মহানবী (স.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পথে এক অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহর কুদরত প্রকাশ পায়। ৬২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মহানবী (স.) আল্লাহ তাআলার নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশে হিজরত শুরু করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর (৮ রবিউল আউয়াল) তিনি মদিনার উপকণ্ঠ কোবায় পৌঁছান। সেখানে খোজাআহ গোত্রের অতিথিপরায়ণ নারী উম্মে মাবাদের তাঁবুতে যাত্রাবিরতি করেন।
উম্মে মাবাদ ছিলেন উদার ও অতিথিপরায়ণ। প্রতিদিন তিনি তাঁবুর বাইরে বসে পথিকদের আপ্যায়ন করতেন। কিন্তু দুর্ভিক্ষের সময় চলছিল বলে সেদিন তাঁর ঘরে কিছুই ছিল না। স্বামী আবু মাবাদ সব বকরিকে মাঠে নিয়ে গিয়েছিলেন। কেবল একটি অতি দুর্বল বকরি তাঁবুর এক কোণে বাঁধা ছিল। নবীজি (স.) সেটি দেখে দুধ দোহনের অনুমতি চান। উম্মে মাবাদ বললেন, ‘ওর ওলানে দুধ থাকলে আমিই আপনাদের দোহন করে দিতাম।’
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: মরুভূমিতে বৃষ্টি: কিশোর নবীর দোয়ায় প্রকৃতির অলৌকিক সাড়া
রাসুলুল্লাহ (স.) অনুমতি পেয়ে বকরিকে স্পর্শ করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে দোয়া করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর ইচ্ছায় বকরিটির ওলান দুধে ভরে যায়। নবীজি প্রথমে উম্মে মাবাদকে দুধ পান করান, এরপর সঙ্গীদের এবং সর্বশেষে নিজে পান করেন। এমনকি একটি পাত্র পূর্ণ করে উম্মে মাবাদের জন্য রেখে তাঁরা আবার যাত্রা শুরু করেন।
উম্মে মাবাদের স্বামী আবু মাবাদ ফিরে এসে এ ঘটনার কথা শুনে বিস্মিত হন। উম্মে মাবাদ নবীজি (স.)-এর চেহারার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- ‘তাঁর মুখমণ্ডল উজ্জ্বল, ব্যবহার নম্র, কণ্ঠস্বর গম্ভীর। চোখ বড় ও সুন্দর, ভ্রূ ঘন ও সংযুক্ত, ভাষা মধুর ও স্পষ্ট। তাঁর সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব দূর থেকে মোহনীয়, নিকটে আসলে আরও হৃদয়গ্রাহী। তিনি নাতিদীর্ঘ, নাতিখর্ব—মাঝারি গড়নের। সর্বদাই তাঁকে ঘিরে রাখেন সঙ্গীরা এবং তাঁর নির্দেশ পালন করেন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায়।’
স্ত্রীর মুখে এই বর্ণনা শোনার পর আবু মাবাদ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘আল্লাহর কসম! ইনিই কুরায়েশদের সেই মহামানব, যার সম্পর্কে সবাই আলোচনা করছে। সুযোগ পেলে অবশ্যই আমি তাঁর সাহচর্য গ্রহণ করব।’ পরবর্তীতে তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন।
বিজ্ঞাপন
(আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা-১৭০; জাদুল মাআদ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৪)
