রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোরবানির প্রচলিত ৫ ভুল ধারণা ও সঠিক ব্যাখ্যা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৫, ০৯:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরবানির প্রচলিত ৫ ভুল ধারণা ও সঠিক ব্যাখ্যা

প্রতি বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুসলিম সমাজে কোরবানি পালন করা হয়। তবে কোরবানির সময় কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা আমাদের সমাজে বিদ্যমান, যা অনেকে ধর্মীয় বিধান হিসেবেই মেনে চলেন। এই ভুল ধারণাগুলোর কারণেই অনেক সময় ধর্মীয় বিধান যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। আসুন, কোরবানির প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো এবং সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা জেনে নিই।

ভুল ধারণা ১: কোরবানির মাংস তিন দিনের বেশি রাখা যাবে না

অনেকে মনে করেন, কোরবানির মাংস তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা জায়েজ নয়। বাস্তবে এটি একটি ভুল ধারণা। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, কোরবানির মাংস আপনি যতদিন ইচ্ছা সংরক্ষণ করতে পারেন, এতে কোনো বাধা নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) প্রথমে তিন দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলতে বলেছিলেন, কারণ সেই সময় অনেকেই অভাবগ্রস্ত ছিল। পরবর্তীতে এটি রহিত করা হয় এবং যেকোনো সময় সংরক্ষণ করার অনুমতি দেওয়া হয়।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে তিন দিনের বেশি মাংস রাখতে নিষেধ করেছিলাম; এখন তোমরা যত ইচ্ছা সংরক্ষণ করতে পারো।’ (সহিহ মুসলিম: ১৯৭১)

আরও পড়ুন: কোরবানির গোশত বণ্টনে সতর্কতা

ভুল ধারণা ২: পশু জবাইয়ের জন্য আলাদা ছুরি ব্যবহার করা জরুরি

অনেকে মনে করেন, প্রতিটি পশু জবাই করার জন্য আলাদা ছুরি ব্যবহার করতে হবে। এটি সঠিক নয়। আসলে ছুরি ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। মূল বিষয় হলো- পশুকে কষ্ট না দিয়ে দ্রুত ও সঠিকভাবে জবাই করা।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা যখন পশু জবাই করবে, ভালোভাবে (ছুরি) ধারালো করে নাও এবং পশুকে কষ্ট কম দাও।’ (সহিহ মুসলিম: ১৯৫৫)

ভুল ধারণা ৩: পশু জবাইয়ের সময় শুধু পুরুষদের থাকা উচিত

অনেকে মনে করেন, পশু জবাইয়ের সময় শুধু পুরুষরাই থাকতে পারেন। এটি ভুল ধারণা। ইসলামে নারীদের জবাই করা বা উপস্থিত থাকা নিষিদ্ধ নয়। নারীরাও কোরবানির পশু জবাই করতে পারে। জবাই করতে না পারলে কমপক্ষে জবাই করার স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত।

ফাতিমা (রা.) কোরবানি করেছেন। নবী (স.) তাঁকে কোরবানির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছেন। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হে ফাতিমা, ওঠো, তোমার কোরবানির পশুর কাছে যাও। কেননা তার রক্তের প্রথম ফোঁটা প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার কৃত সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর বলো, ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন।’ অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত। তাঁর কোনো শরিক নেই। তাতে আমি আদিষ্ট হয়েছি আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, এটি আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য নির্ধারিত, নাকি সব মুসলমানের জন্য? তিনি বলেন, ‘সব মুসলমানের জন্য’। (সুনানুল কুবরা: ১৯১৬২; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৫৯৩৫)

আরও পড়ুন: নামাজ না পড়লে কোরবানি হবে?

ভুল ধারণা ৪: কোরবানির পশু অবশ্যই মোটাতাজা হতে হবে

অনেকে মনে করেন, কোরবানির জন্য পশু অবশ্যই মোটা ও স্বাস্থ্যবান হতে হবে। ইসলামে পশুর স্বাস্থ্য ভাল থাকা উচিত, তবে মোটা হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। সুস্থ ও নির্দিষ্ট বয়স পূর্ণ করলেই কোরবানি শুদ্ধ হবে।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘চার ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি শুদ্ধ নয়: এক চোখে অন্ধ, অসুস্থ যেটা সুস্পষ্ট, খোঁড়া যেটা সুস্পষ্ট এবং অত্যন্ত দুর্বল যেটা কঙ্কালসার।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১৪৪)

ভুল ধারণা ৫: কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে ঢালা বাধ্যতামূলক

অনেকে বিশ্বাস করেন, কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে ঢালা বাধ্যতামূলক। তবে শরিয়তে এরকম কোনো বিধান নেই। বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে রক্ত নিষ্কাশন করাই যথেষ্ট।

আল্লাহ বলেন, ‘তাদের গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে।’ (সুরা হজ: ৩৭)

কোরবানি একটি মহান ইবাদত, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। তাই, প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো দূর করে সঠিক উপায়ে পালন করলে কোরবানির মূল উদ্দেশ্য পূর্ণতা পাবে। ধর্মীয় বিধান মেনে সচেতনতার সাথে কোরবানি পালন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর