বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জানাজায় অধিক উপস্থিতি: নবীজির দেওয়া সুসংবাদ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

জানাজায় অধিক উপস্থিতি: নবীজির দেওয়া সুসংবাদ

ইসলামি শরিয়তে জানাজার নামাজ মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতদের পক্ষ থেকে এক বিশেষ তোহফা। এটি মূলত মৃত ব্যক্তির মাগফেরাত বা ক্ষমার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে সম্মিলিত সুপারিশ। শরিয়তের দৃষ্টিতে জানাজা দ্রুত সম্পন্ন করা যেমন জরুরি, তেমনি এতে অধিক সংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতি মৃত ও জীবিত উভয়ের জন্যই কল্যাণকর। জানাজায় লোকসমাগম ও এর ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) একাধিক সুসংবাদ দিয়েছেন।

জানাজা ও দাফনে বিলম্ব না করা

ইসলামে মৃত ব্যক্তিকে দ্রুত দাফন-কাফনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে না; বরং অযথা কালক্ষেপণ না করাই উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) হজরত আলী (রা.)-কে তিনটি বিষয়ে বিলম্ব করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন- ‘হে আলী। তিনটি কাজে দেরি করবে না। ১. নামাজ যখন ওয়াক্ত হয়ে যায়; ২. জানাজা যখন উপস্থিত হয় এবং ৩. বিধবা যখন তার যোগ্য পাত্র পাওয়া যায়।’ (জামে তিরমিজি: ১০৭৫)

অধিক উপস্থিতি: মৃতের জন্য রহমত

জানাজার নামাজে মুসল্লির সংখ্যা যত বেশি হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য তা তত বেশি কল্যাণ বয়ে আনে। হাদিস শরিফে এ সম্পর্কে স্পষ্ট সুসংবাদ রয়েছে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘যে মৃত ব্যক্তির জানাজায় একশোজন মুসলমান অংশ নেয় এবং সবাই তার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ (ক্ষমা প্রার্থনা) করে, আল্লাহ তাদের সুপারিশ কবুল করেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২০৮৭)
অন্য একটি বর্ণনায় সংখ্যার বিষয়টি আরও শিথিল করে আল্লাহর অশেষ রহমতের কথা জানানো হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘কোনো মুসলমান মারা গেলে তার জানাজায় যদি এমন চল্লিশজন মুমিন উপস্থিত হয়, যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না; তবে আল্লাহ ওই মাইয়্যেতের ব্যাপারে তাদের সুপারিশ (দোয়া) কবুল করেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২০৮৮)

আরও পড়ুন: সদ্য দাফনকৃত ব্যক্তির জন্য যে দোয়া করবেন


বিজ্ঞাপন


হাদিসের সংখ্যার ভিন্নতা ও সমাধান

ওপরের দুটি হাদিসের একটিতে ‘একশ’ এবং অন্যটিতে ‘চল্লিশ’ জন মুসল্লির কথা বলা হয়েছে। মুহাদ্দিসিনে কেরামের মতে, এখানে সংখ্যার বিরোধ নেই। বরং এটি আল্লাহর রহমতের প্রশস্ততা নির্দেশ করে। এর মূল প্রতিপাদ্য হলো- জানাজায় ‘জামাতে কাসির’ বা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেককার মুমিনের উপস্থিতি। তাদের সম্মিলিত দোয়ার ওসিলায় আল্লাহ মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। (মিরকাতুল মাফাতিহ: ১৬৬১)

কমপক্ষে তিন কাতার হওয়ার ফজিলত

কখনো পরিস্থিতির কারণে জানাজায় খুব বেশি মানুষ উপস্থিত হতে পারে না। সেক্ষেত্রে উপস্থিত মুসল্লিদের দিয়েই অন্তত তিনটি কাতার বা সারি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হজরত মালিক ইবনু হুরায়রা আশ-শামি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘কোনো মৃত ব্যক্তির জানাজায় যদি মুসলমানদের তিনটি সারি হয়, তবে তার জন্য (জান্নাত) অবধারিত হয়ে যায়।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩১৬৬; তিরমিজি: ১০২৮)
এ হাদিসের ওপর আমল করে সাহাবায়ে কেরাম জানাজায় লোকসংখ্যা কম হলেও অন্তত তিনটি কাতার পূর্ণ করার চেষ্টা করতেন।

আরও পড়ুন: জানাজার নামাজে জুতা খুলে দাঁড়াতে হয় কি?

অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিশাল প্রতিদান

জানাজা শুধু মৃতের উপকারই করে না, বরং যারা এতে অংশ নেন, তাদের জন্যও রয়েছে বিশাল সওয়াব। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি কারো জানাজার নামাজ আদায় করে, সে এক ‘কিরাত’ পরিমাণ নেকি লাভ করে আর যে ব্যক্তি মৃতের জানাজার নামাজ আদায় করার সাথে তার দাফনের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকে, তাহলে সে দুই ‘কিরাত’ পরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। এক কিরাত উহুদ পাহাড়ের চেয়েও বড়।” (সহিহ বুখারি: ১/৪৪৫, কিতাবুল জানাইজ; সহিহ মুসলিম: ২/৬৫২, হাদিস: ৯৪৬, কিতাবুল জানাইজ)
বিশিষ্ট সাহাবি হজরত ইবনু ওমর (রা.) এই হাদিস শোনার পর আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘হায়! আমরা তো (অলসতা করে) অনেক কিরাত সওয়াব নষ্ট করেছি।’

অতএব, মুমিন মুসলমানের উচিত, পরিচিত বা প্রতিবেশী কারো মৃত্যুর সংবাদ শোনামাত্রই তার জানাজায় শরিক হওয়ার চেষ্টা করা। এটি একাধারে একটি ফরজে কিফায়া ইবাদত, মৃতের জন্য মাগফেরাতের মাধ্যম এবং অংশগ্রহণকারীর জন্য নেক আমলের পাহাড় গড়ার সুযোগ। আল্লাহ তাআলা আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতটি যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর