মাছ শিকারে বড়শির ব্যবহার একটি পরিচিত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে মাছ শিকার জায়েজ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তার খাদ্য হালাল করা হয়েছে, যাতে তা তোমাদের ও কাফেলার জন্য ভোগের উপকরণ হয়।’ (সুরা মায়েদা: ৯৬)
আয়াতের বাচনভঙ্গি থেকে বোঝা যায়, মানুষের কল্যাণে মাছ শিকারের প্রচলিত পদ্ধতি যেমন—আঁকড়া, কোঁচ, বড়শি, জাল ইত্যাদির মাধ্যমে মাছ ধরা হালাল করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, খাওয়া ও বিক্রি করে উপকৃত হওয়ার জন্য মাছ শিকারে কোনো সমস্যা নেই। মূলত মানুষের উপকারের জন্যই তা সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে, জীবিত কোনো প্রাণীকে টোপ হিসেবে বড়শিতে গেঁথে দেওয়া ইসলামসম্মত নয়। কারণ প্রাণীকে কষ্ট দেওয়ার অনুমতি ইসলাম দেয় না। এক্ষেত্রে বড়শিতে মাছ বা কেঁচো গাঁথার আগে তা মেরে নিলে তা দ্বারা মাছ ধরা জায়েজ হবে। কিন্তু জ্যান্ত মাছ বা কেঁচো বড়শিতে গেঁথে মাছ শিকার করা জায়েজ নয়। (বুখারি: ৫৫১৩; মুসলিম: ৫০১৭; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম: ৪/৫৪০; আলমুগনি, ইবনে কুদামা: ১৩/২৮৯; আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৪৭৪)

আবার, প্রয়োজন ছাড়া কেবল বিনোদনের উদ্দেশে বড়শি দিয়ে মাছ ধরাও বৈধ নয়। কারণ এতে একদিকে নিষ্প্রয়োজনে আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দেওয়া হয়; অন্যদিকে অপচয় হয়। দুটোই নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১)
বিজ্ঞাপন
নির্দিষ্ট মূল্যে টিকিট কেটে মাছ শিকারও নাজায়েজ। এই পদ্ধতিতে কেউ বেশি মাছ শিকার পায়, আবার কেউ কম পায়। ক্ষেত্রবিশেষে একেবারই মাছ না পাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। তাই এটিকে এক ধরনের ধোঁকা ও প্রতারণা হিসেবেই গণ্য করেন ইসলামি আইনবিদরা। মূল লেনদেনের সঙ্গে অনিশ্চয়তা জড়িত হওয়ায় এমন লেনদেন নাজায়েজ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, পাথরের টুকরা নিক্ষেপের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় ও ধোঁকাপূর্ণ ক্রয়-বিক্রয় রাসুল (স.) বারণ করেছেন। (মুসলিম: ১৫১৩)
অতএব, বড়শি, জাল ইত্যাদি দিয়ে মাছ ধরে তা খাওয়া ও বিক্রি করা ইসলামে অনুমোদিত। কিন্তু কোনোভাবেই মাছ শিকারকে বিনোদন, অপব্যয়, লটারি বা জুয়ার মাধ্যম বানানো যাবে না।

মনে রাখা জরুরি, মাছ শিকারে সীমালঙ্ঘনের কারণে বনি ইসরাইলের ওপর গজব নেমে এসেছিল। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা শনিবার সম্পর্কে সীমা লঙ্ঘন করেছিল, তোমরা তাদের নিশ্চিতভাবে জানো। আমি (আল্লাহ) তাদের (আজাবের আদেশ দিয়ে) বলেছিলাম, তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও। আমি তা তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ এবং মুত্তাকিদের জন্য উপদেশস্বরূপ করেছি।’ (সুরা বাকারা: ৬৫-৬৬)
পরিশেষে বলা যায়, জীবনের সব ক্ষেত্রেই ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে চলাই মুমিনের লক্ষ্য হওয়া চাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

