শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইসলামের প্রথম শহীদ সুমাইয়া (রা.): যার ত্যাগের গাথা চিরস্মরণীয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ইসলামের প্রথম শহীদ সুমাইয়া (রা.): যার ত্যাগের গাথা চিরস্মরণীয়

মহানবী মুহাম্মদ (স.)-এর ইসলাম প্রচারের সূচনালগ্নে মক্কার কুরাইশ নেতারা তাঁর দাওয়াতকে নিজেদের নেতৃত্ব ও সামাজিক প্রভাবের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। ঐতিহাসিক দলিল অনুযায়ী, তারা আশঙ্কা করেছিল যে নবীজির মাধ্যমে বনু হাশেম গোত্রের মর্যাদা বৃদ্ধি পেলে অন্যান্য গোত্রের প্রভাব খর্ব হবে। (ইবনে হিশাম: খণ্ড ১, পৃ. ৩২০)

বৈরিতার মুখোমুখি প্রথম মুসলমানরা

কুরাইশ নেতারা নবীজি (স.)-কে কবি, জাদুকর ও জ্বিনগ্রস্ত বলে অপপ্রচার চালায়। কোরআনের আয়াতেও এ অভিযোগগুলোর উল্লেখ রয়েছে। (সূরা সাফফাত: ৩৬, আদ-দুখান: ১৪) শুধু তাই নয়, তারা মুসলমানদের ওপর চালায় নিষ্ঠুর সামাজিক বয়কট ও শারীরিক নির্যাতন, বিশেষ করে দুর্বল ও অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষদের লক্ষ্য করে।

নারী সাহাবীদের অগ্নিপরীক্ষা

ইসলাম গ্রহণের কারণে বহু নারী সাহাবিকেও নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাদের মধ্যে সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রা.)-এর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। তিনিই হলেন ইসলামের প্রথম শহীদা। (ইবনে সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৮, পৃ. ২৬৪)

আরও পড়ুন: দ্বীন প্রচার থামাতে যেভাবে নির্যাতন করত আবু জাহেলরা


বিজ্ঞাপন


কে ছিলেন সুমাইয়া (রা.)?

সুমাইয়া (রা.) ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম সাত ব্যক্তির একজন। মুজাহিদ (রহ.)-এর বর্ণনা মতে, এই সপ্তক হলেন- রাসুল (স.), আবু বকর (রা.), বিলাল (রা.), খাব্বাব (রা.), সুহাইব (রা.), আম্মার (রা.) এবং তাঁর মা সুমাইয়া (রা.)। (ইবনে হিশাম: খণ্ড ১, পৃ. ৩৪৬)

ইয়াসির পরিবারের উপর নির্যাতনের চিত্র

সুমাইয়া (রা.)-এর পরিবার বনু মাখজুম গোত্রের আশ্রিত ছিলেন। তিনি, তাঁর স্বামী ইয়াসির (রা.) ও পুত্র আম্মার (রা.) ইসলাম গ্রহণ করলে আবু জাহেল ও তার গোত্র তাদের ওপর চরম নির্যাতন শুরু করে। ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন, তাদের মক্কার উত্তপ্ত বালুকারাশিতে ফেলে পুড়িয়ে মারা হতো। এমনকি নবীজি (স.) তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলতেন- ‘হে ইয়াসির পরিবার, ধৈর্য ধরো, নিশ্চয়ই জান্নাতই তোমাদের প্রতিশ্রুত স্থান।’ (সূত্র: মুসনাদে আহমদ: ২৩৪২৩; হাকিম, মুস্তাদরাক: ৫৬৫৫)

আরও পড়ুন: সাহাবিদের ওপর কঠিন নির্যাতনের চিত্র

শাহাদাতের মুহূর্ত

একদিন নির্যাতনরত অবস্থায় আবু জাহল সুমাইয়া (রা.)-কে অশ্লীল কটূক্তি করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবু জাহল বর্শা দিয়ে তাঁর যৌনাঙ্গে আঘাত করে তাঁকে হত্যা করে। (সূইবনে সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৮, পৃ. ২৬৪; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির, খণ্ড ৩, পৃ. ৬০) এভাবেই তিনি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদার মর্যাদা লাভ করেন।

হত্যাকারীর পরিণতি

সুমাইয়া (রা.)-এর হত্যাকারী আমর ইবনে হিশাম, যার ডাকনাম ছিল আবুল হিকাম বা প্রজ্ঞাবান, নবীজি (স.)-এর দেওয়া নাম ‘আবু জাহেল বা মূর্খের পিতা হিসেবেই কুখ্যাত। পরবর্তীতে বদর যুদ্ধে আবু জাহেল নিহত হলে নবীজি (স.) আম্মার (রা.)-কে বলেন, ‘আল্লাহ আজ তোমার মায়ের হত্যাকারীকে হত্যা করেছেন।’ (ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃ. ৩৯৩)

আরও পড়ুন: আবু জাহেলকে যেভাবে হত্যা করেছিল দুই কিশোর

চিরভাস্বর একটি ইতিহাস

সুমাইয়া (রা.)-এর আত্মত্যাগ ঈমানের দৃঢ়তা, ধৈর্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের এক চিরন্তন দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবনী মুসলমানদের মনে চিরকাল প্রেরণা ও অবিচল আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করবে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর