সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫, ঢাকা

ওয়াজিব কোরবানি যথাসময়ে আদায় না করলে করণীয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ওয়াজিব কোরবানি যথাসময়ে আদায় না করলে করণীয়

কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন— ‘তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।’ (সুরা কাউসার: ২)

হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১২৩) এই হাদিসে কোরবানি না করার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


অতএব, সময়মতো কোরবানি আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে জানা থাকা জরুরি যে, কোনো ব্যক্তি যদি কোরবানির নির্ধারিত সময় অতিবাহিত করে ফেলেন, তখন করণীয় কী হবে? শরিয়ত কী নির্দেশ দেয়?

যথাসময়ে কোরবানি না করলে করণীয়

১. পশু কেনা না হলে: যদি কেউ সময়মতো কোরবানির পশু না কেনে এবং সময় শেষ হয়ে যায়, তবে তার ওপর একটি ছাগলের সমপরিমাণ মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৪; ফতোয়ায়ে কাজিখান: ৩/৩৪৫)
২. পশু কেনা হয়েছিল কিন্তু কোরবানি করা হয়নি: এ অবস্থায় পশুটি জীবিত অবস্থায় সদকা করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০২; আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩২০-৩২১)
৩. পশু জবাই করে ফেলেছে, কিন্তু সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে: তখন গোটা গোশত সদকা করতে হবে। যদি গোশতের বাজারমূল্য জীবিত পশুর মূল্যের চেয়ে কম হয়, তাহলে বাকি অংশের মূল্যও সদকা করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০২; আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩২০)

আরও পড়ুন: সাময়িক ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কি কোরবানি করা ওয়াজিব?


বিজ্ঞাপন


কোরবানির সময়সীমা

বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, কোরবানির সময়কাল হলো জিলহজের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এই তিন দিনের যেকোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন। তারপর তৃতীয় দিন। জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর কোরবানি করা শুদ্ধ নয়। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৬) 

আর ঈদুল আজহার নামাজের আগে কোরবানি করা বৈধ নয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আজ আমরা এই দিনে প্রথমে নামাজ আদায় করি, তারপর কোরবানি করি। যে ব্যক্তি এমনটি করে, সে আমাদের সুন্নাতের অনুসরণ করল।’ (সহিহ বুখারি: ৫৫৪৫)

আরও পড়ুন: কোরবানির গোশতে আত্মীয়দের হক কতটুকু, না দিলে গুনাহ হবে?

কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত

প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী, যে মুকিম (মুসাফির নয়) কোরবানির দিনগুলোতে সাড়ে সাত ভরি সোনা, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা ওই পরিমাণ রুপার সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্য আসবাবপত্রের মালিক হবে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৬৫)

যে ব্যক্তি কোরবানির সময়সীমার মধ্যে কোরবানি করতে পারেনি, তার জন্য কেবল ‘তাওবা’ করাই যথেষ্ট নয়—বরং শরিয়ত অনুযায়ী বিকল্প আদায় করতে হবে। কখন পশু সদকা করতে হবে, কখন গোশতের মূল্য সদকা করতে হবে—এসব বিষয়ের সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কোরবানির মহান ইবাদত যথাসময়ে সুন্নাহ মোতাবেক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর