সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বরকত উঠে যাওয়ার মূল কারণ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২২, ০৬:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

বরকত উঠে যাওয়ার মূল কারণ

ওয়াজ মাহফিল, মজলিস বা ধর্মীয় আলাপ আলোচনায় একটি আমল নিয়ে আলোচনা খুব কম-ই হয় এবং যে আমলটি এই যুগে পালন করা খুব কঠিন হয়ে গেছে। সেটি হলো— রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো। খুব অল্পসংখ্যক মানুষ ছাড়া সবাই রাতে দেরিতে ঘুমান। ফলে ফজরের নামাজ সময়মতো পড়া হয় না, আবার ভোর সময়টির বরকত থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। বর্তমান মুসলিম সমাজ সময়ের বরকত হারিয়ে ফেলার অন্যতম কারণ এটি।

দিনের শুরুকে বরকতময় করার জন্য রাসুল (স.) আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছেন, اللَّهُمَّ بَارِكْ لأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: উম্মতের জন্য নবীজির দুশ্চিন্তার ছয় কারণ

বর্ণনাকারী বলেন, ‘এ জন্যই রাসুল (স.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। আর সাখর (রা.) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন।’ (আবু দাউদ: ২৬০৬)

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন, أتنام في الساعة التي تُقسَّم فيها الأرزاق؟ ‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (জাদুল মাআদ: ৪/২৪১)

উরওয়া (রহ.) বলেন, إِنِّي لَأَسْمَعُ بِالرَّجُلِ يَتَصَبَّحُ فَأَزْهَدُ فِيهِ ‘আমি যখন কারো সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা: ৫/২২২)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ব্যবসায় সফল হতে চাইলে নবীজির ৭ নির্দেশনা মানুন

খেয়াল করলে দেখবেন, যে সমাজে ৫০০ লোকের বাস, সে সমাজের মাত্র ২০-৩০ জনের বেশি ফজরের জামাতে উপস্থিত হন না। ঘুম থেকে উঠেন ৮টা ৯টার পর। এর চেয়ে হতভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে! ওরা নিজের জন্য কী করবে, আর উম্মাহর কল্যাণে কী করবে? ফজরের নামাজের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি দুটি শীতল সময়ে (ফজর ও আসর) সালাত আদায় করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭৪, সহিহ মুসলিম: ৬৩৫/২১৫)

বিখ্যাত তাবেয়ি আবু বকর বিন উমারাহ তাঁর পিতা রুআয়বাহ থেকে বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘এমন কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের আগের এবং সূর্যাস্তের আগের অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামাজ আদায় করে।’ (মুসলিম: ১৩২২)

প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইবলিস জানে- রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করলেই মুসলমান সফল হয়ে যাবে। তাই এটা করতে দেওয়া যাবে না। এজন্য দেখা যায়, মুসলিম দেশগুলোতে রাতে মানুষের কাজ বেড়ে যায়। অথচ, নবী কারিম (স.)-এর সুন্নতের বাইরে কোনো কল্যাণ থাকতে পারে না। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ আছে, যারা মুসলমান না। কিন্তু সুন্নতের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তারা উন্নতি করছে। যেমন জাপানের শহরাঞ্চলের মানুষ খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়, ওদিকে ভোরে ঘুম থেকে ওঠে পড়ে। 

আরও পড়ুন: ভালো উপার্জনের পরও জীবনে বরকত না থাকার কিছু কারণ

‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ফজরের শপথ, ভোরের শপথ করেছেন—‘ওয়াল ফাজরি ওয়ালায়ালিন আশর’, ‘ওয়াসসুবহি ইজা তানাফফাস’। এতেই ফজরের গুরুত্ব ফোটে ওঠে। মহান আল্লাহর কাছে ফজর বা ভোরের গুরুত্ব কত বেশি হলে তিনি শপথ করেন! শপথ করে তিনি আমাদেরকে বুঝিয়েছেন যে, এই সময়ের গুরুত্ব আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক বেশি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বোঝার তাওফিক দান করুন। দ্রুত ঘুমানোর জন্য সচেতনতা দান করুন এবং ভোরের বরকতময় সময়কে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর