শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

রজব মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ইসলামে রজব একটি বিশেষ ও মহিমান্বিত মাস। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে রজব মাসের সম্পৃক্ততা রয়েছে। রজব মাসে পবিত্র মেরাজ সংঘটিত হয়। যা প্রিয়নবী (স.)-এর নবুয়ত লাভের পরবর্তী ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা। তাছাড়া রজব আসে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে। তাই রজব থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নেন মুমিনরা।

ইসলামে ১২ মাসের মধ্যে রজবসহ ৪ মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ বা সম্মানিত মাস বলা হয়। ‘রজব’ শব্দের অর্থ সম্মানিত। জাহেলিয়ার যুগে আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সম্মান করতেন। এজন্যে তারা এ মাসের নাম রেখেছিলেন ‘রজব’। এ মাসের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষায় তারা চলমান হানাহানি, মারামারি ও যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে দিতেন।


বিজ্ঞাপন


এই মাসের মর্যাদা বর্ণনায় কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, তার মধ্যে ৪টি (সম্মানিত হওয়ার কারণে) নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। (সূরা তওবা: ৩৬)

‘১২ মাসে এক বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক জিলকদ, জিলহজ, মহররম এবং চতুর্থটি হলো রজব, যা জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস।’ (সহিহ বুখারি: ২/৬৭২)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও হজরত কাতাদা (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে— ‘এ মাসগুলোতে আমল করলে অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক সওয়াব লাভ হয় এবং এ মাসগুলোতে কোনো গুনাহের কাজ করলে অন্য মাসের তুলনায় অধিক গুনাহ হয়।’ (তাফসিরে তাবারি: ৬/১৪৯-১৫০)

আরও পড়ুন: সর্বাধিক সওয়াব লাভের দোয়া


বিজ্ঞাপন


সম্মানিত চারটি মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, ‘এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদত করা সহজ হয় এবং এ মাসগুলোতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়।’ (আহকামুল কোরআন: ৩/১৬৩)।

আবু বকর বলখী (রহ.) বলেন, ‘রজব হচ্ছে ফসল রোপণের মাস, শাবান ফসলে পানি সেচ দেওয়ার মাস আর রমজান হলো ফসল তোলার মাস।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘রজব মাস ঠাণ্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস হলো মেঘমালার মতো আর রমজান মাস হলো বৃষ্টিতুল্য।’ (লাতায়েফুল মাআরেফ: পৃষ্ঠা-১৪৩)

রাসুলুল্লাহ (স.) রজব মাসকে খুবই গুরুত্ব দিতেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যখন রজব মাস শুরু হত, নবী কারিম (স.) এ দোয়াটি পড়তেন— اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্যে রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের হায়াত বৃদ্ধি করুন।’ (নাসায়ি: ৬৫৯; মুসনাদে আহমাদ: ২৩৪৬, আলমুজামুল আওসাত: ৩৯৩৯)

যদিও হাদিসটি সহিহ হিসেবে প্রমাণিত নয়। তবুও অর্থের সমস্যা না থাকায় আলেমদের মতে, এর ওপর আমল করা দোষণীয় নয় এবং সালাফরা (পূর্বসূরীরা) এই হাদিসের উপর আমল করতেন।

আরও পড়ুন: যে ৫টি আমল প্রতিদিন ১০০ বার করবেন

রজবের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ এসেছে হাদিস শরিফে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন আছে, যেগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না, অর্থাৎ অবশ্যই কবুল করেন। রাতগুলো হলো—জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭৯২৭)

কায়েস ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, ‘রজবের দশম তারিখে মহান আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন।’ (তাফসিরে কুরতুবি: ৯/৩৩২)

তবে বিশেষ কোনো আমলকে রজব মাসের জন্যে নির্দিষ্ট করে বেদআতে জড়িত হওয়া মুমিন মুসলমানের জন্যে শোভনীয় নয়। যেমন জাহেলি যুগে রজব মাসে মুশরিকদের মধ্যে স্বীয় দেবতা বা প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার একটি রেওয়াজ ছিল। একে ‘আতিরা’ বলা হতো। রাসুলুল্লাহ (স.) এই প্রথার মূলোত্পাটন করেছেন। স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন— ‘ইসলামে ‘ফারা’ (উট বা বকরির প্রথম বাচ্চা প্রতিমার উদ্দেশে) জবাই করার কোনো প্রথা নেই এবং ‘আতিরা’ও নেই। অর্থাৎ রজব মাসে প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার প্রথাও নেই।’ (সহিহ বুখারি: ৫৪৭৩)

রজব মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
নবুওয়াতের ১১তম বছরে ২৬ রজব দিবাগত রাতে মহান রাব্বুল আলামিন তার হাবিব রাসুলে কারিম (স.)-কে দাওয়াত করে এই জগৎ থেকে ঊর্ধ্বজগতে নিয়ে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান দেখিয়েছিলেন। এ মাসে নুহ (আ.)-এর জাতিকে আল্লাহ মহাপ্লাবনের মাধ্যমে ধ্বংস করেছেন। আর নুহ (আ.)-কে তার নির্মিত বিশাল জাহাজের মাধ্যমে রক্ষা করেছেন। তাফসিরে তাবারি ও বগভিতে আছে, নুহ (আ.) রজবের ১০ তারিখে কিস্তিতে আরোহণ করেছিলেন। দীর্ঘ ছয় মাস পর্যন্ত ওই কিস্তি তুফানের মধ্যেই চলছিল। পরিশেষে ১০ মুহররম আশুরার দিন ইরাকের জুদি পর্বতে জাহাজটি অবতরণ করে। (মাআরেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা-৬৩২)

আরও পড়ুন: পৃথিবীতে নবী-রাসুলদের আগমনের ধারা

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে সর্বপ্রথম রজব মাসেই ওহি অবতীর্ণ হয়েছিল। হিজরি পঞ্চম বর্ষের রজব মাসেই মুসলমানরা ‘হাবশা’র (বর্তমান ইরিত্রিয়া) উদ্দেশ্যে প্রথম হিজরত করেন। (উয়ুনুল আছর: ১/১৫২)
নবম হিজরির রজব মাসে ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তাবুক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল; যাতে মুসলমানরা ত্যাগ-নিষ্ঠা ও কোরবানির পরাকাষ্ঠা উপস্থাপন করেছিলেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম: ৫/১৯৫)
রাসুল (স.) হাবশার নীতিবান বাদশাহ ও মুসলমানদের সহযোগী নাজ্জাসির মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করেছিলেন। সেদিন তিনি ইসলামের ইতিহাসে একমাত্র গায়েবি জানাজা পড়েছিলেন।’ (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৫/৩৯)
১৪ হিজরিতে রজব মাসে মুসলমানরা সিরিয়ার রাজধানী বিজয় করে। ১৫ হিজরির রজব মাসে ইয়ারমুকের মর্মান্তিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৪/০৭)

আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সম্মানিত রজব মাসের তাৎপর্য বুঝার এবং সহিহ সুন্নাহমতো আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর