রমজান মাসে প্রত্যেক নেক কাজের প্রতিদান অনেকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ইফতারের সময় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত আছে, যার সওয়াব ও ফজিলত অফুরন্ত। এই সুন্নতগুলো একদিকে রোজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আবার আলাদাভাবে আমলগুলো করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে, তাই এসব ব্যাপারে অবহেলা করা মুসলিম উম্মাহর জন্য মোটেও উচিত নয়।
ইফতার করানো বড় নেক আমল
বিজ্ঞাপন
অপর ভাইকে ইফতার করানো একটি বিশেষ নেক আমল। হাদিসমতে, যে আমলে রোজার সওয়াব অর্জিত হয়। জায়েদ ইবনে খালেদ আল-জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—
‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।’ (তিরমিজি: ৮০৭; ইবনে মাজাহ: ১৭৪৬; ইবনে হিব্বান: ৮/২১৬; সহিহ আল-জামে: ৬৪১৫)
সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার
অনতিবিলম্বে ইফতার করা মহানবী (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যতদিন মানুষ অনতিবিলম্বে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে’ (সহিহ বুখারি: ১৮২১; সহিহ মুসলিম: ১৮৩৮)। অন্য হাদিসে নবী করিম (স.) বলেছেন—
‘দ্বীন ততদিন পর্যন্ত ঠিক থাকবে, যতদিন পর্যন্ত মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কেননা, ইহুদি-খ্রিস্টানরা বিলম্বে ইফতার করে’ (আবু দাউদ: ২৩৫৫)
উল্লেখিত বর্ণনাসমূহ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর বা পানি খেয়ে অথবা যতটুকু ইফতার করলে তাৎক্ষণিক ক্ষুধা নিবারণ হয়, তা খেয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেওয়া উত্তম। নামাজ থেকে ফিরে এসে চাহিদামত আরো ইফতার নেওয়া যায়। তবে, ইবাদতে আলস্য বা অসুবিধা হতে পারে—অত বেশি খাওয়া জরুরি নয়।
বিজ্ঞাপন
খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার
পানি পান করে রোজা ভাঙলেও ইফতারের সুন্নত আদায় হয়ে যায়। তবে, খেজুর দিয়ে ইফতার করা মোস্তাহাব। কারণ, মহানবী (স.) খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতেন। আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (স.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’(তিরমিজি; রোজা অধ্যায়: ৬৩২)
উম্মতদেরও তিনি খেজুর দিয়ে ইফতার করতে উৎসাহিত করেছেন। সালমান ইবনে আমির (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—
‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয় পানি পবিত্র‘। (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমি; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২, পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩২)
ইফতারের আগে-পরে দোয়া
ইফতারের আগের মুহূর্তটি অতি মূল্যবান। এটি দোয়া কবুলের সময়। নবী করিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে ও নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৫২)। তিনি আরও বলেছেন—
‘ইফতারের সময় রোজাদের ন্যূনতম একটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৫৩)
হাদিস অনুযায়ী, ইফতারে বেশ আগে থেকে ইফতারি নিয়ে বসে দোয়া-মোনাজাতে মশগুল থাকা দরকার। ইফতারির আয়োজনে ব্যস্ত থেকে অনেকেই এ মোবারক সময়ের দোয়া থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।
ইফতারের আগে গুনাহ ক্ষমার এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া দরকার
يَا وَا سِعَ الْمَغْفِرَةِ اِغْفِرْلِىْ
উচ্চারণ: ‘ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলী’ অর্থ: হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। (শু‘আবুল ঈমান: ৩/৪০৭)
অতঃপর ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ’ বলে ইফতার শুরু করবে এবং ইফতারের পর নিম্নের দোয়া দুটি পড়বে:
১. اَللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلي رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিজকিকা আফতারতু।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করলাম। (আবু দাউদ: ১/৩২২)
২. ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْـتَلَّتِ العُرُوْقُ وَثَبَتَ الاَ جْرُ اِنْ شَاءَ الله تَعَا لى উচ্চারণ: যাহাবাযযমা ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহু তায়ালা। অর্থ: পিপাসা দূরিভূত হয়েছে, ধমনীসমূহ সতেজ হয়েছে, এবং ইনশাআল্লাহ রোজার সওয়াব নিশ্চিত হয়েছে। (আবু দাউদ: ১/৩২১)
৩. কারো দাওয়াতে ইফতারি করলে খাওয়ানো ব্যক্তির উদ্দেশে এই দোয়া পড়বেন—
اَفْطَرَعندكم الصائمون واكل طعامكم الابرار وصلت عليكم الملئكة উচ্চারণ: ‘আফতারা ইনদাকুমুস সায়িমুন ওয়া আকালা তাআমুকুমুল আবরার ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকা’। অর্থ: আল্লাহ করুন যেন রোজাদারগণ তোমাদের বাড়িতে রোজার ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় এবং ফেরেশতাগণ যেন তোমাদের উপর রহমতের দোয়া করে। (আসসুনানুল কুবরা, নাসায়ি: ৬:৮১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইফতারের মুবারক সময়ে করণীয় আমল যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

