মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বদলি হজ কাকে দিয়ে করানো উত্তম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ মে ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

বদলি হজ কাকে দিয়ে করানো উত্তম

হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন ও ফরজ ইবাদত। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ। সামর্থ্য বলতে বোঝায়- হজের মৌসুমে হজে যাওয়া-আসার খরচ থাকতে হবে এবং একইসঙ্গে সফরের দিনগুলোতে নিজের ও পরিবারের লোকদের স্বাভাবিক খরচের ব্যবস্থা থাকতে হবে। নারীদের ক্ষেত্রে সঙ্গে মাহরাম থাকা জরুরি।

কারো ওপর হজ ফরজ হলে সাধারণত তাকেই হজ করতে হয়। তবে, শরিয়ত অনুমোদিত অক্ষমতার কারণে অন্যকে দিয়ে বদলি হজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে। ইসলামি শরিয়তে সেটাই বদলি হজ। ‘শারীরিক সক্ষমতা থাকলে অন্যকে দিয়ে বদলি হজ করানো জায়েজ নেই এবং এতে তার ফরজ আদায় হবে না।’ (হিদায়া: ১/২৯৬; আলবাহরুল আমিক: ৪/২২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে: ২/৪৫৪)


বিজ্ঞাপন


এই ইবাদতটি যাকে তাকে দিয়ে করানো অনুত্তম, ক্ষেত্রবিশেষে নিষেধ। নিচে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।

যাদের মাধ্যমে বদলি হজ করাবেন

১. প্রথমত এমন ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ করানো উত্তম যিনি নিজের ফরজ হজ আদায় করেছেন এবং হজের আহকামও ভালো জানেন। আর যে ব্যক্তি হজে যায়নি এবং তার উপর হজ ফরজও নয় তাকে বদলি হজের জন্য পাঠানো মাকরুহ তানজিহি তথা অনুত্তম। তবে এমন ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ করালেও হজ আদায় হয়ে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৮/১৮৯; বাদায়েউস সানায়ে: ২/৪৫৭; ফাতহুল কাদির: ৩/৭২; রদ্দুল মুহতার: ২/৬০৩; মানাসিক, মোল্লা আলি ক্বারি: ৪৫২; গুনইয়াতুন নাসিক: ৩৩৭)

২. বদলি হজের জন্য নিজ দেশ থেকেই কাউকে পাঠাতে হবে। নিজ দেশ থেকে কাউকে পাঠানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশে অবস্থানরত কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো হলে প্রেরণকারীর ফরজ হজ আদায় হবে না। এক্ষেত্রে নিজ দেশ থেকে পুনরায় বদলি হজ করাতে হবে। (মানাসিক: ৪৪০; গুনইয়াতুন নাসিক: ৩২৯; রদ্দুল মুহতার: ২/৬০৫)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: হজের ওসিয়ত না করে মারা গেলে জীবিতদের করণীয় কী

তবে, মাইয়েত যদি বদলি হজের অসিয়ত করে না যায় আর ওয়ারিশরা স্বেচ্ছায় তার বদলি হজ করাতে চায় সেক্ষেত্রে মৃতের এলাকা থেকে বদলি হজ করানো জরুরি নয়। তারা অন্য দেশ যেমন- সৌদি আরব বা তার কাছাকাছি কোনো দেশ থেকেও মাইয়েতের পক্ষ থেকে বদলি হজ করাতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও তার দেশ থেকে কাউকে পাঠিয়ে হজ করানো উত্তম। (আলবাহরুল আমিক: ৪/২৩৪৮; মাআরিফুস সুনান: ৬/৩১৬; মানাসিক: ৪৩৬; আলমুগনি, ইবনে কুদামা: ৫/৪১)

৩. মৃত ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট কাউকে দিয়ে তার বদলি হজ করানোর ওসিয়ত করে, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে তার বদলি হজ করানো জায়েজ নয়। আর যদি ওসিয়তের সময় কারো নাম বললেও অন্য কাউকে দিয়ে করাতে নিষেধ না করে থাকে অর্থাৎ শুধু এতটুকু বলেছে যে, অমুককে দিয়ে আমার বদলি হজ করাবে, এক্ষেত্রে উত্তম হলো ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দিয়েই হজ করানো। তবে ওই ব্যক্তি যদি রাজি না হয় বা কোনো কারণে সক্ষম না হয় তাহলে অন্য কাউকে দিয়েও করাতে পারবে। এতে মৃতের ফরজ হজ আদায় হয়ে যাবে। (আলবাহরুল আমিক: ৪/২৩৮৭; মানাসিক: ৪৫১; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৬০০; গুনইয়াতুন নাসিক: ৩২৮) অবশ্য এক্ষেত্রে ওয়ারিশরা পরামর্শক্রমে যেকোনো ব্যক্তিকে বদলি হজের জন্য পাঠালেও মৃতের ফরজ হজ আদায় হয়ে যাবে। (মানাসিক: ৫৫১; গুনইয়াতুন নাসিক: ৩২৮)

৪. নারীকে দিয়েও বদলি হজ করানো জায়েজ

কোনো মহিলাকে দিয়েও বদলি হজ করানো জায়েজ যদি তার সাথে স্বামী বা মাহরাম পুরুষ থাকে। আর বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার, যার মাধ্যমে বদলি হজ করানো হচ্ছে তিনি হজের মাসায়েল সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত কি না। (আলবাহরুল আমিক: ৪/২২৬৮; মানাসিক: ৪৫৩; হিন্দিয়া: ১/২৫৭; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৬০৩; আলমুগনি, ইবনে কুদামা: ৫/২৭)

আরও পড়ুন: নারীরা যাদের সঙ্গে হজে যেতে পারবেন

৫. নারীর পক্ষ থেকে বদলি হজ নারীকে দিয়েই করাতে হবে এমন আবশ্যকতা নেই। বরং নারীর পক্ষ থেকে পুরুষও বদলি হজ করতে পারবে এবং পুরুষের পক্ষ থেকে নারীও পারবে। দাসও বদলি হজ করতে পারবে। কিন্তু নাবালেগ (অপ্রাপ্তবয়স্ক) বদলি হজ করতে পারবে না। (আপকে মাসায়েল: ৪/৭৫,৭৭; কিতাবুল ফিকহ: ১/১১৬৬)

যার হজ রহিত হয়ে যায়, তাই বদলি হজের প্রয়োজন নেই

কারো উপর হজ ফরজ হয়েছে এবং সে হজের উদ্দেশ্যে মক্কা শরিফে পৌঁছেছে, কিন্তু হজের মূল সময়ের আগেই তার মৃত্যু এসে গেছে-এই ব্যক্তির জন্য মৃত্যুর সময় তার পক্ষ থেকে বদলি হজের অসিয়ত করার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে তার উপর থেকে হজ রহিত হয়ে যায়। কেননা, সে হজ আদায়ের সুযোগ পায়নি। (ফাতহুল কাদির: ২/৩২৭; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৬০৪; গুনইয়াতুন নাসিক: ৩৩)

যার বদলি হজ নফল হজে পরিণত হয়

কোনো বক্তির ওপর হজ ফরজ হয়েছে, সে হজের সময়ও পেয়েছে, কিন্তু কারণবশত হজ করতে পারেনি; এরপর এমন ওজরের সম্মুখীন হলো যা শরিয়ত অনুমোদিত, অর্থাৎ এখন তার পক্ষে সফর করা সম্ভব নয়, এমন অবস্থায় তার জন্য নিজের পক্ষ থেকে কাউকে পাঠিয়ে বদলি হজ করানো অথবা মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তার নামে বদলি হজ করানোর অসিয়ত করা ফরজ। কিন্তু যে সমস্যার কারণে বদলি হজ করানো হলো, ওই ওজর বা সমস্যা বদলি হজ করানোর পর দূর হয়ে গেলে আবার স্বয়ং তার হজ আদায় করা ফরজ হয়ে যাবে। আর আগের বদলি হজটি তার নফল হয়ে যাবে। (আহকামে হজ: ১১৮)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর