ভারত এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) নেতৃত্ব লম্বা সময় ধরে সামলানোর চাপ ও ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়ে চলতে থাকা অবিরাম নজরদারি এক পর্যায়ে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল বিরাট কোহলির জন্য। মানসিক শান্তি খুঁজতেই শেষ পর্যন্ত সব নেতৃত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছে আরসিবি পডকাস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে।
আরসিবির ‘বোল্ড ডায়েরিজ’ পডকাস্টে কোহলি বলেন, “আমি ভারতের হয়ে ৭-৮ বছর আর আরসিবির হয়ে ৯ বছর অধিনায়কত্ব করেছি। প্রতিটি ম্যাচেই ব্যাটার হিসেবে আমার ওপর প্রত্যাশা থাকত। কখনোই মনে হয়নি, আমার ওপর থেকে দৃষ্টি সরে গেছে। যদি নেতৃত্ব না থাকে, তাহলে ব্যাটিং নিয়ে চাপ থাকত। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এই চাপে ছিলাম। শেষদিকে এটা খুব বেশি হয়ে গিয়েছিল।”
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন- কোন ৩ বোলারের বল খেলা বেশি কঠিন, জানালেন কোহলি
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ভারতের টি-টোয়েন্টি দল থেকে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন কোহলি। এর পরপরই আরসিবির নেতৃত্ব থেকেও সরে দাঁড়ান। ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টেস্ট সিরিজে হারের পর টেস্ট দলের নেতৃত্বও ছেড়ে দেন তিনি।
সেই বছর তিনি ক্রিকেট থেকে এক মাসের ছুটিও নিয়েছিলেন। একেবারেই ব্যাট ছুঁয়ে দেখেননি। “এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, এই স্পটলাইটে আমি আর খুশি নই,” বলেন কোহলি। তিনি বলেন, “যদি আমি ঠিক করি, এই জায়গাটিতেই থাকতে চাই, তাহলে তো খুশি থাকতে হবে। আমি ক্রিকেট খেলতে চাই বিচার ছাড়াই। বারবার এই প্রশ্ন শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম‘এই মৌসুমে তুমি কী করছো’, ‘এখন কী হবে’ এসব।”
আরও পড়ুন- লাস্যময়ী অভিনেত্রীর ছবিতে ‘লাভ রিয়্যাক্ট’ দিয়ে বিপাকে কোহলি
বিজ্ঞাপন
২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানোর পরেও ভারতের জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়াটা সহজ ছিল না কোহলির জন্য। তার মতে, নিজের লড়াকু মানসিকতা আর এমএস ধোনি এবং গ্যারি কারস্টেনের আস্থাই তাকে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ এনে দেয়।
তিনি বলেন, “আমি আমার স্কিল নিয়ে খুব বাস্তববাদী ছিলাম। অন্যদের খেলা দেখে বুঝতাম, আমি অনেক পিছিয়ে। কিন্তু একটা জিনিস ছিল—আমার সংকল্প। আমি চেয়েছিলাম দলে জয় এনে দিতে, আর তার জন্য যা করা দরকার, করতে রাজি ছিলাম। এই কারণেই শুরুতে সুযোগ পেয়েছিলাম। গ্যারি (কারস্টেন) আর এমএস (ধোনি) তখন বলেছিলেন, ‘আমরা চাই তুমি তিন নম্বরে খেলো।’”
আরও পড়ুন: আইপিএলে প্লে অফে জায়গা পেতে লড়াইয়ে ৭ দল, যে সমীকরণ
তাদের সহায়তায় কোহলি নিজের মতো খেলতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, “তারা আমাকে বলেছিল, ‘তুমি মাঠে যেটা দাও- তোমার শক্তি, উদ্যম, লড়াই- এই জিনিসটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড়। আমরা চাই তুমি নিজের খেলাটা খেলো।’” তিনি আরও বলেন, “আমি কখনোই ওই রকম খেলোয়াড় ছিলাম না যে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আমার মধ্যে ছিল লড়ে যাওয়ার মানসিকতা। হার না মানার মনোভাব। আর এটাকেই তারা গুরুত্ব দিয়েছিল।”
কোহলি মনে করেন, মাঠে নার্ভাসনেস বা টেনশন থাকা জরুরি, সেটাই একজন ক্রিকেটারকে প্রতিযোগিতার মধ্যে রাখে। “ছোটবেলায় মনে হতো, যদি একটা নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে এক্স সংখ্যক রান করে ফেলি, তাহলে সব সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু এটা কখনোই হয় না।”
তিনি বলেন, “আসলে এই নার্ভাসনেসটাই বলে দেয়, তুমি এখনও খেলায় আছো। যখন সেটা হারিয়ে যায়, মানুষ তখনই বলে, তুমি শেষ। এই টেনশনই তোমাকে সেই মুহূর্তে কেন্দ্রীভূত থাকতে শেখায়। এই শক্তিটাই তোমাকে চালিয়ে নিয়ে যায়। আর সেটা যতদিন থাকবে, ততদিন তুমি প্রতিদ্বন্দ্বী।”

