শীতের আগমন ঘটতে কিছুটা দেরি। কিন্তু দেশের উত্তরে হিমালয়ের কোলঘেঁষা জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ের পরিবেশ যেন কিছুটা ভিন্ন। ভোরে দেখা যায়, কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে রাস্তাঘাট, মাঠঘাট। ধানের গাছের আগায় জড়িয়ে রয়েছে মুক্তোর মতো শিশির বিন্দু। রাত যতো গভীর হয়, ঠাণ্ডা ততো বাড়ে। হালকা কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে নিতে হয়। এসব কিছুই বলে দেয় শীত নেমেছে এ জনপদে।
ঠাকুরগাঁও এক সময় ‘নিশ্চিন্তপুর’ নামে পরিচিত ছিল। এই নামটি মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিশ্চিন্তে বসবাসের উপযোগী কোনও গ্রামেরর ছবি। কিংবা মনে পড়ে যায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী উপন্যাসের ‘নিশ্চিন্দিপুর’ গ্রামের কথা। যদিও অনেকদিন আগেই চাপা পড়ে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের এই ‘নিশ্চিন্তপুর’ নামটি।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট বলছে, কয়েকজন বিত্তশালী মানুষের খেয়ালি ইচ্ছাকে পূরণ করতে সাধারণের প্রিয় জনপদ নিশ্চিন্তপুরকে পালটে করা হয়েছিল ঠাকুরগাঁও। আর এ ইতিহাস অজানা রয়েছে বলে নিশ্চিন্তপুর শব্দটি উচ্চারিত হলে কখনও ঠাকুরগাঁওয়ের কথা মনে হয় না।
সেই ঠাকুরগাঁও জেলা এখন মধ্যরাতের পর থেকে হালকাভাবে কাঁপতে শুরু করেছে। তবে পূর্বদিকে লাল আভা দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর হালকা কাঁপন থেমে যায়। হালকা ঠাণ্ডার সাথে ভোরবেলা পড়তে শুরু করেছে কুয়াশাও।
নেমে আসছে শীতের আমেজ। কার্তিকের শুরু থেকেই এমন শীতের আবহ দেখা গেছে। যদিও আশ্বিনের শুরু থেকে শীত পড়া শুরু করেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
বিজ্ঞাপন
জেলায় ক্রমেই কমছে বাতাসের আর্দ্রতা আর বাড়ছে হিমেল হাওয়ার ঠাণ্ডা পরশ। বর্তমানে দিনের বেলায় কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা থেকেই শীত অনুভূত হচ্ছে। রাত যতো গভীর হয় ঠাণ্ডাও ততো বাড়তে থাকে। আর ঠাণ্ডার কারণে কাঁথা মুড়িয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন লোকজন।
সন্ধ্যা থেকে সকাল ৮টা-৯টা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে রাস্তাঘাট ফসলের মাঠসহ চারদিক। এ কারণে রাস্তায় চলাচলকারী মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনকে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলায় গরম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং হওয়ার পরদিন থেকে জেলায় বেড়েছে শীত ও কুয়াশা।
এবার শীতের প্রকোপ বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
সদর উপজেলার জহিরুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, গতবারের চেয়ে এবার আরও আগেই আমাদের এই দিকে শীত শুরু হয়েছে। বিকাল থেকেই কুয়াশার হিমেল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে। শীত অনুভূত হওয়ায় রাতে কাঁথা গায়ে নিতে হচ্ছে।
মাদরাসার শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, আশ্বিনের শুরু থেকে শীত পড়া শুরু করেছে এদিকে। তবে এবার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং হওয়ার পরদিন থেকেই সন্ধ্যা থেকে সকাল ৮টা-৯টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা পড়া শুরু করেছে। তাই এবার হয়তো গতবারের তুলনায় শীতের প্রকোপ বেশি হতে পারে।
আব্দুল খালেক নামে একজন কৃষক জানান, রাতে ঘন কুয়াশায় ঠিকমতো রাস্তা দেখা যায় না। আর সকাল ১০-১১টা সময়ও মাঠের ঘাস ও ধান গাছ শিশিরে ঘাস ভেজা থাকছে।
মোটরসাইকেল আরোহী খোরশেদ ইসলাম বলেন, এমনিতে সন্ধ্যায় হাঁটাচলা করলে গরম কাপড় গায়ে দিয়ে বের হতে হচ্ছে। আর মোটরসাইলে চালাতে তো গায়ে জ্যাকেট, মাফলা ও হাত মোজা পরিধান করতে হচ্ছে নয়তো হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা অনুভূত হয়।
প্রায় প্রতিবছর এ জেলায় শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় সরকারকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে সঠিকভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করার দাবি ও অনুরোধ জানান স্থানীয়রা।
মজিবর রহমান নামে মসজিদের খাদেম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। এলাকায় তেমন কোনো ধনী ব্যক্তি নেই। সরকারকে বিনীত অনুরোধ করছি, এলাকার প্রকৃত অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের গরম কাপড় দিয়ে শীত নিবারণ করার জন্য।
রবিউল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ঠাকুরগাঁও একটি সীমান্তবর্তী জেলা। হিমালয়ের কাছাকাছি জেলার অবস্থান হওয়ায় এখানে শীত আগেই শুরু হয়ে যায়। এ জেলায় অনেক অসহায় দরিদ্র মানুষ আছেন, যারা শীতের সময় কাপড়ের অভাবে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেন। সরকারকে অনুরোধ করবো, এ ধরনের মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর দরকার। তাদেরকে শীতবস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। তাছাড়া
শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান রাখেন তিনি।
ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ৫০ হাজার কম্বল ও ২০ লাখ টাকার একটি চাহিদা পাঠিয়েছেন। বরাদ্দ এলেই সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে তা শতভাগ সঠিকভাবে বিতরণ করা হবে বলে ঢাকা মেইলকে জানান জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান।
প্রতিনিধি/এইচই

