ইসলামের ইতিহাসে এক মহীয়সী নারীর নাম আতিকা বিনতে জায়েদ (রা.)। যাঁর স্বামীদের মধ্যে ছিলেন আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর (রা.) ও নবী-দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)-সহ ইসলামের ইতিহাসের পাঁচ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। তাঁরা প্রত্যেকেই সাহাবি ছিলেন এবং সবাই একে একে জিহাদের ময়দানে শাহাদাত বরণ করেছেন। ইতিহাসে এত শহিদের স্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য আর কোনো নারীর নেই।
আশারায়ে মুবাশশারা সাহাবি সাঈদ ইবনে জায়েদের বোন ছিলেন আতিকা। তিনি কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রের কন্যা। বাবার নাম জায়েদ ইবনে আমর। আতিকা বিনতে জায়েদ ইসলাম প্রচারের প্রথমদিকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং হিজরতে অংশগ্রহণ করেন।
বিজ্ঞাপন
এই নারী সাহাবি একজন কবি ছিলেন। প্রয়াত শহীদ স্বামীদের নিয়ে কবিতা রচনা করতেন। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ইন্তেকালের পরও একটি শোকগাথা রচনা করেছিলেন তিনি। আতিকা বিনতে জায়েদ (রা.)-এর পাঁচ শহিদ স্বামীর পরিচয় নিচে উল্লেখ করা হলো।
প্রথম স্বামী
প্রথম স্বামী চাচাত ভাই ও বিখ্যাত সাহাবি জায়েদ ইবনে খাত্তাব (রা.)। তিনি ছিলেন হজরত ওমর (রা.)-এর বড় ভাই। সম্ভবত তাঁর সঙ্গেই মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন আতিকা। ৬৩২ সালে জায়েদ (রা.) ইয়ামামার যুদ্ধে শহিদ হলে আতিকা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
দ্বিতীয় স্বামী
প্রথম স্বামীর শাহাদাতের পর আবদুল্লাহ ইবনে আবুবকর (রা.)- এর সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। হুনাইনের যুদ্ধের পর তাইফ অবরোধকালে তিনি আহত হয়েছিলেন। সেই পুরনো ক্ষতের সংক্রমণে ৬৩৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
তৃতীয় স্বামী
দ্বিতীয় স্বামীর ইন্তেকালের পর হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর তৃতীয় বিয়ে হয়। ওমর (রা.) এর প্রতি বড়ভাই জায়েদ ইবনে খাত্তাব (রা.) বিশেষ স্নেহপ্রবণ ছিলেন। তাঁরই হাতে ব্যবসায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। সেই ভাইয়ের বিপত্নীক স্ত্রী আবার একইসঙ্গে পিতৃহীন চাচাতো বোনের বিয়ের পর পুনরায় স্বামীহারা হওয়ায় ওমর (রা.) ব্যথিত হয়েছিলেন। তাই তাঁকে বিয়ে করেন। ৬৪৪ সালে ওমর (রা.) মসজিদে ছুরিকাহত হন এবং পরে শহিদ হন। ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) বলেন, ‘যেদিন ওমরকে (রা.) আঘাত করা হয়, সেদিনের নামাজে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী আতিকা বিনতে যায়িদ (রা.)।’ (ফাতহুল বারি: ৩/৩৪)
বিজ্ঞাপন
চতুর্থ স্বামী
হজরত ওমর (রা.)-এর ইন্তেকালের পর ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমর নায়ক জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর চতুর্থ বিয়ে হয়। জুবাইর (রা.) আশারায়ে মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত। ৬৫৬ সালের ডিসেম্বরে উটের যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
এই সময়ে লোকেরা বলতে শুরু করে যে ‘যে ব্যক্তি শহীদ হতে চায়, সে আতিকা বিনতে জায়েদকে বিয়ে করুক!’
পঞ্চম স্বামী
জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.)-এর ইন্তেকালের পর নবী (স.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (রা.) এর সঙ্গে তাঁর ৫ম বিয়ে হয়। আতিকা বিনতে জায়েদ (রা.) হুসাইন (রা.)-এর ৮ বছর আগে ৬৭২ সালে ইন্তেকাল করেন।
(তথ্যসূত্র: ইসলামি বিশ্বকোষ (১ম খণ্ড), পৃষ্ঠা ৩০৯। আগানী, ১৬ খণ্ড- ১৩৩-৫। খিযানাতুল আদাব, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫১। ইবনে কুতায়বা উয়ুনুল আখবার, ৪ খণ্ড- ১১৪। আল-তাবাকাত আল কাবির, ৩য় খণ্ড, তা-হা পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা-৯৫)
উল্লেখ্য, আমাদের সমাজে কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে বা তালাকপ্রাপ্ত হলে তাকে ‘অপয়া’ ভাবা হয়! অথচ সেই সমাজে বিধবা নারীর বিয়ে হওয়া কতই না সহজ ছিলো! আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক নারীকে সুন্দর জীবন দান করুন। আমিন।