হজ ও ওমরার অন্যতম অনুষঙ্গ তালবিয়া। তালবিয়াকে বলা হয় হাজিদের শ্লোগান। মূলত বাক্যটি বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট প্রকাশ। হজের মৌসুমে তালবিয়া ধ্বনিতে মুখরিত থাকে আরাফাতের ময়দান, মিনা-মুজদালিফা। প্রথমবার তালবিয়া পড়া হজ ওমরার শর্ত। যা ইহরামের সময় পড়তে হয়। পরে যতবার পড়েন, তা সুন্নত।
তালবিয়া (আরবি)
لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ - لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ - لاَ شَرِيْكَ لَكَ
তালবিয়ার বাংলা উচ্চারণ
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’
তালবিয়ার অর্থ
আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আাপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নেয়ামত এবং সাম্রাজ্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই।’ (সূত্র: বুখারি: ১৫৪৯; মুসলিম: ২৮১১)
তালবিয়ার নিগূঢ় অর্থ
তালবিয়ায় ‘লাববাইক’ শব্দটি চারবার আছে। এটি একাধারে ভক্তি ও ভালবাসা এবং আনুগত্য ও সমর্পণের ভাব ধারণ করে। ‘লা-শারিকা লাক’ শব্দটি আছে দুইবার। এ হচ্ছে সকল প্রকার শিরক ও শরিককে বর্জনের ঘোষণা। আর তৃতীয় বাক্যটি অর্থাৎ ‘ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক’ হচ্ছে তাওহিদের এলান, তাওহিদের দলিল এবং আল্লাহর হামদ ও শোকর।
আরও পড়ুন: হজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী কী
ওমরা পালনকারীরা কতক্ষণ তালবিয়া পড়বে
ওমরাহ পালনকারী ইহরামের শুরু থেকে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করবে। তাওয়াফের আগ মুহূর্তে তালবিয়া বন্ধ করে দেবে। তাওয়াফের আগে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার পর আর তালবিয়া পাঠ করবেন না। তাওয়াফের সময় তালবিয়া পাঠ করবেন না। সাঈ করার সময়ও তালবিয়া পাঠ করবেন না। তাওয়াফ ও সাঈর সময় নবীজির (স.) সুন্নত অনুসরণ করে অন্যান্য দোয়া পড়বেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ওমরার সময় হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিতেন। (সুনানে তিরমিজি)
হজ পালনকারীরা কতক্ষণ তালবিয়া পড়বে
হজ পালনকারী ইহরাম বাঁধা থেকে শুরু করে ১০ জিলহজ কোরবানির দিন ‘জামরাতুল আকাবা’য় কঙ্কর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করবে। ফজল ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতেন।’ (বুখারি: ১৫৪৪) হাজিদের অবশ্যই জামরাতুল আকাবা বা বড় জামরার কাছে পৌঁছে প্রথম পাথর নিক্ষেপের পূর্বমুহূর্তে তালবিয়া পড়া বন্ধ করতে হবে। এখান থেকে হজের শেষ পর্যন্ত আর তালবিয়া পড়া জায়েজ নেই। (মানাসিক পৃ: ২২৫)
আরও পড়ুন: পবিত্র কাবা তাওয়াফ করার নিয়ম
পুরুষ ও নারীদের তালবিয়া পাঠের নিয়ম
পুরুষ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন এবং নারীরা পড়বেন নিম্নস্বরে। (গুনইয়াতুন নাসিক পৃষ্ঠা-৭৪, আদ্দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা- ৪৮৪)। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র.) বলেন, ‘নারীরা উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন না’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ১৪৮৮২)
তালবিয়ার পুরো বাক্য পড়বেন
তালবিয়ার বাক্য পুরোটা পাঠ করতে হবে। কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়া মাকরুহ। (আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড-০২, পৃষ্ঠা-৪৮৪, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড-০১, পৃষ্ঠা-১২৩; মানাসিক, পৃষ্ঠা-১০২) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, তালবিয়া শেষ পর্যন্ত পাঠ করো। কেননা এটি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর তালবিয়া। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ১৩৬৩৮)
আরও পড়ুন: হজপালনে ধাপে ধাপে যেসব কাজ করতে হয়
তালবিয়া পড়ার ফজিলত
সাহল ইবনে সাদ আসসায়েদি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি যখন তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডানে ও বামে পৃথিবীর শেষপ্রান্ত পর্যন্ত যা কিছু আছে যেমন, গাছপালা, মাটি, পাথর সকল কিছু তালবিয়া পাঠ করতে থাকে। (জামে তিরমিজি: ৮২৮; ইবনে মাজাহ: ২৯২১)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, কোনো মুমিন যখন ইহরামের হালতে দিন কাটাবে তখন সূর্য তার সকল গুনাহ নিয়ে অস্ত যাবে। আর কোনো মুসলিম যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজের তালবিয়া পাঠ করবে তখন তার ডানে-বামে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সবকিছু তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। (জমে তিরমিজি: ৮১০; তারগিব: ১৭০৩
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে কেউ তালবিয়া পাঠ করবে তাকে সুসংবাদ দেওয়া হবে এবং যে কেউ তাকবির বলবে তাকে সুসংবাদ দেওয়া হবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- ইয়া রাসুলাল্লাহ! জান্নাতের সুসংবাদ? উত্তরে নবীজি বললেন, হ্যাঁ। (আলমুজামুল আওসাত, তাবারানি: ৭৭৭৫; তারগিব: ১৭০৭)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘অমুকের ওপর আল্লাহর অভিশাপ! তারা ইচ্ছা করে হজের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিনের শোভা মিটিয়ে দিল। আর নিশ্চয় হজের শোভা হল তালবিয়া।’ (মুসনাদ আহমদ: ১/২১৭)

