শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

কাজের ফাঁকে রেকর্ড করা তেলাওয়াত শোনা জায়েজ?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২, ১২:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর বাণী। এর তেলাওয়াত অন্তরকে শীতল করে। অন্তরে হেদায়েতের নূর তৈরি করে। কোরআনুল কারিমের তেলাওয়াত শোনাও সওয়াবের আমল। মহানবী (স.) কখনো সাহাবায়ে কেরামকে দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করাতেন এবং গভীর আগ্রহসহ শুনতে পছন্দ করতেন। (বুখারি: ৫০৫৬)। যারা কোরআনের মজলিসে ভক্তির সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করে ও শোনে, মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের মজলিসে তাদের প্রশংসা করেন। 

‘যখন কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর কোনো ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে এবং পরস্পর তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়, তাদের আল্লাহর রহমত ঢেকে নেয়, ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন।’ (আবু দাউদ: ১৪৫৫)


বিজ্ঞাপন


কোরআন তেলাওয়াত করলে যেমন প্রতি হরফে ১০ নেকি পাওয়া যায়, তেমনি শুনলেও নেকি পাওয়া যায়। তবে, শোনার নিয়ম রয়েছে। আল্লাহ তাআলা কোরআনের তেলাওয়াত শোনার নিয়ম-পদ্ধতি এভাবে তুলে ধরেছেন— وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ‘আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখো এবং নিশ্চুপ থাকো, যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।’ (সুরা আরাফ: ২০৪)

উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ কোরআন তেলাওয়াত করা হলে তা মনোযোগসহকারে শোনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং চুপ থাকতে বলেছেন। অতএব, মনোযোগসহ শোনার পরিবেশ থাকলে রেকর্ড করা তেলাওয়াত শোনা জায়েজ। কিন্তু পরিবেশ না থাকলে উচিত নয়। কেননা কোরআনের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। 

আরও পড়ুন: অর্থ বোঝা উত্তম, বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ফরজ

যেখানে আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন হয়, সেখানে সওয়াবের আশা করা যায় না। তাই রেকর্ডকৃত কোরআন তেলাওয়াত শুনলে নির্ভরযোগ্য আলেমদের মতে সওয়াব হবে না। (ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ২/১০৪)


বিজ্ঞাপন


‘কাজে ব্যস্ত থাকার সময় কোরআন তেলাওয়াত শোনার ক্ষেত্রে তেলাওয়াতের প্রতি মনোযোগ থাকে না। অথচ যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন তা মনোযোগসহ শ্রবণ করা আবশ্যক।’ (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৫১০)

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ সালেহ আল উসাইমিন (রহ) বলেছেন- ‘অমনোযোগী ও উদাসিন অবস্থায় (কোরআন তেলাওয়াতের) টেপ-রেকর্ডার বন্ধ রাখাই উত্তম। কেননা এটা অবিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য। সুতরাং যখন তুমি লক্ষ্য করবে যে, লোকেরা তেলাওয়াতের প্রতি মনোযোগী নয়; বরং তারা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় ব্যস্ত, তখন তুমি তোমার টেপ-রেকর্ডারে কোরআনের তেলাওয়াত চালানো বন্ধ রাখবে।

আরও পড়ুন: কোরআনের ভুল ধরতে গিয়ে আলোর পথের দিশারি

তিনি আরও বলেন, ‘টেপ-রেকর্ডারে (রেডিও, মোবাইল, ডিভাইসে ধারণ করা) হলেও কোরআনের তেলাওয়াতে অমনোযোগী ও উদাসিন হওয়া আদব বিরোধী কাজ। সেজন্য আমরা বলব, যখন আপনি কোরআন তেলাওয়াত শোনার জন্য অবসর পাবেন তখন রেকর্ড করা কোরআন তেলাওয়াত শুনুন। আর যখন আপনি ব্যস্ত হয়ে যাবেন তখন বন্ধ রাখুন।’ (লিক্বাউল বাব আল-মাফতুহ)

ইমাম নববি (রহ) বলেন, ‘অনেক মানুষই পবিত্র কোরআনের মর্যাদা সম্মান ও আদব সম্পর্কে উদাসিন। অতএব তেলাওয়াতের সময় হাসি-ঠাট্টা, কথাবার্তা ও বিশৃঙ্খলা বর্জন করা জরুরি।’ (আত-তিবয়ান ফি আদাবি হামলাতুল কোরআন)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র কোরআন বেশি বেশি তেলাওয়াত করার এবং মনোযোগসহ শোনার তাওফিক দান করুন। একই সঙ্গে মহান আল্লাহর ঐশী বানীর মর্যাদা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন