নারীকে মানুষ হিসেবে দেখে আইনের সকল ক্ষেত্রে তাদের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কাউকে প্রতিপক্ষ নয়, নারী-পুরুষ সবাই সবার প্রতি সম্মানবোধ ও সহমর্মী হলে সুন্দর সমাজ ও পরিবার গড়ে উঠবে।
‘বৈষম্যপূর্ণ পারিবারিক আইন পরিবর্তন করি, নারীর অগ্রসরতায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করি’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৯ মার্চ) এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ (এডাব) ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম-এর যৌথ আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।
এডাব চেয়ারপারসন জনাব আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে র্যালিটি ঢাকার তোপখানা রোড সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এসে শেষ হয়।
এডাব চেয়ারপারসন আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য শাহিদা তারেখ দীপ্তি।
সংসদ সদস্য দীপ্তি তার বক্তৃতায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীদের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নারীরা প্রতিটা সেক্টরেই অবদান রাখছেন। নারীকে মানুষ হিসেবে দেখে আইনের সকল ক্ষেত্রে তাদের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কাউকে প্রতিপক্ষ নয়, আসুন আমরা ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি, সম্মান করি, সহমর্মী হই। তাহলেই পরিবার, সমাজ হবে সুন্দর, নির্মল, সাহসী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ড. ইঞ্জিনিয়ার মাসুদা সিদ্দিক রোজী পি-ইঞ্জ, বাংলাদেশ আইনজীবি সংসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকসির এম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শবনম আযীম।
আরও পড়ুন
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন এডাব পরিচালক একেএম জসীম উদ্দিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডাবের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা সমাপিকা হালদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, নাসরীন গীতি, এডিটর, দ্য নিউজ।
ড. ইঞ্জিনিয়ার মাসুদা সিদ্দিক রোজী পি-ইঞ্জ বলেন, মেয়েরা শিক্ষায় উন্নতি করলেও সমাজের উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারছে না, তাদেরকে সুযোগ করে দিতে হবে।
আকসির এম চৌধুরী বলেন, ছেলে-মেয়ে নয়, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সন্তানের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
শবনম আযীম বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া নারীর এগিয়ে যাওয়া মুশকিল। নারীর অগ্রসরতায় বিনিয়োগ বলতে শুধু আর্থিক নয়, বিনিয়োগ হতে হবে মানসিকতার, মূল্যবোধের, বন্ধুত্বের ও মনোভাব তৈরির।
এডাব পরিচালক জসীম উদ্দিন বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়নে মূল সমস্যা বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন। এ সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের সংবিধানেই আছে। জাতীয় সংসদকে এ বিষয়ে অগ্রবর্তি হতে হবে।
তিনি বলেন, শুধু একটি দিন নয় প্রতিটি দিনই যেন হয় নারীবান্ধব।
আলোচনা শেষে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এনামুল কবীর রূপম বলেন, বৈষম্যমূলক উত্তরাধিকার আইনই নারীদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে। সবার আন্তরিক অংশগ্রহণ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নারীর অগ্রসরতায় ভূমিকা রাখবে।
এডাবের ভাইস চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী বলেন, নারীর অধিকার সম্পর্কে নারীকেই সচেষ্ট হতে হবে। নারী পুরুষ নয়, সকলকে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল মতিন বলেন, এডাব অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন ধারায় বিশ্বাসী। ছেলে মেয়ে নয়, পরিবারের সকল সন্তানকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাই, কোনো অনুকম্পা নয়, দান নয়, দয়া নয়, আমরা নারীর অধিকারসহ সকল মানুষের সমান অধিকার চাই। আর অধিকার কেউ দেয় না, আদায় করে নিতে হবে।
বিইউ/এমএইচএম