সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোরবানিতে যেসব শিরক হতে পারে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জুন ২০২৫, ০৫:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরবানিতে যেসব শিরক হতে পারে

ইসলামে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই নিবেদিত হওয়া উচিত। তবে দুঃখজনকভাবে, অনেক সময় কিছু কুসংস্কার ও ভুল বিশ্বাস কোরবানির সাথে মিশে যায়—যা সরাসরি ‘শিরক’ বা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করার গুনাহে পরিণত হতে পারে। শিরক ইসলামের সবচেয়ে বড় পাপ, যা তাওবার মাধ্যমে ফিরে না এলে আল্লাহ ক্ষমা করেন না।

আসুন জেনে নিই, কোরবানির ক্ষেত্রে কী কী কাজ শিরক হিসেবে গণ্য হয়।


বিজ্ঞাপন


১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কোরবানি দেওয়া

কোরবানির পশু জবাই করার সময় যদি কেউ আল্লাহর নামের পরিবর্তে বলে, ‘এটি পীর সাহেবের নামে’, তাহলে তা হবে শিরক। 
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেসব জন্তুর ওপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, তার কিছুই তোমরা আহার করো না; তা অবশ্যই পাপ। নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদের তোমাদের সঙ্গে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়; যদি তোমরা তাদের অনুসরণ করো, তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে। (সুরা আনআম: ১১৮-১২১)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য জবাই করে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ (সহিহ মুসলিম: ৩৬৫৭)

২. কোরবানির গোশত কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া বা ওরসে বিতরণ

অনেকে বিশ্বাস করেন, কবর বা ওরসের ‘ফাতিহা’ বা ‘ওলি-আউলিয়ার রুহের জন্য’ কোরবানির গোশত দিলে বরকত হয়—এটি বিদআত ও শিরকের দরজায় নিয়ে যেতে পারে, যদি এর মাধ্যমে কোনো গায়েবি শক্তির সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য থাকে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘বলুন, আমার সালাত, কোরবানি, জীবন ও মৃত্যু—সবকিছুই একমাত্র আল্লাহর জন্য।’ (সুরা আনআম: ১৬২)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: কোরবানির গোশতে আত্মীয়দের হক কতটুকু, না দিলে গুনাহ হবে?

৩. কোরবানিকে কুসংস্কারের সাথে জড়িয়ে ফেলা

যেমন কারো বিশ্বাস যদি এমন হয় যে ‘এই পশুটি জবাই করলে রোগ ভালো হবে’, ‘অমুক পশু জবাই করলে ব্যবসা ভালো চলবে’—এগুলো তাওহিদের বিরুদ্ধে যায়, কারণ এতে আল্লাহ ছাড়া অন্যকোনো ‘কারণ শক্তি’ ধরে নেওয়া হয়। তাই এসব কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকা জরুরি। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি (কোনো বস্তুতে বরকতের আকাঙ্ক্ষায়) গলায় তাবিজ ঝুলায়, সে শিরক করেছে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৬১৫)

অর্থাৎ আল্লাহর শক্তিতে যোকোনো কিছুকে প্রভাব সৃষ্টিকারী হিসেবে বিশ্বাস করলে শিরক হবে।

৪. কোরবানি শুধুই সামাজিকতা বা লোক দেখানোর জন্য করা

যদি কেউ কোরবানি দেয় শুধু মানুষ দেখবে বলে, আত্মীয়দের কাছে বাহাদুরি দেখানোর জন্য—তবে এটি রিয়া (লোক দেখানো), যা ছোট শিরক। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমি তোমাদের জন্য ছোট শিরকের ভয় করি।’ সাহাবিরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ছোট শিরক কী?’ তিনি বললেন, ‘রিয়া।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৬৩০)

আরও পড়ুন: কোরবানির গোশত বণ্টনে যে ভুল করা যাবে না

কোরবানির সঠিক আকিদা কী হওয়া উচিত?

কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এতে অংশীদার হতে পারে না। কোরবানি ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যেমনটা হজরত ইবরাহিম (আ.) দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। ইবরাহিম (আ.) যখন আল্লাহর হুকুম পেয়ে শিশু ইসমাইলকে বললেন- ‘হে আমরা বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি- তোমাকে জবেহ করছি। তাই তুমি চিন্তা করে দেখ, তোমার অভিমত কী? সে (ইসমাইল) বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা করে ফেলুন। আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল পাবেন। অতঃপর যখন তারা উভয়ে আদেশ মান্য করল এবং পিতা পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিল। (সুরা সাফফাত: ১০২-১০৩)
এটাই হচ্ছে কোরবানির শিক্ষা। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানির আকিদা যতক্ষণ ঠিক করতে পারবেন না, ততক্ষণ আপনার কোরবানি পরিপূর্ণ হবে না।

শিরক ইসলামে চরম পাপ—যার কারণে সব আমল ধ্বংস হয়ে যায়। কোরবানি একটি মহান ইবাদত, তাই এতে সামান্য ভুল বিশ্বাস বা লোকাচার থেকেও নিজেকে রক্ষা করা জরুরি। আমাদের উচিত, প্রতিটি কোরবানি একমাত্র আল্লাহর নামে এবং সুন্নাহ মোতাবেক সম্পাদন করা। মনে রাখতে হবে—একটি ভুল আকিদা আমাদের গোটা ঈমান ধ্বংস করে দিতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর