নামাজের জন্য অজু করা শর্ত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে চাও; তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধোও, আর উভয়হাত কনুই পর্যন্ত ধোও, মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)
আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমাদের কারো যদি অজু ভেঙে যায়, তাহলে পুনরায় অজু করার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার নামাজ কবুল করেন না।’ (বুখারি: ৬৯৫৪; মুসলিম: ২২৫)
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন হলো হেলান দিয়ে ঘুমালে কি অজু ভেঙে যাবে? এর উত্তরে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, হেলান দিয়ে ঘুমালে সর্বাবস্থায় অজু ভেঙ্গে যায়-বিষয়টি এমন নয়; বরং কেউ যদি এভাবে হেলান দিয়ে ঘুমায় যে, তার কোমরের নিম্নাংশ জমিন থেকে পৃথক হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অজু ভেঙ্গে যাবে। আর যদি আসন গেড়ে বা জমিনের সাথে ভালোভাবে লেগে বসে বসে ঘুমায় তাহলে হেলান দিয়ে ঘুমালেও অজু নষ্ট হবে না। (তাবয়িনুল হাকায়েক ১/৫২; হিন্দিয়া: ১/১২; বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৩৫; আলবাহরুর রায়েক: ১/৩৮; তাতারখানিয়া: ১/২৫৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৯৮-৯৯; রদ্দুল মুহতার ১/১৪১)
এখানে অজু না ভাঙার মূল যে কারণটি দেখা যাচ্ছে, সেটি হলো—নিতম্ব মাটি থেকে পৃথক না হওয়া। অর্থাৎ কোমরের নিচের অংশ মাটি, ফ্লোর, চেয়ার ইত্যাদির সাথে ভালোভাবে এঁটে লেগে থাকার কারণে অজু ভাঙে না।
যদি ঘুমন্ত অবস্থায় কোমরের নীচের অংশ মাটি, ফ্লোর, চেয়ার ইত্যাদি থেকে পৃথক হয়, তাহলে হেলান দিয়ে ঘুমালে অজু নষ্ট হয়ে গেছে বলে ধরা হবে। এক্ষেত্রে নামাজের জন্য পুনরায় অজু করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৩৫; ফতোয়া খানিয়া: ১/৪১; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/১৯)
বিজ্ঞাপন
অজু ভঙ্গের কারণ
মৌলিকভাবে অজু ভঙ্গের কারণ ৭টি। সেগুলো হলো—
১. পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া: ১/৭)
২. শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত, পুঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া : ১/১০)
৩. মুখ ভরে বমি করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১২২১)
৪. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১৩৩০)
৫. চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া। (মুসনাদে আহমদ: ২৩১৫; সুনানে আবু দাউদ: ২০২)
৬. পাগল, মাতাল ও বেহুঁশ হলে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৪৯৩; বুখারি: ৬৪৬; তিরমিজি: ৭২)
৭. নামাজে উচ্চৈঃস্বরে হাসি দিলে। (সুনানে দারা কুতনি: ৬১২)
আরও পড়ুন: নবজাতকের মতো নিষ্পাপ হতে যেভাবে অজু করবেন
যেসব কারণে অজু ভাঙে না
১. যদি বমি হয়, কিন্তু তা মুখ ভরে না হয়। (আল আসার লি আবি ইউসুফ: ৩৪)
২. নিজের লজ্জা স্থান স্পর্শ করলে। (নাসায়ি: ১৬৫)
৩. নারীর শরীর স্পর্শ করলে। (নাসায়ি: ১৭০)
৪. ঘুমের ঘোরে নাক ডাকলে। (মুআত্তা মালেক: ৩৬)
৫. শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত বের হলে অজু ভাঙে না, যদি গড়িয়ে না পড়ে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৩৭)
৬. কোনো ক্ষত স্থান অথবা কান থেকে পোকা বের হলে। (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক: ১/৬২৯)
৭. কফমিশ্রিত বমি হলে। কারণ কফ বের হওয়াকে ইসলামের পরিভাষায় ‘হাদাস’ বলা হয় না। ‘হাদাস’ হলেই অজু ওয়াজিব হয়, অন্যথায় নয়। (মুসনাদে আহমদ: ৯৩০১)
৮. নিতম্বদ্বয় জমিতে ঠেসে লেগে থাকা অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লে। (আবু দাউদ: ১৭২)
৯. যদি শরীরের গোশত ঝরে পড়ে; কিন্তু রক্ত বের না হয়। যেমন—ইরকে মাদানি। এটা এক ধরনের ফোসকা বিশেষ, যা চামড়ার উপরিভাগে ওঠে এবং একসময় তা গোশতসহ শরীর থেকে ঝরে পড়ে; কিন্তু রক্ত বের হয় না। মূল কথা হলো গোশত পাক। তাই গোশত ঝরে পড়লে অজু ভাঙে না। যদি এর সঙ্গে রক্তও প্রবাহিত হয়, তাহলে প্রবাহিত রক্তের কারণে অজু ভেঙে যাবে। (দারাকুতনি: ৫৮১, ৫৯১, শরহে বেকায়া: ১/৩৭)
১০. নামাজরত ব্যক্তির ঘুমের দরুন অজু ভাঙে না। চাই তা দাঁড়ানো অবস্থায় হোক অথবা বসা, রুকু বা সেজদা অবস্থায় হোক। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ৬০৯)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তের সকল নির্দেশনা ও মাসয়ালা জানার, বুঝার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

