শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রোজায় মিসওয়াক করবেন যে কারণে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৩:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

রোজায় মিসওয়াক করবেন যে কারণে

অজু ও নামাজের সময় মিসওয়াক করা সুন্নত। অন্যান্য সময় মোস্তাহাব। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে মিসওয়াকের আলাদা কদর ছিল। তিনি বলেন, ‘এমনটি কখনও হয়নি, জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসেছেন আর আমাকে মিসওয়াকের আদেশ করেননি। এতে আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, (বেশি ব্যবহারের ফলে) আমার মুখের অগ্রভাগ ক্ষয় না করে ফেলি।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২২৬৯) 

রোজাদারের মুখের স্বাভাবিক গতি প্রবাহে মিসওয়াক বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও আরামদায়ক মান রাখার সক্ষমতা রয়েছে মিসওয়াকের। বিশেষ করে রোজাদারের জন্য সকাল বিকাল মুখের স্বাচ্ছন্দ্য ধরে রাখার নিমিত্তে মিসওয়াক করা প্রয়োজন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের একটি মাধ্যম হচ্ছে মিসওয়াক।


বিজ্ঞাপন


হজরত আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মিসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়।’ (নাসায়ি: ৫)

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যদি আমি আমার উম্মতের ওপর কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম।’ (বুখারি: ৮৮৭)

আরও পড়ুন: সুন্নতের অনুসরণেই মুক্তি

দিনের যেকোনো সময় মিসওয়াক করা যাবে। হাসান (রহ)-কে রোজা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রোজা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই। মিসওয়াক পবিত্রতার মাধ্যম। অতএব দিনের শুরুতে এবং শেষেও মিসওয়াক করো’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক: ৪/২০২)


বিজ্ঞাপন


এমনকি কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করাও মাকরুহ নয়। মুজাহিদ (রহ) রোজা অবস্থায় তাজা মিসওয়াক ব্যবহার করাকে দোষণীয় মনে করতেন না। সুফিয়ান সাওরি (রহ) থেকেও অনুরূপ বক্তব্য বর্ণিত আছে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক: ৪/২০২; রদ্দুল মুখতার: ২/৪১৯; আলবাহরুর রায়েক: ২/২৮১)

তাছাড়া এটি এমন একটি সুন্নত, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দি হাসিল হয়, ফেরেশতারা খুশি হন, নেকি বৃদ্ধি পায়, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়, দাঁতের গর্ত দূর হয়, মাড়ি শক্ত হয়, শ্লেষ্মা দূর হয়, মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামি (রহ.) উল্লেখ করেছেন, ‘মিসওয়াকের উপকারিতা সত্তরেরও অধিক। তন্মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র উপকার হচ্ছে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় আর সর্বোচ্চ উপকার হচ্ছে মিসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হয়।’ (ফতোয়ায়ে শামি: ১/২৩৯)

আরও পড়ুন: সুন্দর মৃত্যুর ১০ আমল

রাসুল (স.) জাইতুন ও খেজুর গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করেছেন। তাই এ দুটো হলে উত্তম। এছাড়া তিক্তস্বাদ যুক্ত গাছের ডাল দিয়েও মিসওয়াক করা যাবে। মিসওয়াক নিজ হাতের আঙুলের মতো মোটা ও এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। অজুতে হাত ধোয়ার পর কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা উত্তম।

মিসওয়াক ধরার সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হলো, ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি মিসওয়াকের নিচে থাকবে। মধ্যমা ও তর্জনী ওপরে ও বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচে রেখে মিসওয়াক ধরা। মুখের ডান দিক থেকে শুরু করা এবং ওপর থেকে নিচে মিসওয়াক করা। আড়াআড়িভাবে না করা। 

পরিতাপের বিষয় যে, মিসওয়াকের সুন্নত এখন প্রায় হারিয়ে গেছে। মুসলমানদের ঘরে ঘরে এখন টুথব্রাশের ব্যবহার। অথচ চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন একই ব্রাশ ব্যবহার করলে ব্রাশে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দাঁত ও মাঢ়িতে প্রদাহের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার কখনো কখনো জোরে চাপ পরার কারণে দাঁতের এনামেলের আস্তর ক্ষয় হয়ে দাঁতের গোঁড়ার সংবেদনশীলতা বাড়ায়।

আরও পড়ুন: খেজুর কেনার আগে চিনে নিন

অপরদিকে মিসওয়াকের রয়েছে অনন্য উপকারী উপাদান। যেমন- ট্রাইমিথাইল অ্যামিন, সালভাডোরাইন, অ্যালকালয়েড, ফ্লোরাইড, সিলিকা, সালফার, ভিটামিন সি, ফ্লেভোনয়েডস এবং স্টেরলস পদার্থ। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে মিসওয়াকে। যা শরীরের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়।

মিসওয়াকের আশগুলো খুব নরম এবং মসৃণ হওয়ায় দাঁতের জন্য তা বেশ আরামদায়কও। নিয়মিত মিসওয়াক করলে মুখের ভেতর সৃষ্ট হওয়া ক্ষত বা ঘা দূর দূর হয়। এর আরেকটি উপকার হলো মুখের দুর্গন্ধ দূর করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মিসওয়াকের গুরুত্ব অনুধাবন করে এর ওপর আমল করার এবং বিশেষ করে রমজান মাসে মিসওয়াকের সুন্নত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর