মোস্তফা ইমরুল কায়েস
১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪০ এএম
২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে গেছে। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী দলগুলোর ডাকা একের পর এক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির প্রভাব পড়েছে প্রতিটি সেক্টরে। বাদ যায়নি আকাশপথও।
আগের তুলনায় আকাশপথে যাত্রী অনেক কমেছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রুটে এর প্রভাব পড়েছে বেশি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এয়ারলাইন্সগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে এভিয়েশন সংশ্লিষ্টতা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়টা অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য ভরা মৌসুম। এই সময়ে মানুষ কক্সবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রামের মতো পর্যটক সমৃদ্ধ এলাকায় ঘুরতে যান। এজন্য অনেকের পছন্দের যাত্রা আকাশ পথ। অন্যান্য বছর নভেম্বরের শুরু থেকে এয়ারলাইন্সগুলোকে যাত্রীচাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। হরতাল-অবরোধের কারণে উড়োজাহাজের যাত্রী কমে গেছে, যা এয়ারলাইন্স ব্যবসার ওপর অনেক প্রভাব পড়েছে।
এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আকাশ পথের অভ্যন্তরীণ রুটে টিকিট বাতিলের ঘটনা ঘটে খুবই কম। কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেকে ভ্রমণের তারিখ বদল করছেন। ফলে অনেক সময় ওই যাত্রীদের স্থলে নতুন যাত্রী মিলছে না। যাত্রী কমে যাওয়ায় ফলে সরকারি ও বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোতে অনেক সময় এক ফ্লাইটের যাত্রীদের আরেক ফ্লাইটের সঙ্গে সমন্বয় করেও গন্তব্যে পৌঁছানোর ঘটনা ঘটেছে। অনেক সময় এক ফ্লাইটের টিকিট কাটা যাত্রী আরেক ফ্লাইটে পাঠানোর প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে অনেককে তার টিকিট রিফান্ড দিতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলোর।
এয়ার অ্যাস্ট্রার জনসংযোগ কর্মকর্তা সাকিব হাসান শুভ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের ব্যবসা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। বিশেষ করে কক্সবাজার ও সৈয়দপুর রুটে যাত্রী কমে গেছে। চট্টগ্রাম মোটামুটি আছে। অল ওভার এই সময়ে আমাদের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে।’
বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ার এর মার্কেটিং এন্ড সেলস বিভাগের প্রধান মেজবাহ উল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের ২০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে। আমরা সব রুটেই যাত্রী কম পাচ্ছি।’
জানতে চাইলে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘হরতাল অবরোধের কারণে এই সময়ে যে যাত্রী থাকার কথা, সেটা আনুপাতিক হারে পাওয়া যাচ্ছে না। হলিডে মৌসুম শুরুর দিকে টিকিট বিক্রির যে হার থাকার কথা তা কমেছে। অন্য বছরগুলোতে অ্যাডভান্স সেল হতো কিন্তু এবার সেটি কমে গেছে।’
কামরুল ইসলাম আরও বলেন, ইউএস-বাংলার কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুর রুটে যাত্রী কমেছে। দেশীয় এভিয়েশন সেক্টরে সকল এয়ারলাইন্সের যাত্রী ১৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানান তিনি।
আকাশপথে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়ার বিষয়টি বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো পক্ষ থেকে স্বীকার করা হলেও সরকারি পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এ ব্যাপারে জানতে বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা তাহেরা খন্দকারকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর বিমানের সেলস বিভাগে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে জানান, অভ্যন্তরীণ রুটে তাদেরও যাত্রী কমে গেছে। তবে কানেক্টিং ফ্লাইটের যাত্রী থাকায় তারা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন।
এদিকে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী কমলেও আন্তর্জাতিক রুটে কয়েক মাস আগে আগাম টিকিট কাটায় এখনো সংকট তৈরি হয়নি। তবে রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হলে আন্তর্জাতিক রুটেও যাত্রী কবে আসবে বলে মনে করছেন এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা।
এমআইকে/এমআর