ইসলামে বুদ্ধিজীবী কিংবা জ্ঞানীদের বিশেষ কদর রয়েছে। মানুষ বুদ্ধিমান বা বিবেকসম্পন্ন প্রাণী। বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়েই মানুষ এত উন্নত হতে পেরেছে। আবার মানুষের মধ্যে যাদের জ্ঞান-বুদ্ধি বেশি তাদের মর্যাদা অনেক বেশি। তাদেরকে বলা হয় সমাজের প্রাণ। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। সম্মানসূচক কথা রয়েছে হাদিসেও।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা জ্ঞানীদের মর্যাদা সম্পর্কে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দেবেন। আর যা কিছু তোমরা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে পূর্ণ অবহিত।’ (সুরা মুজাদালা: ১১)
বিজ্ঞাপন
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল ইলম (জ্ঞান) সম্পন্ন লোকেরাই তাঁকে ভয় করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তিশালী ও ক্ষমাশীল।’ ( সুরা ফাতির ২৮)
আরও পড়ুন: ‘জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে’
মহানবী (স.) জ্ঞানীদের বিশেষ মূল্যায়ন করতেন। যুদ্ধবন্দী অমুসলিম বুদ্ধিজীবীদের মুক্তিপণ হিসেবে ভাষা শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতেন। বদরযুদ্ধে যেসব অমুসলিম বন্দি হয়ে মুক্তিপণ দিতে পারেনি, তাদের এ শর্তে মুক্তি দিয়েছিলেন যে তারা প্রত্যেকে ১০ জন মুসলমানকে আরবি ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ শেখাবেন।
ইসলামে নফল ইবাদতের চেয়েও জ্ঞানচর্চার গুরুত্ব বেশি। এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আবেদগণের ওপর আলেমদের মর্যাদা পূর্ণিমায় তারকাগুলোর ওপর চাঁদের মর্যাদার অনুরূপ।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মেশকাত: ২১২ ‘ইলম’ অধ্যায়)
বিজ্ঞাপন
একজন বিজ্ঞলোক বা আলেম দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে গেলে মানুষ যেমন দিশেহারা হয়ে যায়, ঠিক তেমনি কোনো আলেম চলে গেলে পুরো দেশ ও সমাজ অচল হয়ে পড়ে। যেহেতু ওলামায়ে কেরাম না থাকলে দীনের জ্ঞান চর্চা হবে না, মনুষ্যত্ব ভুলে গিয়ে মানুষ চতুষ্পদ জন্তুতে পরিণত হয়ে যাবে, সেজন্যে একজন প্রকৃত আলেমকে দান করা হয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা। উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার আদর্শের ওপর নাই, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের আলেমদের প্রাপ্য মর্যাদা প্রদান করে না।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২১৪৩)
আরও পড়ুন: আলেমের মর্যাদা ও বিদ্বেষপোষণের পরিণতি
হাদিসে মহানবী (স.) মুসলমানদের জ্ঞান সাধনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘শিক্ষিত সম্প্রদায় নবীর উত্তরাধিকারী।’ জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, জ্ঞানহীন মানুষ অন্যায়ভাবে কোনো কাজ সমাধা করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনে। তাই মহান আল্লাহ জ্ঞানী ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত সম্মান ও তাদের অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বলা আছে, ‘তোমরা যদি না জানো তবে আলেমদের জিজ্ঞাসা করো।’ (সুরা নাহল: ৪৩)
আলেমের জন্য বড়ই সুসংবাদ যে, তার জন্য সকলেই ক্ষমা প্রার্থনা করে। হাদিসে এসেছে, ‘যারা লোকদের ভাল কথা শিক্ষা দেয়, তাদের ওপর আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতাগণ এবং আসমান জমিনের সমস্ত মাখলুক— এমনকি পিঁপড়া নিজ গর্তে এবং মাছ (পানির ভিতরে থেকে) রহমতের দোয়া করে। (তিরমিজি: ২৬৮৫; জামিউল মাসানিদ ওয়াস সুনান: ১১০৬২; আল-মুসনাদুল জামে: ৫৩২২)
সমাজের শিক্ষকশ্রেণিই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবী হয়ে থাকে। ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা অপরিসীম। রাসুল (স.) নিজেও ছিলেন একজন শিক্ষক, যিনি গোটা বিশ্ববাসীকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ (ইবনে মাজাহ: ২২৯)
আরও পড়ুন: ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা
শিক্ষকসহ জ্ঞানচর্চা ও প্রসারের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার: ৯)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা: ২৬৯)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জ্ঞানার্জন করার এবং কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত ইলম অর্জনের মর্যাদা ও ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

