পবিত্রতা অর্জনের জন্যে ‘পূর্ণাঙ্গ অজু’ একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। অজুর বিধান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমাদের মুখ ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং মাথা মাসেহ করবে আর পা টাখনু (গ্রন্থি) পর্যন্ত ধৌত করবে...।’ (সুরা মায়েদা: ৬)
সুন্নত তরিকায় অজু করলে মহাপুরষ্কারের ঘোষণা এসেছে হাদিসে। হজরত ওমর (র.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—
বিজ্ঞাপন
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে অজু করে, অতঃপর বলে—‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’ তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে প্রবেশ করতে পারবে।” (মুসলিম: ১৭ – ২২৪, মিশকাত,পৃ.নং-৩৯)
পরিশুদ্ধ অজুর বরকতে বান্দার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এমনকি নবজাতকের মতো নিষ্পাপ হয়ে যায় বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আমর ইবনে আবাসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—
আমি একদিন প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অজুর ফায়দা কী? তিনি বলেন, ‘যখন তুমি অজু করবে ও দুই হাতের কবজি পরিষ্কার করে ধৌত করবে, তখন গুনাহসমূহ আঙুলের অগ্রভাগ ও নখ দিয়ে বের হয়, যখন নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করবে, মুখ ও হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে ও উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে, তখন তুমি যেন তোমার গুনাহগুলোকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিলে। এরপর যখন তুমি তোমার চেহারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে জমিনে রাখবে, তখন তুমি এমনভাবে গুনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছিল’ (নাসায়ি: ১৪৭)।
কেয়ামতের ময়দানে অজুকারী ব্যক্তিদের অঙ্গগুলো নুরের আলোয় ঝলমল করতে থাকবে। হাশরে উপস্থিত সকলে অজুকারী ব্যক্তির দিকে বারবার তাকাতে থাকবে। হজরত নোয়াঈম মুজমির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—
বিজ্ঞাপন
আমি আবু হুরায়রা (রা) এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তিনি অজু করলেন। তারপর বললেন, আমি রাসূল (সা) তে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই কেয়ামত দিবসে আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে, অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমন্ডল উজ্জ্বল থাকবে। অতত্রব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার ইচ্ছা রাখে, সে যেন তা করে নেয়।’ (বুখারি:১৩৬)
অজুকারীদের অনেকে দুনিয়াতে জান্নাতের সু-সংবাদ পেয়েছেন। যেমনটি পেয়েছেন হজরত বেলাল (রা.)। একবার রাসুল (স.) ফজরের নামাজের সময় হজরত বেলাল (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে বেলাল! তুমি ইসলামগ্রহণের পর থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে আমল করেছ, তা আমাকে বলো! কেননা জান্নাতে আমি তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। হজরত বেলাল (রা.) বললেন, দিনে বা রাতে যখনই আমি অজু করি, তখনই সামর্থ অনুযায়ী নামাজ (তাহিয়্যাতুল অজু) পড়ি। এছাড়া তেমন কিছুই করি না।’(বুখারি:১০৮৩)
পূর্ণাঙ্গ অজুর পদ্ধতি
অজুর নিয়ম সুন্দরভাবে বলা হয়েছে হজরত ওসমান (রা.) বর্ণিত হাদিসে। হাদিসটি হলো—ওসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি অজুর পানি চাইলেন। এরপর অজু করতে শুরু করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), তিনি ওসমান (রা.) তিনবার তার হাতের কজি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন- অতঃপর একইভাবে বাম পা ধুলেন, তারপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে আমার এ অজুর মতো অজু করতে দেখেছি এবং অজুশেষে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ অজুর মতো অজু করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দুরাকাআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পেছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের ‘আলিমগণ বলতেন যে, সালাতের জন্যে কারোর এ নিয়মের অজুই হল পরিপূর্ণ অজু (মুসলিম: ৪২৬-(৩/২২৬)
এ হাদিসটি যদি আমরা সূরা আল-মায়েদার ৬নং আয়াতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখি, তখন অজুতে কী কী করতে হবে, তা সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে। সে হিসেবে অজুতে নিম্নোক্ত কাজগুলো আবশ্যক।
১. মুখমণ্ডল ধৌত করা (মুখ ও নাক মুখমণ্ডলেরই অংশ)
২. কনুইসহ দু’হাত ধৌত করা
৩. মাথা মাসেহ করা (দু’কান মাথারই অংশ)
৪. দু’পা ধৌত করা।
৫. ধৌত অঙ্গের মধ্যে পরস্পর ক্রমবিন্যাস বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
৬. অজু করার সময় এক অঙ্গ ধৌত করার পর বিলম্ব না করে অন্য অঙ্গ ধৌত করা
৭. নিয়ত করে (অন্তরে সুদৃঢ়ভাবে নির্ধারণ করে) সালাতে দাঁড়ানো।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অজুসহ যাবতীয় সহজ কাজগুলো সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করে আল্লাহর বরকত ও কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএ/