শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বিপদ-মসিবতে দোয়া ইউনুস পড়ার উপকারিতা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১০:৪০ এএম

শেয়ার করুন:

বিপদ-মসিবতে দোয়া ইউনুস পড়ার উপকারিতা

দোয়া ইউনুস-এর ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। যে কোনো বিপদ-মসিবত, দুশ্চিন্তা-পেরেশানি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া ইউনুস পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর আমল। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ইউনুস (আ.) নদীতে বিশালাকৃতির একটি মাছের পেটে বন্দি হন। এই মহাবিপদে তিনি মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া পড়েন তা-ই দোয়া ইউনুস। এই দোয়ার বরকতে আল্লাহ তাঁকে মসিবত থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

দোয়া ইউনুস হলো— لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বলিমিন।’ অর্থ: ‘তুমি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।’

আল্লাহ তাআলা এ ফজিলতপূর্ণ দোয়াটি পবিত্র কোরআনে তুলে ধরেন এভাবে—‘আর স্মরণ করুন জুন নুন (মাছ ওয়ালা ইউনুস)-এর কথা। তিনি রাগ করে চলে গিয়েছিলেন। অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধরতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে (মাছের পেটে থাকা অবস্থায়) এ কথা বলে আহ্বান করলেন- ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বলিমিন।’ অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তামুক্ত করে দিলাম। আমি এভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৭)

দোয়া ইউনুস পড়ার নিয়ম হলো- একান্ত বিনয় ও নম্রতা, একাগ্রতা, পূর্ণ আন্তরিকতার মাধ্যমে যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এ দোয়া পাঠের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা সংখ্যা নেই। তবে যত বেশি পড়া যায়, তত ভালো। দোয়া ইউনুস পড়ার পর আল্লাহর কাছে কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য নিয়ে যেকোনো দোয়া করলে, আশা করা যায়- মহান দয়ালু দাতা তা কবুল করবেন। এক্ষেত্রে দোয়া কবুলের শর্তাবলি ও আদব ঠিক থাকতে হবে।

পড়ুন: যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ খুশি হন

ইউনুস (আ.) ছিলেন একজন সম্মানিত নবী। কোরআনের ১০ নম্বর সুরার নামকরণ তাঁর নামে। অন্যান্য নবীদের মতো তারও সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল- আল্লাহর প্রতি তাঁর জাতিকে আহ্বান করা। কিন্তু কাজটি অতটা সহজ ছিল না। ইউনুস (আ.)-এর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা ছেড়ে অদ্বিতীয় আল্লাহর অনুগত হতে তিনি তাদের আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু তারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি। এতে নিরাশ হয়ে তিনি তাদের ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। (তুরুকুল ইসলাম, লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা; ২০-০৮-২০২০)


বিজ্ঞাপন


তিনি তার জাতিকে আল্লাহর গজবের খবর দেন এবং আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা না করে অন্যত্র চলে যেতে রওনা হন। পথিমথ্যে সম্মুখে সমুদ্র পড়লে, তা পাড়ি দেওয়ার জন্য তিনি একটি জাহাজে ওঠেন। জাহাজটি মাঝসমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। তখন জাহাজের চালক ধারণা করে যে, জাহাজে কোনো অপরাধী আছে, যে জাহাজের জন্য বিপাক ডেকে এনেছে। পরে সেকালের নিয়ম অনুযায়ী লটারির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু লটারিতে বারবার ইউনুস (আ.)-এর নাম ওঠে। তখন বাধ্য হয়ে তাঁকে সমুদ্রে ফেলে দিলে জাহাজটি বিপাক থেকে রক্ষা পায়, আর একটি বিরাট মাছ তাকে গিলে ফেলে। (ফাতহুল বারি, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা-২১২)

ইউনুস (আ.) সেই বৃহদাকার মাছের উদরে অক্ষত অবস্থায় ৪০ দিন ছিলেন। মূলত এটি ছিল আল্লাহর পরীক্ষা। ভীষণ কষ্টের মধ্যে থেকে তিনি আল্লাহর আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তখন আমি তার (ইউনুসের) ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদের নাজাত দিয়ে থাকি।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিপদ-মসিবতে যথাযথভাবে দোয়া ইউনুস পাঠ করার তাওফিক দান করুন। যেভাবে তিনি হজরত (আ.)-কে বিপদ থেকে হেফাজত করেছিলেন সেভাবে দুনিয়াবাসিকে যাবতীয় বিপর্যয় থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর