সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

নবীজির রক্ত পান করেছিলেন যেসব সাহাবি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২২, ০৪:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

সাহাবিদের জীবনে নবীপ্রেমের কিছু বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সিরাতগ্রন্থে। নবীজির রক্ত পান করা ছিল ওসব ঘটনার মধ্যে অন্যতম। বেশ কয়েকজন সাহাবির জীবনে এমন ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। রক্ত পান করার হুকুম সাধারণ অবস্থায় হারাম হলেও প্রিয়নবী (স.)-এর রক্ত পবিত্র হওয়ায় তা হারাম ছিল না। বরং এ ঘটনায় সাহাবিদের রাসুলপ্রেমের নজির পাওয়া যায়।

আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.)
বিশিষ্ট সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর মন-প্রাণ ছিল রাসুলের ভালোবাসায় একাকার। তিনি বর্ণনা করেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) (শিঙ্গা লাগানোর পর) আমাকে কিছু রক্ত দিলেন, আর তা মানুষের দৃষ্টির বাইরে ফেলে আসতে বললেন। আমি একটু আড়ালে গিয়ে তা পান করে ফেললাম। আমি ফিরে এলে নবী (স.) বলেন, তুমি রক্ত কী করেছ? আমি বললাম, আমি সেগুলো এমন স্থানে গোপন করে ফেলেছি, যা কেউ দেখতে পাবে না। তিনি (স.) বললেন, মনে হয় তুমি তা পান করেছ। আমি ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিলে রাসুল (স.) বলেন, তোমার থেকে লোকেরা আর লোকদের থেকে তুমি কষ্ট পাবে। কথিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের এ শক্তি-সামর্থ্যই ছিল সেই রক্তের অদৃশ্য প্রতিক্রিয়া। (আল-মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন: ৬৩৪৩)


বিজ্ঞাপন


আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের (রা.) মা ছিলেন প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.)-এর কন্যা আসমা বিনতে আবি বকর। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) তাঁর খালা ছিলেন। মুসলমানরা মদিনায় হিজরত করার পর যখন মদিনায় ইহুদিরা প্রচার করতে লাগল যে- মুসলমানদের জাদু করা হয়েছে, ফলে তারা কোনো সন্তান জন্ম দিতে পারবে না। কাকতালীয়ভাবে সেসময় কোনো মুসলমান সন্তান জন্মলাভ করেনি। অনেকের কাছেই বিষয়টা নিয়ে ধোঁয়াশা জাগল। সেই পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে জন্মলাভ করেছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের। তাঁর জন্ম মদিনার মুসলিমদের জন্য উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়। তাঁর বাবা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি জুবায়ের ইবনুল আওয়াম ছিলেন মহানবী (স.)-এর ফুফাতো ভাই। নবী (স.) নিজেই তাঁর নাম রাখেন আবদুল্লাহ।

মালিক ইবনে সিনান (রা.)
মালিক ইবনে সিনান (রা.) ছিলেন নবীজি (স.)-এর খুব কাছের সাহাবিদের একজন। প্রখ্যাত জ্ঞানী সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি (রা)-এর বাবা তিনি। মালিক ইবনে সিনানের অন্তরে আল্লাহ ঈমান ঢেলে দিয়েছিলেন, যার ফলে ওহুদ যুদ্ধের সময় তিনি ১৩ বছরের ছেলে আবু সাঈদ (রা)-কে সাথে নিয়ে রাসুল (স.)-এর দরবারে হাজির হন। রাসুল (স.) মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বলেন- হে ইবনে সিনান, তার যুদ্ধ করার বয়স হয়নি। ইবনে সিনান বললেন- হে আল্লাহর রাসুল! তার হাড়গুলো তো খুব মজবুত। ছেলেকে জিহাদের ময়দানে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করছেন বাবা, যা ছিল কঠিন ঈমানের পরিচায়ক। 

আরও পড়ুন: ইতিহাসের ৫ মহাপুরুষকে বিয়ে করেছেন যে মহিলা সাহাবি

সেই ওহুদ যুদ্ধের ঘটনা। রাসুল (স.)-এর ডান দিকের নিচের দাঁত ভেঙে যায় এবং তাঁর নিচের ঠোট জখম হয়ে রক্তাক্ত হয়ে যান। সেসময় মালিক ইবনে সিনান (রা.) রাসুল (স.)-এর মুখের রক্ত চুষে নেন। তখন রাসুল (স.) এটা লক্ষ করে বললেন, আমার রক্ত যার রক্তের সঙ্গে মিশ্রিত হয়, দোজখের আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। (সিরাতে ইবনে হিশাম, ১৮২)


বিজ্ঞাপন


সাহাবিদের নবীজির রক্ত পান করার উপরোক্ত দুই বর্ণনা প্রসিদ্ধ হলেও সালেম আবু হিন্দ নামক এক গোলামও নবীজির রক্ত পান করেছেন মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি শিঙ্গা লাগানোর কাজ করতেন। একদিন তিনি রাসুল (স.)-এর শিঙ্গা লাগানোর পর তাঁর অগোচরে রক্ত পান করে ফেলেন। (আত-তালখিসুল হাবির, ১/৪২)

আরও পড়ুন: জাহান্নামের আগুন থেকে পরিবারকে বাঁচাবেন যেভাবে

তবে, সবকটি ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. সালিহ আল মুনাজ্জিদ বলেন, সারকথা হলো- কিছু সাহাবি নবীজি (স.)-এর রক্ত পান করেছিলেন মর্মে যে বর্ণনাগুলো পাওয়া যায়, এর মধ্যে তুলনামূলকভাবে সহিহ আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-এর বর্ণনাটি। (https://islamqa.info)

রক্ত পান করার হুকুম: সাধারণত রক্ত পান করা হারাম, যা আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে ঘোষণা করেছেন। ‘তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত, সেই পশু যাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম উচ্চারিত হয়েছে।’ (সুরা মায়েদা: ৩)

কিন্তু প্রিয়নবী (স.)-এর রক্ত মোবারক পবিত্র। তাই এ ক্ষেত্রে হারামের বিধান প্রযোজ্য ছিল না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাহাবিদের জীবনী থেকে রাসুলপ্রেমের শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর