বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪, ঢাকা

খেজুর কেনার আগে চিনে নিন 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

খেজুর কেনার আগে চিনে নিন 

খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও শক্তিবর্ধক খাবার। স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে এটি সুপারফুড হিসেবে বিবেচিত। খেজুরকে আরবিতে ‘তুমুর বা তামুর বা তামারুন’ বলে। সবচেয়ে দামি খেজুরের নাম আজওয়া। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (স.) এই ফল খেতে উৎসাহিত করেছেন। হজরত সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.) বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও যাদু-টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি: ৫৪৪৫)

খেজুরের পুষ্টিগুণ
অনেকেই মনে করেন শুকনো খেজুর থেকে ফ্রেশ ফলে বেশি পরিমাণ পুষ্টি থাকে। এটি একদমই ভুল ধারণা। বরং শুকনো খেজুরে আরও বেশি পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। খেজুরের বেশির ভাগ ক্যালোরিই আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে ২৭৭ ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট ৭৫ গ্রাম, ফাইবার বা আঁশ ৭ গ্রাম, প্রোটিন ২ গ্রাম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ভিটামিন বি-৬সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। তা ছাড়া খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।


বিজ্ঞাপন


ইফতারে খেজুর ও দোয়া সম্পর্কে পড়ুন

রমজান মাসে রোজার কারণে অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকা হয় বলে দেহে প্রচুর গ্লুকোজের দরকার হয়। খেজুরে গ্লুকোজ থাকায় এ ঘাটতি পূরণ হয়। হৃদরোগীদের জন্যও খেজুর বেশ উপকারি। উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাটসম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরি। যারা প্রক্রিয়াজাত চিনি বা মিষ্টি গ্রহণে অনিচ্ছুক তাদের জন্য খেজুর একটি সেরা বিকল্প। খেজুর দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পক্ষাঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারি। এ ছাড়া ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যানসার রোধ করে। খেজুরের রয়েছে আরও অসংখ্য উপকারিতা। (সুন্নত ও আধুনিক বিজ্ঞান)

খেজুরের বিভিন্ন জাত
বাংলাদেশের বাজারে ১০০-১২০ শ্রেণির খেজুর পাওয়া গেলেও সারা বিশ্বে প্রায় ৩০০০ প্রজাতির খেজুর আছে। এদের আকার, ধরন, রং, গন্ধ, পুষ্টিগুণও বিভিন্ন ধরনের হয়। সৌদি আরবে ৪০০ রকমের, ইরানে ৪০০ রকমের, ইরাকে ৩৭০ রকমের, তিউনিশিয়ায় ২৫০ রকমের, ওমানে ২৫০ রকমের ও মরক্কোতে ২৪৪ রকমের খেজুর পাওয়া যায়। জনপ্রিয় যেসব খেজুর রয়েছে তা হলো আজওয়া, মেডজুল, মরিয়ম, আম্বার, আনবারা, ডিগ্রেট নূর, বারহি, ডেইরি, ডেগলেট, ইত্তিমা, কালমি, কুদরি, মাবরুম, মাকতুম, সাফাওয়ি, সাগি, মুসকানি, ওয়ান্নাহ ইত্যাদি।

কোথায় বেশি উৎপাদন হয়
বিভিন্ন দেশে খেজুর বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। সেসব আবার বিশ্বব্যাপী রপ্তানিও করা হয়। এর মধ্যে প্রতিবছর মিশরে উৎপাদিত হয় প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন। ১৫ লাখ মেট্রিক টন খেজুর উৎপাদন করে দ্বিতীয় সৌদি আরব। তিন, চার ও পাঁচে আছে ইরান, আলজেরিয়া ও ইরাক। যথাক্রমে উৎপাদন করে ১৩ লাখ, ১১ লাখ ও সোয়া ছয় লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশের বাজারে যেসব খেজুর পাওয়া যায় তার মধ্যে মাবরুম, মরিয়ম, সুকারি, সুগাই, ভিআইপি, মাশরুক, কালমি, আম্বার, মেডজুল ও আজওয়া অন্যতম। এসব খেজুর আসে মিশর, ইরাক, ইরান, সৌদি আরব, দুবাই, তিউনিসিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, আলজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: মদিনায় মহানবী (স.) প্রথম যাঁর অতিথি 

আজওয়া খেজুর কেন সেরা
বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেজুরের নাম আজওয়া। এই খেজুর আসে সৌদি আরব থেকে। আজওয়া মদিনায় উৎপন্ন হওয়া এক প্রজাতির খেজুর। ইবনে মুনযির তার লিসানুল আরব গ্রন্থে বলেছেন, আজওয়া খেজুর গাছ সর্বপ্রথম নবীজি (স.) নিজ হাতে রোপণ করেন। আজওয়া খেজুরে রয়েছে আমিষ, শর্করা, প্রয়োজনীয় খাদ্য আঁশ ও স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট। এ জাতীয় খেজুর ভিটামিন এ, বি সিক্স, সি এবং কে দ্বারা ভরপুর। তাছাড়া আজওয়ায় রয়েছে ক্যারোটিন যা ভিটামিন এ’র একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ক্যারোটিন চোখের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। এই খেজুরে থাকা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফলেট, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও রিবোফ্লেভিন। পুষ্টি ও মানের দিক দিয়ে সবচেয়ে ভালো খেজুর এটি। আজওয়া খেজুর নরম ও অনেক সুস্বাদু হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘মদিনার উচ্চভূমিতে উৎপন্ন আজওয়া খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে। আর প্রথম ভোরে তা আহার করা বিষের প্রতিষেধক।’ (সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৩৫৩৯)

আজওয়া খেজুর চেনার উপায়
আজওয়া খেজুর মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। দেখতে সুন্দর না, কুচকুচে কালো। খেজুরের গায়ে কাটা কাটা সাদা রেখা থাকে। এই বৈশিষ্ট্যগুলোই আপনাকে সঠিক আজওয়া খেজুর বাছাই করতে সাহায্য করবে। 

খেজুরের দাম
আজওয়া খেজুরের দাম বাংলাদেশের বাজারে প্রতি কেজি ৮০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত। আজওয়ার পরের অবস্থানে রয়েছে মেডজুল নামক খেজুর যা ‘খেজুরের রাজা’ হিসাবেও পরিচিত। এর দাম প্রায় ১২০০-১৫০০ কেজি। বাদামতলীর পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাবরুম প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৬৪০-৬৬০ টাকা। ৫ কেজির এক কার্টন নাগাল খেজুর ১৩৫০ থেকে ১৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার ১০ কেজির এক কার্টন খালাস খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১১৫০০ থেকে ১২৫০ টাকায়। পাঁচ কেজির দাবাস কার্টন বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায়। কালমি ১ হাজার ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। জাহেদি খেজুর ১০ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে ১০৩০ থেকে ১০৫০ টাকা, সায়ের ১০৫০ থেকে ১০৭০, লুলু ১৬৫০ থেকে ১৭০০ ও মাসরুক ১৯০০ থেকে ১৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ কেজির ফরিদা ৮০০ থেকে ৮৩০ টাকা, মাবরুম ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ পর্যন্ত উঠানামা করছে, আদম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকায়। পাইকারিতে মরিয়ম খেজুরের দাম ৭০০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে এক কেজি খেজুর কিনতে হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১৫০০ টাকায়। 

খেজুর খাওয়ার বরকত
খেজুর একটি বরকতময় খাবার। খেজুর দিয়ে ইফতার করা মোস্তাহাব। পবিত্র নগরী মদিনায় উৎপন্ন হওয়া বিশেষ প্রজাতির খেজুর ‘আজওয়া’। রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বপ্রথম নিজ হাতে এ খেজুর গাছ রোপণ করেছিলেন। এ খেজুর গাছ রোপন ও জন্মের পেছনে রয়েছে এক ইতিহাস। যার ফলে এ খেজুরের রয়েছে বিশেষ বরকত ও ফজিলত। 

আরও পড়ুন: যে কারণে হজযাত্রীদের টানে নবীজির মদিনা শহর

আজওয়া খেজুরের ইতিহাস
একজন ইহুদির হাত থেকে সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্ত করার জন্য নবীজি এই গাছ রোপনে অংশ নিয়েছিলেন। ইহুদির দুটি কঠিন শর্ত ছিল। শর্ত দুটি পূরণ করতে পারলে সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্তি দেওয়া হবে। তার উদ্দেশ্য ছিলো— অসম্ভব শর্তে তাকে আটকে রাখা। শর্ত দুটি ছিল- অল্প কয়েক দিনের মধ্যে নগদ ৬০০ দিনার ইহুদিকে দিতে হবে এবং অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ত্রিশটি খেজুর গাছ রোপন করে তাতে খেজুর ধরে পাকতে হবে। তবেই সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্তি দেওয়া হবে। যা ছিলো সম্পূর্ণ অসম্ভব। বিষয়টি নবীজি (স.) অবগত হলে তিনি ৬০০ দিনারের ব্যবস্থা করলেন। তারপর হজরত আলী (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে গেলেন ইহুদির কাছে। ইহুদি এক কাঁদি খেজুর দিয়ে বলল, এই খেজুর থেকে চারা উৎপন্ন করে তাতে ফল ফলাতে হবে। রাসুল (স.) দেখলেন যে, ইতোমধ্যে খেজুরগুলো আগুনে পুড়িয়ে সে কয়লা করে ফেলেছে যাতে চারা না গজায়।

রাসুল (স.) খেজুরের কাঁদি হাতে নিয়ে আলী (রা.)-কে গর্ত করতে বললেন আর সালমান ফারসিকে বললেন পানি আনতে। আলী (রা.) গর্ত করলে রাসুল (স.) নিজ হাতে প্রতিটি গর্তে সেই পোড়া খেজুর রোপন করলেন। বাগানের একদিক থেকে পোড়া কালো দানা রোপণ করতে করতে বাগানের শেষ পর্যন্ত গেলেন। রাসুল (স.) সালমান ফারসিকে এ নির্দেশ দিলেন যে, বাগানের শেষ প্রান্তে না যাওয়া পর্যন্ত তুমি পেছন ফিরে তাকাবে না। সালমান ফারসি পেছনে না তাকিয়ে পানি দিতে লাগলেন। বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর তিনি তাকিয়ে দেখলেন যে প্রতিটি গাছ খেজুরে পরিপূর্ণ। আল্লাহর অশেষ মহিমায় সেই পোড়া খেজুর থেকে চারা গজালো। আর খেজুরগুলো পেকে কালো বর্ণ হয়ে গেছে। কারণ এই খেজুরের দানাগুলো ছিলো আগুনে পোড়া কয়লার মতো কালো। তাই এর স্বাদও অনেকটা পোড়া পোড়া। গন্ধও তাই। এই খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুর। আর স্বাদের দিক দিয়েও সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু। হাদিস শরিফে খেজুরটির গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে এবং জান্নাতের ফল হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের, এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে...।’ (তিরমিজি: ২০৬৬)

আরও পড়ুন: সালমান ফারসির ইসলামগ্রহণ, সত্যান্বেষীর জন্য দৃষ্টান্ত

বরকতময় খেজুর আজওয়া

চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্যমতে আজওয়ায় খেজুরে আছে-'আমিষ, শর্করা, প্রয়োজনীয় খাদ্য আঁশ ও স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট। এছাড়া ভিটামিন এ, বি সিক্স, সি এবং কে দ্বারা ভরপুর। ভিটামিন 'এ'-এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান 'ক্যারোটিন'ও রয়েছে এতে। ক্যারোটিন চোখের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী। আরও রয়েছে স্বাস্থ্যকর উপাদান ফলেট, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও রিবোফ্লেভিন। 

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এ খেজুরটি খুবই বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ খাবার। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের, এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে...।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৬৬)

সাদ (রা.) বর্ণনা করেন— একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তার হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তার শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়। (আবু দাউদ: ৩৮৩৫)

আলি (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল: ২৮৪৭২; অনেকে বর্ণনাটি দুর্বল বলেছেন)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘আল-আলিয়ার আজওয়া খেজুর খেয়েই সকালের উপবাস প্রথমে ভাঙলে তা (সর্বপ্রকার) যাদু অথবা বিষক্রিয়ার আরোগ্য হিসেবে কাজ করে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৫৯২)
এখানে আল-আলিয়া বলতে বোঝানো হয়- মদিনার পূর্বদিকের কয়েক মাইল দূরের কিছু গ্রামকে।

উরওয়া (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) পরপর সাতদিন সাতটি আজওয়া খেজুর খেয়ে সকালের উপবাস ভাঙার অথবা এই অভ্যাস তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিতেন।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২৩৯৪৫)

খেজুর সম্পর্কিত হাদিস
উল্লেখিত হাদিস ছাড়াও খেজুর সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস নিচে উল্লেখ করা হলো।
হজরত সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.) বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও যাদু-টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি: ৫৪৪৫; মুসলিম: ২০৪৭-১৫৫; আবু দাউদ: ৩৮৭৬)

আরও পড়ুন: শত্রুর অনিষ্ট থেকে বাঁচার দোয়া

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘মদিনার উচ্চভূমিতে উৎপন্ন আজওয়া খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে। আর প্রথম ভোরে তা আহার করা বিষের প্রতিষেধক।’ (মুসলিম: ৫১৬৮; সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৩৫৩৯)
আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (স.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি; রোজা অধ্যায়: ৬৩২)
সালমান ইবনে আমির (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয় পানি পবিত্র‘। (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমি; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২, পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩২)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ঈমানদার ব্যক্তির জন্য খেজুর দিয়ে সেহরি খাওয়া কতোই না উত্তম! (আবু দাউদ: ২৩৪৫)
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের, এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে...।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৬৬)
সাদ (রা.) বর্ণনা করেন— একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তার হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তার শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়। (আবু দাউদ: ৩৮৩৫)
আলি (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল: ২৮৪৭২; অনেকে বর্ণনাটি দুর্বল বলেছেন)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘আল-আলিয়ার আজওয়া খেজুর খেয়েই সকালের উপবাস প্রথমে ভাঙলে তা (সর্বপ্রকার) যাদু অথবা বিষক্রিয়ার আরোগ্য হিসেবে কাজ করে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৫৯২)
এখানে আল-আলিয়া বলতে বোঝানো হয়- মদিনার পূর্বদিকের কয়েক মাইল দূরের কিছু গ্রামকে।
উরওয়া (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) পরপর সাতদিন সাতটি আজওয়া খেজুর খেয়ে সকালের উপবাস ভাঙার অথবা এই অভ্যাস তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিতেন।’ (মুছান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২৩৯৪৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বরকতময় খাবার আজওয়া খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্যসহ যাবতীয় ক্ষতিকর বিষক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর