ইসলাম ধর্মে কসম বা শপথ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। কেউ যদি আল্লাহর নামে কোনো হালাল কাজ করতে বা না করতে শপথ করে এবং পরবর্তীতে তা ভঙ্গ করে, তাহলে তার ওপর কাফফারা (বিধিমাফিক দণ্ড) আদায় করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এই কাফফারার সুস্পষ্ট বিধান কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে, যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রখ্যাত ফিকহবিদগণ।
কসম ভঙ্গের কাফফারা ৩ ভাবে আদায় করা যায়
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কসম ভঙ্গের কাফফারা হলো— ১০জন মিসকিনকে খাওয়ানো বা তাদের পোশাক প্রদান করা অথবা একজন দাস মুক্ত করা। আর যে তা করতে অক্ষম, সে তিন দিন রোজা রাখবে।’ (সুরা মায়েদা: ৮৯)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে- কসম ভঙ্গের কাফফারা হলো- ১. দশজন মিসকিনকে খাওয়ানো (খাওয়ার টাকা দিলেও হবে) অথবা ২. পোশাক দেওয়া অথবা ৩. তিনদিন রোজা রাখা। (দাসমুক্তির বিষয়টি বর্তমানে অপ্রচলিত, তাই এখানে তুলে ধরা হয়নি।)
আরও পড়ুন: মিথ্যা শপথের ভয়াবহ পরিণাম
১. দশজন মিসকিনকে খাওয়ানো বা খাওয়ার টাকা দেওয়া
দশজন মিসকিনকে দু’বেলা খাবার (মধ্যম মানের, যা পরিবারে খাওয়া হয়) খাওয়ানো জরুরি। অথবা একজন মিসকিনকে দশ দিন দু’বেলা করে খাবার খাওয়ালেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে একবেলা খাবার খাইয়ে বাকি বেলার জন্য টাকা দিলেও চলবে।
২. প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় দেওয়া
শপথ ভঙ্গের কাফফারা হিসেবে মিসকিনদের কাপড়ও দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে এক জোড়া করে বা একসেট করে কাপড় দেওয়া শরিয়তের বিধান।
৩. তিনটি রোজা রাখা
মূলত উপরের দুইটি হলো কাফফারা। তা আদায়ের সামর্থ্য না থাকলে রোজা রাখার পথ খোলা রয়েছে। অর্থাৎ যদি কেউ গরিবদের খাওয়ানো বা পোশাক দেওয়ার মতো সামর্থ্য না রাখে, তখন সে তিনটি রোজা রাখবে। (সুরা মায়েদা: ৮৯)
আরও পড়ুন: ইসলামে মিথ্যা সাক্ষ্যের শাস্তি
তিন রোজার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে?
হ্যাঁ, শপথ ভঙ্গের কাফফারা হিসেবে মিসকিনদের খাওয়াতে ব্যর্থ হলে ধারাবাহিক তিনটি রোজা রাখতে হবে। হানাফি মাজহাবমতে, কোনো কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে পূর্বের রোজাগুলো কাফফারা হিসেবে গণ্য হবে না। সেক্ষেত্রে নতুন করে তিনটি ধারাবাহিক রোজা রাখতে হবে। (ফাতহুল কাদির: ৪/৩৬৬; তাবয়িনুল হাকায়েক: ৩/৪৩২)
একাধিক কসমের কাফফারা কী একটি?
না। একাধিক কসমের জন্য একটি কাফফারা যথেষ্ট নয়। প্রত্যেকটি কসম ভঙ্গের জন্য আলাদা কাফফারা আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে এক কসমের জন্য একবার তিনটি রোজা, আরেক কসমের জন্য আবার নতুন তিনটি রোজা রাখতে হবে, যদি খাদ্য বা কাপড় দান করার সামর্থ্য না থাকে। (ফতোয়া হিন্দিয়া: ২/৬৮; আল ইখতিয়ার: ৩/৩৮৪)
গুনাহের কাজের কসম কাটলে করণীয়
যেমন কেউ কসম করলো যে, আমি মা-বাবার সঙ্গে কথা বলবো না, ব্যভিচার করবো, অমুককে হত্যা করবো অথবা শরাব পান করবো— তাহলে তার শপথ ভেঙে ফেলতে হবে এবং কাফফারা দিতে হবে এবং তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৩/১৭)
কসম ভঙ্গ করলে তা শুধু কথার অপরাধ নয়, বরং ইসলামি দৃষ্টিতে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়বদ্ধতা, যার কাফফারা আদায় না করলে গুনাহ বহাল থাকে। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত কসমের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং ভঙ্গ করে ফেললে শরিয়তের নির্ধারিত কাফফারা যথাযথভাবে আদায় করা।

