেকে দাম আরও বাড়ার সম্ভবনা আছে বলে ঢাকা মেইলকে জানান সদর উপজেলার ধান-চালের ব্যবসায়ী মো. আবুল কাশেম।

thakurgaon

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধান চালের ব্যবসায়ী মো. রমজান আলী বলেন, গতবারে ৮০ কেজির এক বস্তা ধানের দাম ছিল ২,০০০ টাকা এবার বস্তা প্রতি ধানের দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) ড. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে আমান আবাদ বেশি ও উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার থেকে উৎপাদনও বেশি অর্জিত হবে এবং বর্তমানে ধানের যে মূল্য এমন বাজার মূল্য থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন।

প্রতিনিধি/এইচই