রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

জাহান্নামের আগুন থেকে পরিবারকে বাঁচাবেন যেভাবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

জাহান্নামের আগুন থেকে পরিবারকে বাঁচাবেন যেভাবে

মুমিন কখনও পরকালের কঠিন শাস্তি সম্পর্কে বেখবর হতে পারেন না। নিজে যেমন দীনি জীবন-যাপন করবেন, পরিবারকেও দীনি শিক্ষা দিয়ে পরিচালনা করবেন। আবার অনেককে দেখা যায়, নিজে দীনের সকল বিধি-নিষেধ মেনে চলেন ঠিক, কিন্তু প্রিয়জনের গুনাহের কাজ দেখেও চুপ থাকেন এবং গুনাহ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান না। এটি কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? পরিবার জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে দেখেও চুপচাপ থাকা মানে তো তাকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেওয়া। অথচ মানুষ দুনিয়াতে প্রিয়জনের ওপর সামান্য টোকাও সহ্য করতে পারেন না।

জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদের প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদের পাল্টে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আস্বাদন করে আজাব। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা: ৫৬)

এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে মুআজ (রা.) বলেছেন যে, তাদের শরীরের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন সেগুলো পাল্টে দেওয়া হবে এবং এ কাজটি এত দ্রুতগতিতে সম্পাদিত হবে যে এক মুহূর্তে শতবার চামড়া পাল্টানো যাবে। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘আগুন তাদের চামড়াকে এক দিনে সত্তর হাজারবার খাবে। যখন তাদের চামড়া খেয়ে ফেলবে, অমনি সেসব লোককে বলা হবে, তোমরা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাও। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো পূর্বের মতো হয়ে যাবে।’ (ইবনে কাসির:  ১/৫১৪)

আরও পড়ুন: জান্নাত যাদের জন্য ওয়াজিব

জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটা তো লেলিহান অগ্নি, যা গায়ের চামড়া খসিয়ে দেবে’ (সুরা মাআরিজ: ১৫-১৬)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তাদের মাথার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা দিয়ে তাদের চামড়া ও পেটের ভেতর যা আছে তা বিগলিত করা হবে’ (সুরা হজ: ১৯-২০)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যারা আমার আয়াত প্রত্যাখ্যান করে, আমি তাদের অগ্নিতে দগ্ধ করবই। যখনই তাদের চামড়া দগ্ধ হবে তখনই এর স্থানে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করতে পারে।’ (সুরা নিসা: ৫৬)

তাই জাহান্নামের আগুন থেকে শুধু নিজে বাঁচার চিন্তা করলে হবে না, পরিবারবর্গকেও বাঁচাতে হবে। ইরশাদ হয়েছে- ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব ও নির্মম হৃদয়ের ফেরেশতা, যারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না।’ (সুরা তাহরিম: ৬)

এ আয়াতে মুসলমানদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছে তারা যেন নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে। জাহান্নামে নিয়োজিত ফেরেশতাদের আচরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে- তারা অত্যন্ত কঠোর ও দয়ামায়াহীন এবং তারা তাদের প্রতিপালকের আদেশ পালন করতে কোনোরকম শৈথিল্য প্রদর্শন করবে না। মহান আল্লাহর এমন হুঁশিয়ারির পর পরিবারের কর্তার দায়িত্ব হলো পরিবারের সব সদস্য যেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে সাধ্যমতো শিক্ষা দেওয়া এবং সেভাবে তাদের তৈরি করা। 

পড়ুন: যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম

পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো তাদের সন্তানকে হজরত লোকমানের মতো উপদেশ দেওয়া, যা তিনি তার ছেলেকে দিয়েছিলেন। হজরত লোকমানের সেই উপদেশ মহান আল্লাহ পছন্দ করেছেন। পবিত্র কোরআনে সুরা লোকমানের ১৩ থেকে ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা আমাদের জন্য সুন্দরভাবে বিবৃত করেছেন। সংক্ষেপে তা হলো- ‘আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করা, পিতা-মাতা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করতে পীড়াপীড়ি করলে তা না মানা, পাপ-পুণ্য যদি সরিষার দানার সমানও হয় আল্লাহ তা-ও উপস্থাপিত করবেন, সালাত কায়েম করা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা, বিপদে ধৈর্য ধারণ করা, জমিনে উদ্ধতভাবে চলাফেরা না করা, জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা এবং নিচুস্বরে কথা বলা। 

পরিবারের কর্তারা পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে উপরোক্ত বিষয়গুলোর ওপর অভ্যস্ত করে তুলবেন। অন্যথায় পরিবারের কর্তা নিজে সঠিক পথে থাকা সত্ত্বেও কেয়ামতের দিন জবাবদিহির সম্মুখীন হবেন। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীন লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও দায়িত্বশীল, তাকে তার অধীন লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ি এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়ক, তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’ (বুখারি : ৮৯৩, ৫১৮৮)

জাহান্নামের সর্বনিম্ন শাস্তি কতটা ভয়ঙ্কর হবে—সে সম্পর্কে নোমান ইবনে বাশির (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তিকে জাহান্নামিদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি প্রদান করা হবে তার পায়ের তালুর নিচে দুটি জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা হবে। তাতে তার মগজ পর্যন্ত টগবগ করে ফুটতে থাকবে।’ (তিরমিজি: ২৬০৪)

সুতরাং আমাদের উচিত, নিজেদের ও পরিবার-পরিজনের পরকালীন নিরাপত্তা বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা। কারণ দুনিয়ার বিপদ থেকে যেকোনোভাবে পরিত্রাণের উপায় থাকলেও জাহান্নামের ফায়সালা হয়ে যাওয়ার পর পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না। তাই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দুনিয়াতেই আখেরাতের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন; এবং প্রিয়জনদের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করুন। আমরা যদি সত্যিই আমাদের পরিবার-পরিজনকে ভালোবাসি, তবে আমাদের উচিত, গুনাহের কাজ থেকে তাদের বিরত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। নিজেরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর