মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

জীবনে ৭ অবস্থা আসার আগেই নেক আমলের নির্দেশ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

জীবনে ৭ অবস্থা আসার আগেই নেক আমলের নির্দেশ

জীবন ক্ষণস্থায়ী। মৃত্যু এসে যাবে আকস্মিক, তখন কিছুই করার থাকবে না। তাই নেক আমলের জন্য বিলম্ব করা যুক্তির দাবি নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তাদের নির্ধারিত (মৃত্যুর) সময় উপস্থিত হয় তখন তারা আর এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে পারে না এবং এর চেয়ে একটু এগিয়েও আসতে পারে না।’ (সুরা ইউনুস: ৪৯)

এজন্য প্রিয়নবী (স.) উম্মতকে সময় থাকতে বেশি বেশি নেক আমলের জন্য উৎসাহিত করেছেন। কেননা মানুষের জীবন একে তো সংক্ষিপ্ত, তার ওপর এমন কিছু খারাপ অবস্থা আসবে, যা হবে নেক আমলের জন্য প্রতিকূল। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘সাতটি বিষয়ের আগে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদেরকে সবকিছু ভুলিয়ে দেবে? না ওই ঐশ্বর্যের, যা তোমাদেরকে দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? না সেই বার্ধক্যের, যা তোমাদেরকে অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্যে অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট? না, কেয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কেয়ামত সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত?’ (জামে তিরমিজি: ২৩০৬)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: কেয়ামতের আগে যেসব ঘটনা বেড়ে যাবে

উল্লেখিত হাদিসে যে সাতটি বিষয়কে নেক আমলের বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো— ১) দারিদ্র্য ২) ঐশ্বর্য ৩) অসুস্থতা ৪) বার্ধক্য ৫) মৃত্যু ৬) দাজ্জালের ফেতনা ৭) কেয়ামত। এর অর্থ হলো—উল্লেখিত বিষয়গুলো নেক আমলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। তাই নবীজি (স.) আগামীকালের অপেক্ষা না করে দ্রুত নেক আমল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মৃত্যু উপস্থিত হলে তো আক্ষেপ আর অনুশোচনা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা থাকবে না। এ আক্ষেপ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আজকের নেক আমল আজকেই করতে হবে। 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা  তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্থতা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করো।’ (সুরা বাকারা: ১৪৮)


বিজ্ঞাপন


সময় হলে ইবাদতে মনোযোগী হবো বা সময়টা একটু পরিবর্তন হোক তারপরে নেক আমল শুরু করবো—এমন চিন্তাভাবনা মূলত শয়তানের ধোঁকা। এ ধোঁকায় যারা পড়ে, তাদের আর নেক কাজের সুযোগ হয়ে ওঠে না। মহানবী (স.) সেজন্যই বলেছেন, ‘আদমসন্তানের যদি দুই উপত্যকাভর্তি সম্পদ থাকে, তাহলে সে তৃতীয় আরেকটি তালাশ করবে। আদমসন্তানের পেট তো (কবরের) মাটি ছাড়া আর কিছুই ভরিয়ে দিতে পারবে না!’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৩৬)

আরও পড়ুন: উম্মতের জন্য নবীজির দুশ্চিন্তার ছয় কারণ

যারা শারীরিক সামর্থ্য বা যৌবন থাকা সত্ত্বেও ইবাদত করে না, তারা বোকা। তারা কি জানে না রাসুলুল্লাহ (স.) তাদেরকে নির্দিষ্টভাবে কী বলেছেন? নবীজি বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তাআলার আরশের ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না, তখন সাত প্রকারের মানুষ সেই আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। তাদের একজন হলো—‘এমন যুবক, যে তার প্রভুর ইবাদতে বেড়ে উঠেছে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৬০)

আর দাজ্জালের ফেতনার সময় ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকা হবে বড়ই কঠিন। হাদিসের ভাষ্যমতে, দাজ্জালের ফেতনা হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। সে যখন এসে পড়বে, তখন তো আর ইবাদতের কোনো সুযোগ থাকবে না। সেই দাজ্জালের ফেতনা হবে সর্বগ্রাসী। রাসুলুল্লাহ (স.)-ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। আর যদি অপেক্ষা করতে করতে কেয়ামতই চলে আসে, তাহলে তো সবই শেষ। 

সুতরাং, সুস্থ থাকতে, অবসর থাকতে নেক আমলে বিলম্ব করা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘দুটি নেয়ামত এমন, যাতে অনেক মানুষই ধোঁকায় পড়ে আছে—সুস্থতা ও অবসর। (সহিহ বুখারি: ৬৪১২) 

কখন কোন বিপদ এসে পড়ে কেউ জানে না। তাই নেক কাজে এগিয়ে যেতে হবে দ্রুততার সঙ্গে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর চিন্তা-চেতনাকে উন্নত করুন। নেক আমলে দ্রুতগামী হওয়ার এবং প্রতিযোগিতা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর