রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

উম্মতের জন্য নবীজির দুশ্চিন্তার ছয় কারণ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ জুন ২০২২, ০৯:২০ এএম

শেয়ার করুন:

উম্মতের জন্য নবীজির দুশ্চিন্তার ছয় কারণ

রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে বিভিন্ন ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য অবিরাম চেষ্টা করেছেন। কোনটি নেক আমল, কোনটি নাফরমানি, সে সম্পর্কে সন্তানের মতো করে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। উম্মতের প্রতি নবীজির ভালোবাসা পরিমাপ করে শেষ করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন—

لَقَدۡ جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ عَزِیۡزٌ عَلَیۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِیۡصٌ عَلَیۡکُمۡ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ

‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে একজন রাসুল এসেছেন; (তোমাদের জন্য তাঁর মায়া এতইবেশি যে) তোমাদেরকে যা কিছু কষ্ট দেয়, তা তাঁর কাছে খুবই কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা তাওবা: ১২৮)

রাসুলুল্লাহ (স.) জানতেন, কিছু ফেতনায় জড়িত হয়ে উম্মত বিপথগামী হবে। ফলে তাদের ঈমান সুরক্ষা অসম্ভব হয়ে ওঠবে। তাই তিনি এত দুশ্চিন্তা করতেন। সেরকম ছয়টি বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলো।

১) নারী

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, অবশ্যই দুনিয়াটা মিষ্টি ফলের মতো আকর্ষণীয়। আল্লাহ তাআলা সেখানে তোমাদের প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। তিনি লক্ষ করেন, তোমরা কীভাবে কাজ করো? তোমরা দুনিয়া ও নারী জাতি থেকে সতর্ক থেকো। কেননা বনি ইসরাঈলের মধ্যে প্রথম ফেতনা নারীকেন্দ্রিক ছিল। (সহিহ মুসলিম: ৬৮৪১)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমি আমার (ইন্তেকালের) পর পুরুষদের জন্য নারীদের ফেতনার চেয়ে বেশি কোনো ফেতনা রেখে যাইনি। (সহিহ মুসলিম: ৬৮৩৮)

২) বাকপটু মুনাফিক

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, এই উম্মতের জন্য যাকে আমি সবচেয়ে ভয়ংকর ও বিপজ্জনক মনে করি এবং সবচেয়ে ভয় করি, সে হচ্ছে অতিশয় বাকপটু মুনাফিক। (মুসনাদে আহমদ: ৩১০)

৩) পথভ্রষ্ট নেতা

প্রিয়নবী (স.) তাঁর উম্মতের ঈমানরক্ষার ক্ষেত্রে পথভ্রষ্ট ও আদর্শচ্যুত নেতাদের ভয় করতেন। হজরত সাওবান (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে পথভ্রষ্টকারী নেতাদের ভয় করি। তিনি আরো বলেন, আমার উম্মতের একদল আল্লাহর হুকুম (কেয়ামত) আসার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সর্বদা বিজয়ী বেশে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের অপমানিত করতে চাইবে তারা তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। (জামে তিরমিজি: ২২২৯)

৪) দাজ্জালের ফেতনা

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমি তোমাদের দাজ্জালের ফেতনার ব্যাপারে সাবধান করছি, যেমন প্রত্যেক নবী তার সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে সাবধান করেছেন। এমনকি নুহ (আ.)-ও তার সম্প্রদায়কে এ থেকে সাবধান করেছেন। তবে এ সম্পর্কে আমি তোমাদের এমন একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছি, যা কোনো নবী তার সম্প্রদায়কে বলেননি। তা হলো এই যে, তোমরা জেনে রাখো, দাজ্জাল কানা হবে। আল্লাহ তাআলা অন্ধ নন। (সহিহ মুসলিম: ৭২৪৬)

৫) গোপন শিরক

গোপন শিরক বা শিরকে খফি হচ্ছে- লোক দেখানোর জন্য ইবাদত। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, আমাদের নিকট রাসুল (স.) বের হলেন, আমরা তখন দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। 

তিনি (স.) বলেন, আমি কি তোমাদের এমন বিষয় অবহিত করব না, যা আমার মতে তোমাদের জন্য দাজ্জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর? বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বলেন, গোপন শিরক। মানুষ নামাজ পড়তে দাঁড়ায় আর অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুন্দরভাবে নামাজ পড়ে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২০৪)

৬) দুনিয়ার মোহ

রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের নিয়ে দারিদ্র্যের ভয় করি না। কিন্তু এ আশঙ্কা করি যে, তোমাদের ওপর দুনিয়া এমন প্রসারিত হয়ে পড়বে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে। (সহিহ বুখারি: ৩১৫৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত ফেতনা থেকে রক্ষা করুন। সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।  

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর