পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে নির্দিষ্ট অঙ্গসমূহে পানি ব্যবহার করাকে অজু বলে। অজু নামাজ আদায়ের অপরিহার্য শর্ত; যদি নফল নামাজও হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে চাও; তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধোও, আর উভয়হাত কনুই পর্যন্ত ধোও, মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)
আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমাদের কারো যদি অজু ভেঙে যায়, তাহলে পুনরায় অজু করার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার নামাজ কবুল করেন না।’ (বুখারি: ৬৯৫৪; মুসলিম: ২২৫)
বিজ্ঞাপন
শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত, পুঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া অজু ভঙ্গের অন্যতম কারণ। (হেদায়া: ১/১০) হজরত আলী (রা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন তার পেটে (বায়ুজনিত) পীড়া অথবা নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়া বা বমি লক্ষ্য করে, সে যেন নাকে হাত দিয়ে বের হয়ে গিয়ে অজু করে নেয়। যদি কথা বলে থাকে তাহলে নতুন করে নামাজ পড়বে, আর কথা না বলে থাকলে আগের আদায়কৃত অংশকে গণ্য করবে। (মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৩৬০৭)
আরও পড়ুন: অজু বারবার ভেঙে যায়, করণীয় কী?
নাফে (রহ) বর্ণিত, হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) এর যখন নাক দিয়ে রক্ত বের হতো, তখন তিনি নামাজ থেকে ফিরে গিয়ে অজু করতেন, তারপর ফিরে এসে বাকি নামাজ আদায় করতেন, এর মাঝে তিনি কথা বলতেন না। (মুয়াত্তা মালেক: ১১০, খন্ড ১, পৃষ্ঠা-১৩)
অতএব, নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে পড়লে অজু ভেঙে যাবে। তবে, নাক থেকে বের হওয়া রক্ত প্রবহমান না হলে বা জমাট রক্ত হলে অজু ভাঙবে না। ফেকাহশাস্ত্রবিদরা বলেন, শরীর থেকে প্রবহমান রক্ত বেরিয়ে গড়িয়ে পড়লে অজু ভেঙে যায়। নাক থেকে বের হওয়া জমাট রক্তের কারণে অজু ভাঙবে না। (আজজাখিরাতুল বুরহানিয়া: ১/২৯৩; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/১৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ-১৩৬; হিন্দিয়া: ১/১১; আলবাহরুর রায়েক: ১/৩৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ফরজ গোসলের পর নামাজের জন্য অজু করতে হবে কি?
হজরত হাসান বসরি (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি এমন রক্তের কারণে অজু করা জরুরি মনে করতেন, যা স্বীয় স্থান থেকে বেরিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১/১৩৭, হাদিস: ১৪৫৯)
আবার, থুতুর সঙ্গে যদি কারো রক্ত বের হয়, সেটি পরিমাণে খুব কম হলেও অজু ভাঙবে না। হজরত ইবরাহিম নাখয়ি (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি থুথু ফেললো, তখন সে তার থুথুতে রক্ত দেখলো, তাহলে যদি লাল বর্ণ শুভ্রতার উপর প্রাধান্য দেখে, তাহলে অজু করবে। আর যদি শুভ্রতা লাল বর্ণের উপর প্রাধান্য দেখতে পায়, তাহলে অজু করতে হবে না। (মুসন্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১৩৩২)