রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মদিনায় মহানবী (স.) প্রথম যাঁর অতিথি 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

মদিনায় মহানবী (স.) প্রথম যাঁর অতিথি 

হিজরতের সময় মহানবী (স.) যেদিন মদিনায় প্রবেশ করছিলেন, মদিনাবাসীদের আনন্দের সীমা ছিল না। মদিনার অলিগলিতে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। নবীজিকে (স.) এক পলক দেখার জন্য রাস্তা-ঘাট ও বাড়ির ছাদে ভিড় জমিয়েছিল মানুষ। তাকবির ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠেছিল চারপাশ। শিশুরা গেয়ে ওঠেছিল ‘ওই দেখো, আমাদের আকাশে আজ পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে! আল্লাহর পথে আহ্বানকারী যতদিন আহ্বান করবে, ততদিন কৃতজ্ঞতা আদায় করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের মধ্যে প্রেরিত হে মহান রাসুল! আপনি এসেছেন এমন বিষয় নিয়ে, যা আমাদের অনুসরণ করতেই হবে।’ (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস: ২/২৪)

রাসুলুল্লাহ (স.) কুবায় চারদিন অবস্থান করে মদিনার উদ্দেশে বের হন। পথে জুমার নামাজ আদায় করে সন্ধ্যায় মদিনায় প্রবেশ করেন। প্রত্যেক সাহাবি আশা করছিলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর বাড়িতে অতিথি হবেন। নবীজির যাত্রাপথে প্রত্যেক সাহাবি তাঁর বাড়ি অতিক্রম করার সময় প্রিয়নবীকে (স.) সেখানে অবস্থানের অনুরোধ করছিলেন। এমনকি তাঁরা আবেগতাড়িত হয়ে তাঁর উটনির রশি ধরে গতিরোধ করতে চাচ্ছিলেন। তখন মহানবী (স.) বলেন, তোমরা উটনির পথ ছেড়ে দাও। সে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত। উটনি বনু নাজ্জারের বসতিতে এসে থেমে যায়। তখন তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ! এটাই হবে আমাদের মানজিল।’ এটা ছিল নবী (স.)-এর নানাদের বসতি। তখন বনু নাজ্জারের কিশোর-কিশোরীরা তাঁর সম্মানে আবৃতি করে—‘আমরা বনু নাজ্জার গোত্রের মেয়েরা, কত খুশি ও আনন্দের কথা যে মুহাম্মদ (স.) আমাদের প্রতিবেশী হয়েছেন।’ তাদের জবাবে নবী কারিম (স.) বলেন, ‘আল্লাহ জানেন আমি তোমাদের ভালোবাসি।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৮৯৯)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: যে কারণে হজযাত্রীদের টানে নবীজির মদিনা শহর

বনু নাজ্জারের লোকেরা মহানবী (স.)-কে অতিথি হিসেবে পেতে আবেদন শুরু করল। তখন আবু আইয়ুব আনসারি ও আসআদ ইবনে জুরারাহ (রা.) উভয়ে নবীজির উটনীর লাগাম ধরেন। কিন্তু আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর বাড়ি নিকটবর্তী হওয়ায় তাঁর আবেদন কবুল করা হলো। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা-১৮৩ ও ১৮৯)

আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর বাড়িটি ছিল দোতলা। রাসুলুল্লাহ (স.) নিচতলায় থাকতে মনস্থির করেন। কিন্তু নবীজি (স.)-কে নিচতলায় রেখে তিনি দোতলায় থাকবেন—এটা তাঁর মনে সায় দিচ্ছিল না। তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে দোতলায় অবস্থানের অনুরোধ করেন। জবাবে নবী (স.) বলেন, ‘আবু আইয়ুব, আমি আমার ও আমার সাক্ষাৎপ্রার্থীদের জন্য নিচতলায় থাকাকেই সুবিধাজনক মনে করি।’ সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) খুব বেশি সচ্ছল ছিলেন না। কিন্তু নবীজি (স.)-এর আদর-আপ্যায়নে, সেবা-যত্নে কোনো ত্রুটি রাখেননি। তিনি বলেন, “আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জন্য রাতের খাবার প্রস্তুত করে পাঠাতাম। কোনো খাবার ‘অবশিষ্ট’ ফিরলে আমি ও আমার স্ত্রী তা যেখানে নবীজি (স.) মুখ লাগিয়ে খেয়েছেন, সেখান থেকে খেয়ে নিতাম।” তিনি আরো বলেন, ‘একবার রাতে পানির পাত্র ভেঙে যায়, তখন আমি ও আমার স্ত্রী আমাদের পরিধেয় একমাত্র চাদর দিয়ে পানি মুছে নিলাম। যেন পানি গড়িয়ে নিচে পড়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কষ্টের কারণ না হয়।’ নবীজি (স.) আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর ঘরে সাত মাস অবস্থান করেন। (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা-২০২ ও ২০৪)

আরও পড়ুন: মুমিনের কলিজা শীতল হয় যেখানে


বিজ্ঞাপন


নবীপ্রেমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ আবু আইয়ুব আনসারি। নবীজির আতিথেয়তায় সদা সতর্ক ও সচেষ্ট থাকতেন তিনি। প্রসিদ্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন। একবার রাসুল (স.), আবুবকর সিদ্দিক (রা.) ও ওমর (রা). রোদ্রমুখর দুপুরে প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে বের হন। এরপর সবাই আবু আইয়ুব আনসারির বাড়িতে যান। আবু আইয়ুব (রা.) তখন পাশেই এক খেজুর বাগানে কাজ করছিলেন। রাসুল (স.)-এর আওয়াজ শুনেই দৌড়ে আসেন। অসময়ে মেহমান নিয়ে রাসুল (স.)-এর আগমনে তিনি খানিকটা বিস্মিত হন। দ্রুত তিনি খেজুর বাগানে গিয়ে একটি খেজুরের কাঁদি কেটে আনেন। কাঁদিতে কাঁচা, পাকা, আধা-পাকা সব ধরনের খেজুরে ভরপুর ছিল। রাসুল (স.) এ ধরনের কাঁদি আনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাই আপনি আপনার পছন্দের খেজুর গ্রহণ করুন। আমি জানি না, এই মুহূর্তে আপনার কোন ধরনের খেজুর বেশি পছন্দ। তাই সব ধরনের খেজুরের একটি কাঁদি কেটে এনেছি। এরপর তিনি একটা ছাগলছানা জবাই করলেন। স্ত্রীকে বলেন ভালো করে রুটি বানাতে। ছাগলের অর্ধেক রসালো করে রান্না করা হয়। বাকি অর্ধেক দিয়ে কাবাব তৈরি করা হয়। এখানেও তিনি রাসুল (স.)-এর পছন্দকে প্রাধান্য দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫১৯৩)

উল্লেখ্য, যেখানে আল্লাহর নির্দেশে উটনি বসে পড়েছিল সেখানেই প্রিয়নবীর অংশগ্রহণে নির্মাণ করা হয় মসজিদে নববি। জায়গাটির মালিক ছিল সাহল ও সুহাইল নামক দুই এতিম বালক। তারা ছিল নবীজি (স.)-এর মাতৃকুলের আত্মীয়। তিনি মসজিদ নির্মাণ করবেন জানার পর বালকদ্বয় জায়গাটি দান করে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু নবী (স.) উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করেই তা গ্রহণ করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) আবু বকর (রা.)-কে মূল্য পরিশোধের নির্দেশ দিলে তিনি তাদের জমির বিনিময়ে ১০ দিনার প্রদান করেন। মসজিদ নির্মাণের আগে জায়গাটিতে খেজুর শুকানো হতো। তবে সেখানে কিছু খেজুর ও অন্য গাছ ছিল, মুশরিকদের কয়েকটি কবরও ছিল। মহানবী (স.) গাছ কেটে, কবর ভেঙে স্থানটিকে সমতল করার নির্দেশ দেন। (সিরাতে মোস্তফা: ১/৪০৯)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর