রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শাবান মাসে যে আমল করবেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২২, ০৪:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

শাবান মাসে যে আমল করবেন

রকতময় মাস শাবান। বছরের শ্রেষ্ঠ মাস রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে হিজরি চান্দ্রবর্ষের অষ্টম মাস শাবান। এ মাসে মহানবী (স.) যথাসাধ্য রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। অন্যদেরকেও এ ব্যাপারে নির্দেশ দিতেন।

শাবান মাস আসলে মহানবী (স.) রমজানের  অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) শাবান মাসের (দিন-তারিখ হিসাব রাখার) প্রতি অধিক লক্ষ রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (আবু দাউদ: ২৩২৫)


বিজ্ঞাপন


রমজান আগমনের বিষয়ে যেন সন্দেহ সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তিনি অন্যদেরকেও শাবানের হিসাব রাখার নির্দেশ দিতেন। ‘তোমরা রমজানের জন্যে শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো। (সিলসিলাতুস সহিহাহ, আলবানি, ২/১০৩)

নফল রোজার মাস
রাসুলুল্লাহ (স.) অধিকহারে নফল রোজা রাখতেন শাবান মাসে। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবী কারিম (স.)-কে শাবান মাসের মতো এত অধিক (নফল) রোজা অন্যকোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প কদিন ছাড়া বলতে গেলে সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন। (তিরমিজি: ৭৩৭)

হজরত আনাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, একবার রাসুলুল্লাহ  (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রমজান মাসের পরে কোন মাসের রোজা বেশি ফজিলতপূর্ণ? উত্তরে তিনি (স.) বলেন, শাবানের রোজা- রমজানের সম্মানার্থে। (তিরমিজি:৬৬৩)

শাবান মাসে বিশ্বনবী (স.) এত বেশি রোজা রাখতেন, মনে হতো যেন পরবর্তী মাস রমজানসহ টানা দুমাসই রোজা রাখতেন। তেমনই এক বর্ণনা উম্মে সালমা (রা.) হতে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “আমি মুহাম্মদ (স.)-কে শাবান ও রমজান মাস ছাড়া কখনো টানা দুমাস রোজা রাখতে দেখিনি। (আবু দাউদ: ২৩৩৬)


বিজ্ঞাপন


মধ্য শাবানে রোজা ও আমল
শাবান মাসে রোজা রাখার বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। এছাড়া ‘আইয়ামে বিজ’র রোজাও গুরুত্বপূর্ণ। (প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজাকে আইয়ামে বিজ’র রোজা বলে। এই রোজা রাখার ব্যাপারে হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।) পাশাপাশি দুর্বল সূত্রে বর্ণিত এক হাদিসে ১৫ তারিখে বিশেষভাবে রোজা রাখার কথা পাওয়া যায়। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—

‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) আসলে, তোমরা তা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং পরদিন রোজা রাখো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)

এ মাসে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত রয়েছে। কোরআনের ভাষায় এটিকে লাইলাতুম মুবারকা এবং আমাদের দেশীয় পরিভাষায় ‘শবে বরাত’ বলা হয়ে থাকে। এ রাতের ফজিলত বর্ণনায় মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন— 

আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

বিশেষ নিয়ম চালু করা বেদআত
জেনে রাখা উচিত যে, শবে বরাত ও শবে কদরের বিশেষ কোনো আমল নেই। বিশুদ্ধ মতানুসারে, স্বাভাবিক নিয়মের আওতাধীন ফরজ নামাজ মসজিদে আদায় করতে হবে। কিন্তু কোনো নফল ইবাদত-বন্দেগি করার ইচ্ছে হলে, তা নিজ ঘরে একাকী করবে। বিভিন্ন বর্ণনায়, এ রাতে দীর্ঘ নামাজ পড়া, দীর্ঘ সিজদা ও দোয়া-ইস্তেগফার করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। (শুআবুল ইমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২, ৩৮৩)
কিন্তু, নতুন কিছু ইবাদত হিসেবে চালু করলে বেদআত হবে।

সুতরাং, এসব নফল আমলের জন্য মসজিদে সমবেত হতে হবে না। দলে দলে কোথাও একত্রিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। এই রাতে এভাবে আমলের কথা হাদিসের কোথাও উল্লেখ নেই। সাহাবায়ে কেরামের সময়কালেও এমন রেওয়াজ ছিল না। অবশ্য, কোনো ধরনের আহ্বান ও কোনো ঘোষণা ছাড়া কেউ মসজিদে একত্রিত হয়ে গেলে ভিন্ন কথা। তখন তারা একাকী বা আলাদাভাবে ইবাদত করবে।

এক শ্রেণির যুবক এ রাতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। উচ্চৈঃস্বরে জিকির ও শব্দ করে। শরিয়তের দৃষ্টিতে এগুলো বর্জনীয়। কারণ, অন্যকে কষ্ট দিয়ে নফল ইবাদত করার কোনো বিধান শরিয়তে নেই।

শাবান মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব

ইসলামের ইতিহাসে শাবানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। যেমন—
১) মুসলমানরা দীর্ঘসময় নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর জিহাদের হুকুম এ মাসে নাজিল হয়।
২) কেবলা পরিবর্তন (বাইতুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে কাবাঘর) শাবান মাসে হয়েছে।
৩) মোনাফেকদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বনু মুসতালিকের যুদ্ধ এ মাসে সংঘটিত হয়। এছাড়াও বদরে সুগরা সংঘটিত হয় শাবান মাসে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মর্যাদাপূর্ণ শাবান মাসে সুন্নত অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর