ইসলামে ব্যক্তির মৌলিক পরিচয়ের অন্যতম ভিত্তি হলো পিতৃ-পরিচয়। এটি বংশপরম্পরা ও সামাজিক পরিচয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক মুসলিম সমাজে এ সম্পর্কে অজ্ঞতা রয়েছে। অনেক নারী সামাজিক রীতি বা সম্মান দেখানোর জন্য নিজের নামের সাথে স্বামীর নাম বা বংশীয় পদবি যুক্ত করেন। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এটি জায়েজ নয়।
নিচে কোরআন, হাদিসের দলিলের আলোকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
বিজ্ঞাপন
কোরআনের নির্দেশ: পিতৃ-পরিচয় সংরক্ষণ
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাকো। এটাই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ন্যায়সঙ্গত।’ (সুরা আহজাব: ৫)
নামকরণের মাধ্যমে পিতৃ-পরিচয় সংরক্ষণ করা ইসলামের সরাসরি নির্দেশ। এটি সব নারী-পুরুষের জন্য প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন: বিবাহিত নারী মা-বাবার সেবা করবে কীভাবে?
বিজ্ঞাপন
পিতৃ-পরিচয় বিকৃতির সতর্কবাণী
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জেনে শুনে অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবি করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।’ (সহিহ বুখারি: ৪৩২৬)
আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি তার পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে দাবি করবে অথবা যে ক্রীতদাস তার মনিবকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মাওলা বানায় তার উপর আল্লাহর লানত, ফেরেশতা ও সমগ্র মানব জাতির লানত বর্ষিত হবে। কেয়ামত দিবসে আল্লাহ তার কোনো ফরজ কিংবা নফল (ইবাদাত) কবুল করবেন না।’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৭০)
মর্ম: পিতৃ-পরিচয় বিকৃত করা শুধু গুনাহ নয়, এটি সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও মা-বাবার সম্মানহানির কারণও হতে পারে।
আরও পড়ুন: ইসলামে স্বামীকে 'ভাই' ডাকার বিধান কী?
স্বামীর নাম যুক্ত করা প্রচলিত ভুল
অনেক নারী বিবাহের পর নিজের নামের সাথে স্বামীর নাম বা বংশীয় পদবি যুক্ত করেন। এটি মারাত্মক ভুল। যদি স্বামীর নাম যুক্ত করা সম্মানের বিষয় হতো, তাহলে উম্মাহাতুল মুমিনিন তা করতেন। কিন্তু তারা সবসময় নিজের পিতার নামেই পরিচিত ছিলেন।
অতএব, স্বামীর নাম বা পদবি কখনও নিজের নামের সাথে যুক্ত করবেন না। সামাজিক চাপ বা আধুনিকতা দেখানোর কারণে ইসলামি বিধান বিসর্জন দেবেন না। সন্তানদের সঠিক পিতৃপরিচয় শিক্ষা দিন এবং আইনি নথিতেও তা নিশ্চিত করুন।
আরও পড়ুন: নারীর যে গুনাহের দায় স্বামীর
বাস্তব প্রয়োজনের ক্ষেত্রে শরয়ি বিধান
শরিয়ত অপরিহার্য প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতার (ضرورة) ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম শিথিল করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো দেশের আইন বা কোনো অফিসিয়াল প্রক্রিয়ায় (যেমন: অভিবাসন) স্বামীর পদবী ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়, তবে শুধুমাত্র সেই সুনির্দিষ্ট ও সীমিত প্রয়োজন পূরণের জন্য সাময়িকভাবে এটি ব্যবহার জায়েজ হতে পারে। তবে এটি একটি ব্যতিক্রম ব্যবস্থা; সাধারণ নিয়ম বা স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে নয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেসব জিনিসের ব্যবহার আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন সেগুলোর বিশদ বিবরণ তিনি তোমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, তবে তোমরা নিরুপায় অবস্থা ছাড়া।’ (সুরা আনআম: ১১৯)
মনে রাখবেন, ইসলাম স্বামীর প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও অধিকার রক্ষার উপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে, কিন্তু তা পিতৃ-পরিচয় বিসর্জন দেওয়ার শর্তারোপ করে না। আমাদের উচিত আল্লাহর বিধানকে সামাজিক রীতির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে স্পষ্ট ও ন্যায়সঙ্গত পরিচয় বজায় রাখা।

