ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে যেন একেবারে সিনেমার মতো মোড়! রিও ডি জেনেইরোর একটি আদালত সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়েছে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) প্রেসিডেন্ট এডনালদো রদ্রিগেজকে। তার নিয়োগ চুক্তিতে স্বাক্ষর জাল হয়েছে, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত ১৫ মে তাকে পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দেয়।
রায়টা এসেছে এমন এক সময়, যখন ইতালিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে ব্রাজিল জাতীয় দলের নতুন কোচ হিসেবে ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে একদিকে নতুন অধ্যায়ের সূচনা, অন্যদিকে বড়সড় ঝড়, দুইয়ের মাঝেই পড়ে গেছে ব্রাজিল ফুটবল।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন- মুস্তাফিজকে দলে নেওয়ায় আইপিএলের ম্যাচ বয়কটের দাবি!
আরও পড়ুন-দুঃসংবাদ পেলেন সাকিব আল হাসান
আদালতের রায়ে বলা হয়, ২০২৫ সালের চুক্তিতে যিনি স্বাক্ষর করেছিলেন, সেই কর্মকর্তার মানসিক সক্ষমতা তখন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তাই পুরো চুক্তিকেই ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করা হয় এবং সিবিএফকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়। ফুটবল মাঠে হঠাৎ করে দর্শকের মাঠে ঢুকে পড়ার মতোই ঝাঁকুনি দিয়েছে এই সিদ্ধান্ত।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সিবিএফ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ফার্নান্দো হোসে সারনে। তিনি জানিয়েছেন, আদালতের রায় মেনে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তবে একইসঙ্গে সিবিএফ সুপ্রিম কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে, আশা করা হচ্ছে ‘ইনজুরি টাইম’-এ এসে রায় ঘুরে যাবে।
বিজ্ঞাপন
| আরও পড়ুন- |
| ডু অর ডাই ম্যাচ খেলতে পিএসএল যাচ্ছেন সাকিব! |
| ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পর ফিরছে আইপিএল, প্লে-অফের সমীকরণ |
| যৌন কেলেঙ্কারির জালে রিয়াল তারকা |
| বার্সার শিরোপা উৎসবের অপেক্ষা বাড়ল রিয়াল |
সিবিএফ-এর ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন এডনালদো রদ্রিগেজ। রায় ঘোষণার সময় তিনি ছিলেন আসুনসিওনে ফিফার এক বৈঠকে এবং সেখানেই নিজের চুক্তির বৈধতার ওপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন।
এর আগেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি রদ্রিগেজের। ২০২৩ সালে নির্বাচনী জটিলতার কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে এবং ফিফার কঠোর হুঁশিয়ারিতে তিনি ফের দায়িত্বে ফিরেছিলেন। তখনই ফিফা ও কনমেবল হুঁশিয়ার করে বলেছিল, ফুটবলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘বাইরের হস্তক্ষেপ’ চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে সিবিএফকে বহিষ্কারও করা হতে পারে।
চলতি বছরের মার্চে সর্বসম্মতভাবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রদ্রিগেজ। সাবেক তারকা ফুটবলার রোনালদো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ ছিল না। তবে এরপরই ব্রাজিলের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘পিয়াউই’ দাবি করে, রদ্রিগেজ নাকি নির্বাচনের আগে আঞ্চলিক ফুটবল কর্মকর্তাদের বেতন বাড়িয়ে ‘চুক্তি মিষ্টি’ করে দিয়েছিলেন।
সব বিতর্কের মাঝেই ব্রাজিল জাতীয় দল তাকিয়ে আছে কার্লো আনচেলত্তির দিকে। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের ‘মাস্টারমাইন্ড’ আনচেলত্তির ওপরই আস্থা রাখছে সিবিএফ। কেননা, গত মার্চে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে ৪-১ গোলের হার দলকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। সেই হারের পরই কোচ দোরিভাল জুনিয়র বরখাস্ত হন।
এখন দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে ব্রাজিল রয়েছে চতুর্থ স্থানে। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় হতে যাওয়া বিশ্বকাপ সামনে রেখে দলের মধ্যে যেমন স্থিতিশীলতা দরকার, তেমনি দরকার নেতৃত্বে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত।
ব্রাজিলের ফুটবল যেন এক রোমাঞ্চকর থ্রিলারের বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে। সামনে কী হবে, সেটাই এখন গোটা দুনিয়ার চোখের সামনে বড় প্রশ্ন।

