শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আলহামদুলিল্লাহ— একটি শব্দে গাঁথা প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা ও প্রশান্তি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৫, ১১:২২ এএম

শেয়ার করুন:

আলহামদুলিল্লাহ— একটি শব্দে গাঁথা প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা ও প্রশান্তি

আমাদের জীবনে এমন অনেক শব্দ আছে, যেগুলো কেবল ভাষা নয়, বরং জীবনের দর্শন। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ তেমনই একটি শব্দ—যেখানে মিশে আছে গভীর কৃতজ্ঞতা, নির্ভরতা ও পরম প্রশান্তি। ইসলাম শুধু আনন্দে নয়, দুঃখ ও কষ্টেও এই পবিত্র বাক্য উচ্চারণে উৎসাহিত করে। কোরআন ও হাদিসে বারবার এই শব্দের গুরুত্ব, ফজিলত ও প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে।

সুখে-দুঃখে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার অনন্য ফজিলত ও গুরুত্ব নিচে তুলে ধরা হলো


বিজ্ঞাপন


আলহামদুলিল্লাহ— একটি পরিপূর্ণ প্রশংসাসূচক বাক্য

আলহামদুলিল্লাহ অর্থ—সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। পবিত্র কোরআনের সূচনা হয়েছে এই বাক্য দিয়ে (সুরা ফাতিহা)। এছাড়াও সুরা কাহাফ, সুরা সাবাসহ আরও অনেক সুরা এই বাক্য দিয়ে শুরু হয়েছে—যা এর মর্যাদা ও তাৎপর্য নির্দেশ করে।

সর্বোত্তম দোয়া ও প্রশংসা

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সর্বোত্তম ফজিলতপূর্ণ বাক্য এবং সর্বোত্তম দোয়া হলো আলহামদুলিল্লাহ।’ (তিরমিজি: ৩৩৮৩)


বিজ্ঞাপন


আল্লাহর প্রিয় বাক্য

আল্লাহ তাআলা নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন এবং বান্দাদেরকেও তা করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ সবচেয়ে বেশি নিজের প্রশংসা পছন্দ করেন।’ (বুখারি: ২/১৮১৭)

আরও পড়ুন: আপনাকে প্রাণবন্ত রাখবে যেসব জিকির

মিজান পূর্ণকারী জিকির

রাসুল (স.) বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ মিজান (পাপ-পুণ্যের পাল্লা) পূর্ণ করে দেয়। আর সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ করে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম: ২২৩)

সকাল-বিকালে আলহামদুলিল্লাহ বলার বিশেষ ফজিলত

‘যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল ১০০ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে, সে যেন আল্লাহর রাস্তায় ১০০টি অভিযানে অংশ নিয়েছে।’ (তিরমিজি: ৩৪৭১; নাসায়ি; সহিহুত তারগিব)

আলহামদুলিল্লাহ— সম্পদের চেয়েও উত্তম

“কারও কাছে যদি পুরো দুনিয়া থাকে আর সে আলহামদুলিল্লাহ বলে, তবে এই বাক্য দুনিয়ার চেয়েও উত্তম।” (ইবনে মাজাহ)

আল্লাহর প্রিয় চার বাক্য

সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবর — এই চারটি বাক্য আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। (সহিহ মুসলিম: ২১৩৭; ইবনে মাজাহ: ৩৮১১)

নেয়ামতের শুকরিয়ায় আলহামদুলিল্লাহ

আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, আমি তোমাদের নেয়ামত বৃদ্ধি করব।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)

আরও পড়ুন: চার জিকির ১০০ বার করে পড়ার বিস্ময়কর ফজিলত

দৈনন্দিন জীবনে আলহামদুলিল্লাহ বলার সময়গুলো

খাওয়া বা পান করার পরে। রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহ সন্তুষ্ট হন যখন বান্দা কিছু খেয়ে কিংবা পান করে আল্লাহর প্রশংসা করে।’ (মুসলিম: ২৭৩৪) এছাড়াও হাঁচি দেওয়ার পর, বাথরুম থেকে ফিরে, কাজ শেষ হওয়ার পর, ভালো খবর শুনলে, এমনকি দুঃখজনক সময়েও আলহামদুল্লাহ বলা বড়ই ফজিলতপূর্ণ আমল।

সন্তানহানিতে আলহামদুলিল্লাহ বলার প্রতিদান

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্তান হারিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ও ইন্না লিল্লাহ বলে, তার জন্য জান্নাতে ‘বায়তুল হামদ’ (প্রশংসার গৃহ) নির্মাণ করা হয়।’ (তিরমিজি: ১০২১)

অসুস্থ অবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ বলার প্রতিদান

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘যখন আমি মুমিনকে অসুস্থ করি আর সে আমার প্রশংসা করে, তখন আমি তাকে এমনভাবে সুস্থ করি যেন সে নতুন করে জন্ম নিয়েছে।’

জান্নাতেও থাকবে আলহামদুলিল্লাহর প্রচলন

আল্লাহ বলেন, ‘তারা বলবে, আলহামদুলিল্লাহ, যিনি আমাদের জান্নাতে পৌঁছে দিয়েছেন। আমরা কখনো তা অর্জন করতে পারতাম না, যদি আল্লাহ সাহায্য না করতেন।’ (সুরা আরাফ: ৪৩)

শেষ কথা, ‘আলহামদুলিল্লাহ’— এই পবিত্র বাক্য এমন, যা জীবনের প্রতিটি অবস্থাকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়। দুঃখে ধৈর্য, আনন্দে কৃতজ্ঞতা এবং প্রতিটি শ্বাসে প্রশান্তির বার্তা বহন করে এটি। আসুন, আমরা প্রতিটি পরিস্থিতিতে আলহামদুলিল্লাহ বলার অভ্যাস গড়ে তুলি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুখে-দুঃখে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার তাওফিক দিন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর