শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দুঃখ হতাশা বিষণ্ণতা থেকে মুক্তির আমল

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ০৬:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

দুঃখ হতাশা বিষণ্ণতা থেকে মুক্তির আমল

দুনিয়া সুখের ও প্রশান্তির জায়গা নয়। এখানে দুঃখ আসতেই পারে। মানবজীবনের সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,  ‘নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে।’ (সুরা বালাদ: ৪) তবে দুঃখের কারণে হা-হুতাশ করা কিংবা বিষণ্ণতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বরং দুঃখ-দুর্দশায় আল্লাহর ওপর ভরসা, ধৈর্যধারণ করা ও দোয়া করার শিক্ষা দেয় ইসলাম।

হতাশা ও বিষণ্ণতারোধে মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের বিকল্প নেই। এতে মানসিক প্রশান্তি নেমে আসে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: ৩) সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ায় সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করতে জানে তার জন্য কোনো চিন্তা নেই। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (সহিহ মুসলিম: ২/৩৪১)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: পথভ্রষ্ট জীবন থেকে মুক্তির দোয়া 

দুঃখ-হতাশা, অভাব-অনটন, বিপদ-আপদে তাকদিরের ওপর বিশ্বাস থাকলে মানসিক চাপে ভুগতে হয় না। তাই মানসিক চাপের সময় মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাকদিরের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় রয়েছে মানসিক প্রশান্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ’আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস: ১০৭)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি ইহা সংঘটিত করার আগেই ইহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ।’ (সুরা হাদিদ: ২২)

এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, আল্লাহর নির্ধারিত বিষয়গুলো সংঘটিত হবেই। এসব বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই, যদি তিনি ইচ্ছা না করেন। তাই তাকদিরের ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে এবং তাঁর কাছে দোয়া করতে হবে।  প্রিয়নবী (স.) যেকোনো ধরণের চিন্তা, উৎকণ্ঠায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার ছোট্ট একটি দোয়া নিয়মিত পড়তে বলেছেন। দোয়াটি হলো— حَسْبِيَ اللَّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ ‘হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াককালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।’ অর্থ: আল্লাহ তাআলাই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তাঁরই ওপর আমি ভরসা করি। তিনিই মহা আরশের অধিপতি।'


বিজ্ঞাপন


হজরত আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি (পেরেশানি ও উৎকণ্ঠায়) এ দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যায় সাত বার পড়বে, ওই ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও পরকালের সব পেরেশানি থেকে হেফাজত করবেন।' (সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮৩, কানজুল উম্মাল: ৫০১১)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে শত্রুর মনে ভয় সৃষ্টি হয়

চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুল (স.) আরেকটি দোয়া পড়তেন বিশেষভাবে। দোয়াটি হলো- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخلِ وَالجُبنِ، وَضَلَعِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আজঝি ওয়াল কাসালি ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।’ অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি: ২৮৯৩)

এছাড়াও দুঃখ, হতাশায় মানসিক প্রশান্তির জন্য কোরআন তেলাওয়াত অন্যতম একটি আমল। রাসুল (স.) কোরআন পাঠের মাধ্যমে প্রশান্তি অনুভব করতেন। কোরআনকে হৃদয়ের বসন্ত করে দেওয়ার জন্য তিনি আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করতেন—اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنْ تَجْعَلَ القُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجَلاَءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা আন তাজ-আলাল কুরআ-না রাবিআ ক্বালবি, ওয়া নূরা সদরি, ওয়া জালা-আ হুযনি ওয়া যাহা-বা হাম্মি।’ অর্থ: হে আল্লাহ, তোমার কাছে চাই, যেন তুমি কোরআনকে করে দাও আমার হৃদয়ের বসন্ত (আগ্রহ-ভালোবাসা); আমার বক্ষের জন্য আলো; আমার দুশ্চিন্তার নির্বাসন এবং আমার পেরেশানি দূরকারী। (মুসনাদ আহমদ: ৩৭১২; সিলসিলা সহিহাহ: ১৯৯)

আরও পড়ুন: বিপদ-মসিবতে দোয়া ইউনুস পড়ার উপকারিতা

বিপদাপদের জন্য দোয়া ইউনুস পাঠ করতে বলেছেন নবীজি (স.)। তিনি বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। দোয়াটি হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন।’ অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি: ৩৫০৫)

যারা নামাজে মনোযোগী তাদের ওপরও দুঃখ হতাশা ভর করতে পারে না। তাই নামাজে মনোযোগী হতে হবে। রাসুল (স.) বলতেন, ‘হে বিলাল, (আজানের মাধ্যমে) নামাজ কায়েম করো। আমরা নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করো।’ (আবু দাউদ: ৪৯৮৫-৪৯৮৬)

এছাড়াও আল্লাহর জিকির সকল দুশ্চিন্তার একটি মহৌষধ। আল্লাহর জিকিরে মুমিনের অন্তরে প্রশান্তি নেমে আসে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘...জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই শুধু হৃদয়গুলো স্থির-প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ: ২৮)

মনে রাখতে হবে- সবরকম বিপদ-মসিবত ও দুঃখ দুর্দশায় মুমিন ব্যক্তিকে ধৈর্যের প্র্যাকটিস করতে হবে। ধৈর্য ধারণ করতে পারলে সব অবস্থায় প্রসন্ন থাকা যায়। খুব পেরেশানি ও সঙ্কীর্ণ অবস্থাতেও জীবন থেকে হতাশ হতে হয় না। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের জায়গায় জায়গায় ধৈর্যধারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনের এক জায়গায় এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা বাকারা: ১৫৩) 

যেকোনো খারাপ সময়ে বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন নির্ভরযোগ্য নেককার ব্যক্তিদের পরামর্শগ্রহণেরও গুরুত্ব রয়েছে। আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব পরিহার করে পরামর্শভিত্তিক কাজ করা ইসলামের শিক্ষা। আর অভিজ্ঞদের চিন্তার প্রভাবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাও গভীর হয়, সমৃদ্ধ হয়। পেরেশানি, মানসিক টেনশন তো বহু দূরে পালায়। পরামর্শগ্রহণের গুরুত্বের কারণে প্রিয়নবী (স.) বেশি বেশি পরামর্শ করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.) থেকে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে বেশি পরামর্শকারী অন্য কাউকে দেখিনি। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪৮৭২)

হাদিস শরিফে আরও এসেছে, ‘যে ব্যক্তি পরামর্শ কামনা করে সে অকৃতকার্য হয় না।’ আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যেকোনো দুঃখ-দুর্দশায় হতাশ বা বিষণ্ণ না হয়ে উপরোক্ত আমলগুলো যথাযথ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর