রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কর্তৃপক্ষের কাছে কারো দোষ প্রকাশ, ইসলাম কী বলে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৮:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

কর্তৃপক্ষের কাছে কারো দোষ প্রকাশ, ইসলাম কী বলে

ইসলামে দায়িত্বশীলতা ও আমানত পূর্ণাঙ্গভাবে রক্ষা করা ফরজ। এক্ষেত্রে অবহেলা করলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কর্মীর কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ কাজ বুঝে না পেলে পরকালে অপরাধী হিসেবে শাস্তি পেতে হবে। নবীজি (স.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যককে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি: ৮৪৪; তিরমিজি: ১২৪)

তবে, অনুমান করা এবং অনুমানের ভিত্তিতে দোষচর্চা করা অপরাধ। ইরশাদ হয়েছে—


বিজ্ঞাপন


‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাকো; কারণ কোনো কোনো অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে, বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে করো। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো; নিশ্চয় আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত: ১২)

পবিত্র কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী, অন্যের ব্যক্তিগত দোষ কারো কাছে প্রকাশ করা, দোষ খোঁজার চেষ্টা করা, এমনকি খারাপ অনুমান করাও অপরাধ। তাই কারো ব্যক্তিগত তথ্য বা দোষ প্রকাশের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ব্যক্তিগত দোষের বিচার করতে আদালতকেও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কেউ কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেশ করার পর যথাযথ প্রমাণ করতে না পারলে উল্টো তার শাস্তির বিধান রয়েছে ইসলামে। 

ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সাধ্বী রমণীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদের ৮০টি বেত্রাঘাত করবে। কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; এরাই সত্যত্যাগী।’ (সুরা নুর: ৪)

আরও পড়ুন: অপবাদের শাস্তি ভয়ংকর


বিজ্ঞাপন


ভাইয়ের প্রতি সুধারণা পোষণ করার শিক্ষা দেয় ইসলাম। তাই মুমিনের স্বভাব হওয়া উচিত ভাইয়ের প্রতি সুধারণা পোষণ করা, দায়িত্ব অবহেলার পর্যায়ে পড়ে না- এমন ব্যক্তিগত দোষ গোপন করা। হাদিসে দোষ গোপন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন করে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন করবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২৫)

তবে, কখনও মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে, সমাজ ও জাতির স্বার্থে অপরাধের তথ্য প্রকাশের প্রয়োজন হয়। ইসলামি আইন ও বিচার ব্যবস্থা অনুসারে কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে হবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা সরাসরি বিষয়টির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাছে। সাধারণ সমাজে তা প্রচার করা যাবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন শান্তি বা শঙ্কার কোনো সংবাদ তাদের কাছে আসে, তখন তারা তা প্রচার করে থাকে। যদি তারা তা রাসুল বা তাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী তাদের গোচরে আনত, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে, তারা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তোমাদের অল্পসংখ্যক ছাড়া সবাই শয়তানের অনুসরণ করত।’ (সুরা নিসা: ৮৩)

আরও পড়ুন: শয়তান থেকে সারাদিন নিরাপদ থাকার উপায়

জায়িদ ইবনে ওয়াহাব (রহ.) বলেন, ‘একবার এক ব্যক্তিকে ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে এনে বলা হলো- এই সেই লোক, যার দাড়ি থেকে মদ টপকে পড়ছে।’ 

ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমাদের জন্য গোয়েন্দাগিরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যদি প্রকাশ্যে কোনো অন্যায় আমাদের সামনে ধরা পড়ে, তাহলে এর জন্য আমরা তাকে ধরব।’ (আবু দাউদ: ৪৮৯০)

হাদিসের ভাষ্যমতে, রাষ্ট্র বা কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনে প্রকাশ্য আলামতের ভিত্তিতে আটক করার বা শাস্তি দেওয়ার অবকাশ আছে, তবে অকারণে কারো পেছনে লাগা রাষ্ট্র বা কর্তৃপক্ষেরও উচিত নয়। কেননা রাষ্ট্র যদি কারো পেছনে লাগে, তাহলে ব্যক্তির বাঁচার উপায় থাকে না। তাঁর জীবন সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। তাই অযথা এমন কাজ করা গুনাহের কাজ। রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের কথা গুপ্তভাবে শুনল; অথচ সে তাদের কথাগুলো শুনুক তারা তা পছন্দ করছে না অথবা তারা তার অবস্থান টের পেয়ে তার থেকে দূরে পালিয়ে যাচ্ছে, কেয়ামতের দিন এজন্য তার কানে সিসা ঢেলে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ৭০৪২) 

আরও পড়ুন: জাহান্নামের আগুন থেকে পরিবারকে বাঁচাবেন যেভাবে

মনে রাখতে হবে, সমাজে প্রচারিত বহু তথ্যই ভিত্তিহীন হয়ে থাকে। তাই কোনো তথ্য প্রচার পেয়ে গেলেই তার পেছনে লাগা এবং তা আরও প্রচার করা উচিত নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তারা এটা শুনল, তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা আপন লোকদের সম্পর্কে কেন ভালো ধারণা করল না এবং বলল না, এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ।’ (সুরা নুর: ১২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে অন্যের দোষ প্রকাশের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর