অ্যামেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও স্টেশন পরিচালনা হলো একটি শখ। একটি বেতারযন্ত্র দিয়ে অন্য একটি বেতারযন্ত্রে কথা বলা বা তথ্য নেওয়া-দেওয়াই হলো অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের কাজ। এই অপারেটররা পাহাড়ের চূড়া, নিজের বাসা অথবা গাড়িতে বসে চাইলে মহাকাশযানের নভোচারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। মহাকাশে যাওয়ার সময় তারা সবাই কল-সাইন ব্যবহার করে অন্য হ্যামদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এছাড়াও হ্যাম রেডিও ব্যবহার করে আপদকালীন সময়ে বিভিন্ন রেডক্রসের মত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে উদ্ধারকাজেও অংশ নিতে পারবেন।
সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ থাকে না। তখন টেলিযোগাযোগ ব্যাহত হয়। ওই সময় যোগাযোগের অন্যতম হতে পারে অ্যামেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও।
বিজ্ঞাপন

সাধারণত মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক টাওয়ারকেন্দ্রীক। দুর্যোগের সময় এসব টাওয়ার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে মোবাইল ফোনে সিগন্যাল মেলে না। এ অবস্থায় যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে বেশ কার্যকরী ডিভাইস হ্যাম রেডিও। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিপর্যয় মোকাবিলায় উদ্ধারকাজে সঠিকভাবে বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম।
আরও পড়ুন: দুর্যোগে টেলিযোগাযোগে ভরসা হতে পারে অ্যামেচার রেডিও
তবে যে কেউ চাইলেই হ্যাম রেডিও চালাতে পারবেন না। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের। আর এ কারণে বর্তমানে সিভিল ডিফেন্সের কাজে নিয়োজিতদের প্রাথমিক পর্যায়ে হ্যাম রেডিও চালানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হয়।
বিজ্ঞাপন

অ্যামেচার রেডিও স্টেশন পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে লাইসেন্স নিতে হয়।
লাইসেন্স দেয়ার জন্য বিটিআরসি পরীক্ষা নেয়। প্রতি বছরের শেষের দিকে পরীক্ষার আয়োজন শুরু হয়।
আরও পড়ুন: দেশে অ্যামেচার রেডিও কার্যক্রমকে আরো সংগঠিত করার আহ্বান
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স নিয়ে রেডিও ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। প্রত্যেক রেডিও অপারেটরের রয়েছে স্বতন্ত্র কল সাইন। এই কল সাইন ইস্যু করে বিটিআরসি।

আগ্রহী পরীক্ষার্থীকে কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সী হতে হবে। এছাড়াও তাকে অ্যামেচার বেতারযন্ত্র সম্পর্কে কারিগরী জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।
মূলত, বেতারযন্ত্রের সাহায্যে অ্যামেচার রেডিও সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিচ্ছে বন্ধুত্বের হাতছানি। উপরি হিসেবে বিপদ-আপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কাজ তো আছেই।
আরও পড়ুন: অ্যামেচার রেডিও অপারেটর লাইসেন্স পাওয়ার নিয়ম
তবে এই রেডিও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না। মূলত শখ মেটাতেই এই রেডিও ব্যবহারের লাইসেন্স পেতে পারেন।

এই রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থায় একজন ব্যবহারকারী নিজেই একটি পূর্ণাঙ্গ বেতার গ্রাহক ও প্রেরকযন্ত্রের অধিকারী হয়ে ওঠেন। এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে নিজ এলাকা, দেশ, এমনকি পৃথিবীর যেকোনও দেশে ওই ধরনের বেতারযন্ত্র ব্যবহারকারীর সঙ্গে তথ্য বিনিময় করা যায়।
আরও পড়ুন: ইমার্জেন্সি হ্যাম রেডিও স্টেশন যেমন হওয়া উচিত
একজন অ্যামেচার রেডিও অপারেটরকে বিটিআরসি তিন ধরনের রেডিও সেট ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এগুলো হলো- ইউএইচএফ, ভিএইচএফ এবং এইচএফ রেডিও। হ্যাম রেডিও অপারেটররা ওয়াকিটকি ব্যবহারের পাশাপাশি বেজ রেডিও পরিচালনার অনুমতিও পান। দূর্যোগের সময় এই বেজ রেডিও গাড়ি ও নৌ-যানে ব্যবহারের অনুমতি দেয় বিটিআরসি।
এজেড

