শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোরআন হিফজ কত মহান ইবাদত?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরআন হিফজ কত মহান ইবাদত?

কোরআনুল কারিম মানবজাতির জন্য পথনির্দেশ। এটি কেবল মুসলিমদের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্য রহমতস্বরূপ। মহান আল্লাহ কোরআনকে বিভিন্ন আখ্যা দিয়েছেন- ‘নুর’ (আলো), ‘হুদা’ বা হেদায়াত (পথনির্দেশক), ‘শিফা’ (আরোগ্য) ইত্যাদি। নবীজি (স.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তা অনুযায়ী আমল করে, কেয়ামতের দিন তার পিতামাতাকে এমন একটি মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল হবে।’ (আবু দাউদ: ১৪৫৩)

এই হাদিস কোরআন হিফজ পরকালে মহান পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি বহন করে। কোরআন হিফজ তথা পুরো কোরআন মুখস্থ করা কেবল একটি ইবাদত নয়; এটি আল্লাহর বাণীকে হৃদয়ে ধারণ করা, জীবনে বাস্তবায়ন করা এবং আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি মহান আমানত।


বিজ্ঞাপন


কোরআন হিফজের ফজিলত

কোরআনের আলোকে হিফজের গুরুত্ব আল্লাহর নিজের নির্দেশ ও প্রতিশ্রুতিতে ফুটে উঠেছে। সুরা ক্বামার (১৭) আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আর নিশ্চয় আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, অতএব আছে কি কোন উপদেশ গ্রহণকারী?’ এটি হিফজ এবং বোঝার সহজতার প্রতি ইঙ্গিত। এছাড়া সুরা আল-হিজর (৯) আয়াতে আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষণকারী।’ হাফেজগণ আল্লাহর সংরক্ষণ ব্যবস্থার জীবন্ত মাধ্যম।

আরও পড়ুন: কোরআন তেলাওয়াতকে যেভাবে সঙ্গী বানাবেন

হাফেজের মর্যাদা

রাসুলুল্লাহ (স.) হাফেজগণের মর্যাদা নিয়ে বলেছেন- ‘কোরআন তেলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।’ (ইবনে মাজাহ: ২১৫) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সে, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (সহিহ বুখারি: ৫০২৭)

এছাড়া, কোরআন শিক্ষাকে বলা হয় ঈর্ষণীয় জ্ঞান। দুই ধরনের আমল নিয়ে ঈর্ষা করা জায়েজ- একজন যাকে আল্লাহ কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং তা তেলাওয়াত করে, আর একজন যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং তা সত্য ও ন্যায়ের পথে ব্যয় করে। (বুখারি: ৫০২৬)

ইতিহাস ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ

প্রাথমিক যুগে সাহাবায়ে কেরাম হিফজকে ঈমানি শক্তির উৎস বিবেচনা করতেন। উদাহরণস্বরূপ, হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলতেন- ‘দশ আয়াত করে কোরআন শিখতাম, তা বুঝে এবং আমল করে, তারপর পরের দশ আয়াতের দিকে এগুতাম।’ এভাবে তিনি ধারাবাহিকভাবে কোরআন মুখস্থ করতেন। এছাড়া হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রমুখ সাহাবি ছিলেন হাফিজ। নবীজি (স.) হিফজকারীদের বিশেষ সম্মান দিতেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাদের অগ্রাধিকার প্রদান করতেন।

আরও পড়ুন: সহিহ তেলাওয়াতের নববী পদ্ধতি

হিফজের উপকারিতা

কোরআন হিফজ আধ্যাত্মিক ও মানসিক উন্নতির সঙ্গে সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি করে। এটি আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্ক বৃদ্ধি করে, অন্তরের কঠোরতা দূর করে এবং তাকওয়া অর্জনে সহায়ক। কোরআন নিজেই হিফজের গুরুত্ব তুলে ধরে- ‘বলুন, এটি (কোরআন) মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও শিফা...।’ (সুরা ফুসসিলাত: ৪৪)

এছাড়া, হিফজ স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ ও ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়ন করে, সমাজে কোরআনিক মূল্যবোধ বিস্তার করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আদর্শ স্থাপন করে।

হিফজ শিক্ষার পদ্ধতি ও দায়িত্ব

হিফজ শেখার জন্য নিয়মিত তেলাওয়াত, অর্থ ও তাফসিরসহ মুখস্থকরণ এবং নিয়মিত রিভিশন গুরুত্বপূর্ণ। মাদ্রাসা ও মক্তবে হিফজ বিভাগের জোরদারকরণ, হাফিজদের জন্য বৃত্তি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষা সম্প্রসারণও প্রয়োজন। হিফজের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদানের মাধ্যমে সমাজে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা যায়।

কোরআন হিফজ শুধুই মুখস্থকরণ নয়; এটি আল্লাহর বাণীকে হৃদয়ে ধারণ করা, জীবনে বাস্তবায়ন করা এবং বিশ্বব্যাপী প্রচার করার মহান দায়িত্ব। হাফিজগণ আল্লাহর কালামের জীবন্ত সংরক্ষণাগার এবং উম্মাহর রূহানি শক্তি। ‘হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’ (সুরা তহা: ১১৪)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর