সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কাজা রোজা ভেঙে ফেললে কাফফারা দিতে হবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৫, ০৪:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

কাজা রোজা ভেঙে ফেললে কাফফারা দিতে হবে কি?

মজান মাসের রোজা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর ফরজ। কেউ যদি শরয়িসম্মত কারণে (যেমন অসুস্থতা, সফর বা নারীদের মাসিক) রোজা না রাখতে পারেন, তাহলে তিনি পরবর্তী সময়ে সেই রোজার কাজা আদায় করবেন—এটা ইসলামি শরিয়তের বিধান।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে এ মাসে থাকবে, সে যেন তাতে রোজা রাখে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির, সে অন্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, কঠিন করতে চান না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)


বিজ্ঞাপন


কিন্তু প্রশ্ন হলো—কাজা রোজা রেখে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলেন, তাহলে কি তার কাফফারা আদায় করতে হবে?

কাজা রোজার কাফফারা নেই

ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, কেউ যদি কাজা রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলেন, তার উপর কেবল ওই রোজাটি পুনরায় আদায় করা (কাজা) ওয়াজিব হবে। কিন্তু কাফফারা দিতে হবে না। যেমন, ইমাম কাসানি (রহ.) বলেন, ‘যদি কেউ কাজা রোজা ভেঙে ফেলে, তবে তার উপর কাফফারা নয়; বরং কেবল পুনরায় কাজা আদায় করা ওয়াজিব।’ (বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৫)

মূলত, রমজানের রোজা আল্লাহর নির্দিষ্ট মাস ও নির্ধারিত সময়ের ফরজ ইবাদত। এই পবিত্র সময়ের সম্মান লঙ্ঘন করলে কাফফারা ওয়াজিব হয়। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলে, সে যদি সারাজীবন রোজা রাখে, তবুও সেই একটি রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না।’ (আবু দাউদ: ২৩৯৬, হাকিম: সহিহ)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: জীবনের সকল কাজা রোজা আদায়ের বিধান কেমন

কিন্তু রমজানের বাইরের সময়ের কাজা রোজা সেই মর্যাদা বহন করে না, তাই তা ভঙ্গ করলে শুধু কাজা ওয়াজিব হয়, কাফফারা নয়। 

আল-হিদায়া শরহে বুরহানুদ্দীন মারগিনানি (রহ.)-তে উল্লেখ আছে, ‘কাজা রোজা রমজানের মর্যাদা বহন করে না, তাই তা ভঙ্গ করলে কাফফারা দিতে হয় না।’ (হিদায়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৩)

তবে, মনে রাখা জরুরি, কাজা রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলা গুরুতর গুনাহ। এমন কাজ কখনোই করা উচিত নয়। যদিও এতে কাফফারা নেই, তবু তাওবা ও পুনরায় রোজা রাখা আবশ্যক।

কাজা রোজা আদায়ের সময়

পরের রমজান আসার আগেই যত দ্রুত সম্ভব, রমজানের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। কোনো কারণ ছাড়া কাজা আদায়ে দেরি করা উচিত নয়। কারও ওপর যদি রমজানের রোজা কাজা থাকে, তবে সে অন্যান্য নফল রোজা আদায় না করে আগে কাজা আদায় করে নেবে। অবশ্য, নফল রোজা আদায় করলে তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। দুই ঈদের দিনগুলো এবং মানতের রোজার জন্য নির্ধারিত দিন ছাড়া বছরের যেকোনো দিন রমজানের রোজার কাজা আদায় করা যায়। (আল-ফিকহুল ইসলামি ওয়া-আদিল্লাতুহু: ৩ / ১০৭-১১৩)

আরও পড়ুন: কাজা রোজার নিয়ত, যে সতর্কতা জরুরি

ইসলামের প্রতিটি বিধান মানুষকে দায়িত্বশীলতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। রোজা শুধু উপবাস নয়, বরং একটি আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ। কাজা রোজাও যথেষ্ট গুরুত্বের দাবিদার। এটিকে হালকাভাবে নেওয়া গুনাহের কাজ। কাজা রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে দিলে একদিকে তওবা করতে হবে, অন্যদিকে ওই রোজাটি যথাশীঘ্র পূরণ করে নেওয়াও জরুরি হয়ে যাবে।

মুমিনের উচিত, ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত রোজা ভেঙে গেলে বিষয়টি লঘু মনে না করা। বরং তাৎক্ষণিক তাওবা, রোজার কাজা আদায় এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করাই একজন খাঁটি মুসলিমের পরিচয়। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর