রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হাজিদের সম্মান ও মর্যাদা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ মে ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

হাজিদের সম্মান ও মর্যাদা

হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এতে রয়েছে মাকামে ইবরাহিমের মতো প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে লোক এর ভিতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য, যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যারা অস্বীকার করবে (তাদের স্মরণ রাখা উচিত) আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

ইসলামে হাজিদের সম্মান ও মর্যাদা অনেক বেশি। তারা মহান আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অসংখ্যা পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে হাজিদের জন্য। 


বিজ্ঞাপন


হাজিরা আল্লাহর মেহমান

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং হজ ও ওমরা পালনকারীগণ আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ তাদের ডেকেছেন, তারা সে ডাকে সাড়া দিয়েছে। অতএব, তারা আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাই তাদের দিয়ে দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৯৩) 

হাজিদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘এক ওমরার পর আরেক ওমরা—উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো কবুল হজের প্রতিদান।’ (সহিহ বুখারি: ১৭৭৩)


বিজ্ঞাপন


হজ করার পর মানুষ নিষ্পাপ হয়ে যায়

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত রইল, সে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।’ (সহিহ বুখারি: ১৫২১)

হজের সওয়াব অসীম

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করাকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, তবে কি আমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করব না? আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম সংগ্রাম হচ্ছে কবুল হজ।’ (বুখারি: ২৭৮৪) 
হাদিস বিশারদরা বলেন, এর দ্বারা হজের বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ পুণ্য অর্জন করা উদ্দেশ্য।

হজ ও ওমরা দারিদ্র্য দূরীভূত করে

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরা আদায় করো। কেননা এ দুটি ধারাবাহিকভাবে আদায় করলে তা দারিদ্র্য ও গুনাহ দূরীভূত করে, যেমন হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৮৭) হাজীরা দেশে ফিরছেন

হাজিদের দোয়া কবুল করা হয়

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হজ ও ওমরার যাত্রীরা আল্লাহর প্রতিনিধিদল। তারা তাঁর কাছে দোয়া করলে তিনি তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাঁর কাছে মাফ চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৯২)

হাজিদের জন্য আল্লাহর নিরাপত্তা

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায় (নিরাপত্তায়) থাকে: এক. যে ব্যক্তি কোনো মসজিদের উদ্দেশে বের হয়, দুই. যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে বের হয়, তিন. যে ব্যক্তি হজ করতে বের হয়।’ (মুসনাদে হুমাইদি: ১০৯০)

হজ সর্বোত্তম আমল

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সর্বোত্তম আমল হলো, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা, অতঃপর আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা, এরপর কবুল হজ। এগুলো পৃথিবীর সমস্ত আমলের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী।’ (সহিহুল জামে: ১০৯২)

হাজিরা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী

আল্লাহ তাআলা হজ আদায়কারীকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হাজির উট পা উঠালে বা নামালে বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য পুণ্য লেখেন বা তার পাপ মোচন করেন অথবা মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।’ (শুআবুল ঈমান: ৪১১৬)

হাজিদের নিয়ে আল্লাহ গর্ব করেন

হজরত জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং হাজিদের ব্যাপারে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করে বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকাও, তারা আমার কাছে আসছে এলোমেলো চুলে, ধুলাবালি গায়ে, আহাজারি করতে করতে দূর-দূরান্ত থেকে উপস্থিত হয়েছে। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি তাদের মাফ করে দিলাম। তখন ফেরেশতারা বলে, হে প্রতিপালক, অমুক বান্দাকে তো বড় গুনাহগার বলে অভিহিত করা হয় এবং অমুক পুরুষ ও নারীকেও। তিনি (স.) বলেন, আল্লাহ তখন বলেন, আমি তাদেরও ক্ষমা করে দিলাম। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আরাফার দিনের চেয়ে এত বেশি জাহান্নাম হতে মুক্তি দেওয়ার মতো আর কোনো দিন নেই।’ (মেশকাতুল মাসাবিহ: ২৬০১) 

আল্লাহ তাআলা হজযাত্রীদের সবার হজ কবুল করুন। হজ-পরবর্তী জীবন পবিত্র, সুন্দর ও বরকতময় করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর